মর্মে যবে মত্ত আশা
সর্পসম ফোঁসে
অদৃষ্টের বন্ধনেতে
দাপিয়া বৃথা রোষে
তখনো ভালোমানুষ সেজে
বাঁধানো হুঁকা যতনে মেজে
মলিন তাস সজোরে ভেঁজে
খেলিতে হবে কষে!
অন্নপায়ী বঙ্গবাসী
স্তন্যপায়ী জীব
জন-দশেকে জটলা করি
তক্তপোষে ব’সে।
ভদ্র মোরা, শান্ত বড়ো,
পোষ-মানা এ প্রাণ
বোতাম-আঁটা জামার নীচে
শান্তিতে শয়ান।
দেখা হলেই মিষ্ট অতি
মুখের ভাব শিষ্ট অতি,
অসল দেহ ক্লিষ্টগতি–
গৃহের প্রতি টান।
তৈল-ঢালা স্নিগ্ধ তনু
নিদ্রারসে ভরা,
মাথায় ছোটো বহরে বড়ো
বাঙালি সন্তান।
ইহার চেয়ে হতেম যদি
আরব বেদুয়িন!
চরণতলে বিশাল মরু
দিগন্তে বিলীন।
ছুটেছে ঘোড়া, উড়েছে বালি,
জীবনস্রোত আকাশে ঢালি
হৃদয়তলে বহ্নি জ্বালি
চলেছি নিশিদিন।
বর্শা হাতে, ভর্সা প্রাণে,
সদাই নিরুদ্দেশ
মরুর ঝড় যেমন বহে
সকল বাধাহীন।
=========================
খুবই ন্যাকা ন্যাকা স্টার্টিং হয়ে গেল হয় তো ট্র্যাভেলগ শুরু করার পক্ষে – কিন্তু জার্নিটা শুরু করার আগে এই কবিতাটা যে কতবার মনে মনে আবৃত্তি করেছি, তার ইয়ত্তা নেই। লেখা শুরু করতে গিয়েও তাই প্রথমেই মনে হল, রবীন্দ্রনাথের এইটা ক’লাইন লিখেই শুরু করি।
বহুদিনের লালিত আশা ছিল, সে তো এখন সবাইই জানে। সেই ২০১২তে যখন চৌহানের সঙ্গে সপরিবারে লে-দর্শন করে এসেছি, তখন থেকে মনে আশা, একদিন আসব আবার, মোটরসাইকেল চালিয়ে। যতরকমভাবে যত জায়গা থেকে ট্রাভেলগ পাওয়া যায়, সব পড়ে ফেলেছিলাম। যা যা জানা দরকার সমস্ত জেনেছিলাম। ২০১৪তে একটা সুযোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু অফিস এবং ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে তা আর হয়ে ওঠে নি। আমিও বিশেষ জোর দিই নি, কারণ ২০১৩র ডিসেম্বরে, শুধুমাত্র লাদাখ যাবার জন্যেই কিনেছিলাম নতুন বাইক – পালসার 200NS। সেটা তখনও ফ্রি সার্ভিসিংয়ের পিরিয়ডের মধ্যে ছিল, তাই গতবছরে আর রিস্ক নিই নি।
এ বছরে যখন ফেরুয়ারি মাস যাই যাই করছে, তখন থেকেই মনে আবার চাগাড় দিয়ে উঠল সেই ইচ্ছে, বেরোতেই হবে। অফিসে প্রচণ্ড খারাপ সময় যাচ্ছিল, ছুটি পাবো কিনা, পেলেও আদৌ যাওয়া হবে কিনা – এ নিয়ে দোলাচল ছিল প্রায় শেষদিন পর্যন্ত।
বেরোতে গেলে কারুর সঙ্গে টিম আপ করতে হয়, তারও ছুটিছাটার ব্যাপার থাকে, কিছু জিনিসপত্র কেনাকাটার ব্যাপার থাকে, খুব দোলাচলে ভুগছিলাম শেষদিকটা। অসম্ভব রেস্টলেস লাগছিল – এবারেও কি হাত ফসকে বেরিয়ে যাবে সুযোগটা?
এপ্রিল মাসের বাইশ তারিখে আমার রিলিজ হল প্রজেক্ট থেকে, সাথে সাথে একগাদা লোক ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার প্রোফাইলের ওপর, আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে যেমন হয় আর কি, কেউ আমায় পাঠাতে চায় লন্ডনে, কেউ বেলজিয়ামে, কেউ জোহানেসবার্গে, তো কেউ ভুবনেশ্বরে। থিতু হয়ে ঝেড়েবেছে একটা অ্যাকাউন্টে মনোনিবেশ করতে করতেই হয়ে গেল মে মাসের পনেরো তারিখ। আমার বেরোবার ছিল ছয়ই জুন সকালে। তা হলে কি হবে না? নতুন প্রজেক্টে জয়েন করেই সাথে সাথে দু সপ্তাহের ছুটি নিতে চাইলে লোকে জাস্ট ক্যালাবে। তাও খুব ঠাণ্ডা মাথায় অ্যাকাউন্টের লোকজনের সাথে নেগোশিয়েশন চালাতে থাকলাম, সাথে সাথে পার্টনারও খুঁজতে থাকলাম।
অ্যাকাউন্ট ম্যানেজারটি প্রায় আমারই বয়েসী, আমার বেড়াবার প্ল্যানের কথা শুনে নিজেই খুব দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ল – আরে ইয়ার, এ তো দারুণ প্ল্যান বানিয়েছো, আমি ইন্ডিয়াতে থাকলে আমিও তোমার সাথে বেরিয়ে পড়তাম।
বললাম – বস, এটা আমার ড্রিম ট্রিপ, তুমি যদি না করো – আমি কিছু মনে করব না, কিন্তু ঐ আর কি, স্বপ্নটা রয়ে যাবে – আজ নেহি তো ফির কভি। দ্যাখো কি করা যায়।
ম্যানেজার বলল, ঠিক আছে, তুমি ছুটি অ্যাপ্লাই করো, আমি কথা বলে রাখছি – তবে প্ল্যানটা একটু এদিক ওদিক করা যায় কি? একটু তাড়াতাড়ি ফিরে আসা যায়?
বললাম, ট্রিপ পুরো দু সপ্তাহেরই লাগবে, পুরোটাই মোটরসাইকেলে যাওয়া আসা কিনা, তবে তুমি চাইলে ছয়ই জুনের বদলে আমি এক সপ্তাহ আগে বেরোতে পারি – তিরিশে মে, আর ফিরে আসতে পারি এক সপ্তাহ আগে, বারোই জুন। তারপরে আমি তোমার অ্যাকাউন্টের জন্য বলিপ্রদত্ত।
তাই সই। ইতিমধ্যে আমি তর সইতে না পেরে একটু একটু করে কিনে নিয়েছি এলবো গার্ড, নী গার্ড, চেন লুব্রিক্যান্টের ক্যান, বালাক্লাভা। করোল বাগে গিয়ে গাড়িতে ফিট করিয়ে নিয়েছি মোবাইল চার্জার আর মোবাইল মাউন্ট – জিপিএস দেখার জন্য।
বিসিএম ট্যুরিং সাইটটা ফলো করি। সেখানেই লে লাদাখ ২০১৫ প্ল্যানার বলে একটা টই চলছিল, লোকে পার্টনার খোঁজাখুঁজি করছিল – সেইখানে আলাপ হল এক সর্দারের সঙ্গে, সুখদীপ সিং। সে তিরিশে মে-ই শুরু করছে। প্রথমে মোবাইল নাম্বার বিনিময়, তারপরে হোয়াটস্যাপ, তারপরে ঠিক হল আগামি শনিবার (২৩শে মে) আমরা একই সময়ে যাবো আমাদের গাড়ি সার্ভিসিং করাতে, সেইখানেই চাক্ষুস মোলাকাত হবে, প্ল্যান নিয়ে আলোচনা হবে। সুখদীপের বাড়ি আমার বাড়ির কাছাকাছিই।
বাইশে মে ছুটি অ্যাপ্লাই করে আনন্দ নিকেতনে গিয়ে কিনে আনলাম পালসার এনএসের জন্য স্যাডল ব্যাগ – ভায়াটেরা ক্ল।
তেইশে মে বাজাজের সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে দেখি – ও মা, এ তো সর্দার নয় – সেমি সর্দার। মানে শিখ অবশ্যই, তবে বাঁধাকপিবিহীন। হুবহু আমারই রঙের পালসার এনএস -আর সর্বাঙ্গে বিভিন্ন স্টিকার মারা – বিভিন্ন কোম্পানির ইঞ্জিন অয়েলের, গীয়ার লুব্রিক্যান্টের, টায়ার কোম্পানির। ছোকরা কাজ করে সেন্ট্রাল এক্সাইজে, সেন্ট্রাল এক্সাইজ থেকে নাকি এর আগে কেউই বাইক নিয়ে লাদাখ যায় নি, এ-ই প্রথম, তাই সেন্ট্রাল এক্সাইজ ডিপার্টমেন্ট থেকে এর পুরো জার্নি স্পনসর করবে। আর ওর নাকি কে থাকে আম্বালায় বা চণ্ডীগড়ে – প্রায়ই দিনেরাতে সে নাকি দিল্লি থেকে আম্বালা যায় আসে, সুতরাং লং জার্নিতে সে খুবই অভ্যস্ত।
শুনে আমি একটু নার্ভাস হয়ে পড়লাম, আমার তো একেবারেই কোনও লং জার্নির অভ্যেস নেই। ম্যাক্সিমাম গেছি গাজিয়াবাদ থেকে গুরগাঁও আর ব্যাক। পঞ্চাশ পঞ্চাশ একশো কিলোমিটার। তো, সুখদীপ আমাকে অভয় দিয়ে বলল, আরে ও সব নিয়ে চিন্তা কোরো না, রাস্তায় নামলে দেখবে এমনিই দেখতে দেখতে শয়ে শয়ে কিলোমিটার পেরিয়ে যাবে। আমি সমস্ত কিট নিয়ে নিচ্ছি, পাংচার কিট, হ্যান্ডপাম্প, হ্যান ত্যান, তুমি শুধু ক্লাচ কেবল, ক্লাচ প্লেট, চেন লিউব (লুব্রিক্যান্ট) নিয়ে রেখো তা হলেই হবে। আমি ইঞ্জিন অয়েলও ক্যারি করব, আমি জানি কীভাবে অয়েল ঢালে, কীভাবে পাংচার সারায় – তুমি একেবারে চিন্তা কোরো না।
চিন্তা না করে কি থাকা যায়? বাইক চালাতে ভালোবাসি, কিন্তু বাইক সারাবার বেসিক জানি না। এমন একজন সাথে থাকবে, এটা অবশ্যই অনেক বড় ভরসার কথা।
ছাব্বিশে মে ছুটি অ্যাপ্রুভ হল। আর আমায় পায় কে? সুখদীপকে হোয়টস্যাপে মেসেজ করলাম। সুখদীপ স্টার্ট করছে উনত্রিশ তারিখে। ও যাবে আম্বালায় আগের রাতে। আমাকে পরদিন আম্বালা পৌঁছতে হবে একা একা, সেখান থেকে সুখদীপ আমার সাথে যাবে। আম্বালা থেকে যাবো জম্মু। দিল্লি থেকে পাক্কা ছশো কিলোমিটার। শেষরাতে বেরোতে হবে, যাতে দিনে দিনে জম্মু পৌঁছতে পারি, আর উত্তর ভারতের গরমটাও যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্রস করে যাওয়া যায়।
সুখদীপ জানাল ওরও ছুটি কাল পরশুর মধ্যেই অ্যাপ্রুভ হয়ে যাবে, যে হেতু ওর গাড়ি অলরেডি চল্লিশ হাজার কিলোমিটার চলে ফেলেছে, তাই ও টায়ার বদলে নেবে। পিরেলির টায়ার লাগাবে। ও হ্যাঁ, ওর কাছে গুচ্ছ গুচ্ছ বানজি কর্ড আছে, আমাকে কিনতে হবে না, আম্বালা অবধি কোনওরকমে চলে এলেই ও আমার লাগেজপত্র বানজি দিয়ে ভালোভাবে বাইকের সাথে বেঁধে দেবে।
সাতাশে মে, সক্কালবেলায় ভাবলাম একটু রাস্তাটা চিনে আসি। সাড়ে সাতটায় বেরিয়ে পড়লাম বাড়ি থেকে। ড্রাই রানেরও বাচ্চা ভার্সন। গীতা কলোনি পেরিয়ে কাশ্মীরি গেট পেরিয়ে মজনু-কা-টিলাপেরিয়ে সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগর পেরিয়ে আরো খানিকটা এগিয়ে গিয়ে ফিরলাম। বাইকে মাউন্টে বাঁধা মোবাইল, সেখান থেকে চার্জারে চার্জ নিচ্ছে ঠিকঠাক, হেডফোন কানে গোঁজা, সুন্দর গেলাম, ফিরে এলাম। চল্লিশ চল্লিশ আশি কিলোমিটার। ঠিক আছে – এইটুকু চলতে পারলে ছশো কিলোমিটার আর কতটুকু, দেখতে দেখতে পেরিয়ে যাবো।
সন্ধ্যেবেলায় সুখদীপকে মেসেজ করলাম, নতুন টায়ার কী লাগালে, ছবি পাঠাও। সুখদীপ রিপ্লাই করল, বস একটা সমস্যা হয়েছে। অফিস থেকে না, আমার জার্নি স্পনসর করছে না, তাই লিভও ক্যানসেল করে দিয়েছে।
আমার তো মাথায় হাত। ছোকরা বলে কী! বললাম, তুমি কথা বলো অফিসে, স্পনসর না হয় না-ই করল, তুমি নিজের খরচায় তো যেতে পারো, লিভটা অন্তত অ্যাপ্রুভ করে দিক।
সুখদীপ বলল, হ্যাঁ, ডিরেক্টর ডেকেছে উনত্রিশ তারিখে, এসপার ওসপার যা হবার সেদিনই হবে।
উনত্রিশ তারিখ। মানে যেদিন সন্ধ্যেয় ওর আম্বালা যাবার কথা, আমার বেরোবার ঠিক একদিন আগে। হাতে মাত্র দুদিন। ওর কথা যদি ডিরেক্টর না শোনে তো কী হবে? আমার তো ছুটি অ্যাপ্রুভ হয়ে গেছে, আমি কোনওভাবেই আর এই ছুটি ক্যানসেল করাতে পারব না, করাতে চাইবও না। তা হলে কি একাই বেরোতে হবে?
উনত্রিশ তারিখ সন্ধ্যেবেলায় খবর এল। ডিরেক্টর কোনও কথাই শোনেন নি, তার লিভ বা স্পনসরশিপ – কোনওটাই স্যাংশন হয় নি। অতএব, সে যেতে পারবে না। সিকি একা।
হাতে আর চব্বিশ ঘন্টাও নেই। সিকিনীকে এখন এসব কথা বলবার কোনও মানেই হয় না, ভয় টয় পেয়ে একাক্কার হয়ে যাবে, আমার যাওয়া না চৌপাট হয়ে যায়।
ঘরের দরজা বন্ধ করে খানিক চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। আমাকে কাল একা বেরোতে হবে, একা, কোনও ব্যাকআপ ছাড়া। বাইক বিগড়োলে সারাবার মত একটা জিনিস আমার কাছে নেই, পুরো খালি হাতে বেরোব। ভরসা আছে, এ রাস্তায় সঙ্গী মিলে যায়, মিলে যাবে ফর শিওর। কিন্তু কবে কখন কোথায় মিলবে, জানা নেই। তবু, যা থাকে কপালে, রাস্তা তখন আমায় চুম্বকের মতন টানছে, আমাকে রাস্তায় নামতে হবেই, এতটুকুও বাধা আসতে পারে এমন কিছু আমি টলারেট করতে রাজি নই। সর্দার যাক জাহান্নমে।
এইখানে আরও একজনকার কথা না বললে শুরুর প্রস্তুতির কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
গেছোদাদা। গুরুর একজন নীপা, আগে পাটনি টপে পোস্টেড ছিলেন, লে লাদাখ এলাকা খুব ভালো করে চেনেন চাকরিসূত্রে, আপাতত চাকরিসূত্রেই দিল্লিতে পোস্টেড। গেছোদাদার কাছ থেকে বেশ কয়েকবার রুট সম্বন্ধে বিস্তারিত জ্ঞানার্জন করেছি, এক এক দিনে কতটা দূরত্ব কভার করলে সেটা ডুয়েবল হয়, এই নিয়েও আইডিয়া বাড়িয়েছি। আসলে শুধু দূরত্বটা দেখলেই তো হয় না – সময়টাও তো একটা বড় ফ্যাক্টর। মে জুন মাসের দিনের বেলায় উত্তর ভারতের তাপমাত্রা সম্বন্ধে যাঁদের আইডিয়া আছে, তাঁরা জানেন কতটা কষ্টকর, কতটা বিপজ্জনক এই লম্বা রাস্তা দিনের বেলায় পাড়ি দেওয়া। যতক্ষণ না জম্মু পেরনো যাচ্ছে, ততক্ষণ এই নিদারুণ হিটওয়েভের হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই, তাই দূরত্ব, সময় আর শারীরিক পরিস্থিতি – এই তিনের একটা কম্বিনেশন বানিয়ে রুট প্ল্যান করতে হয়।
জার্নির প্ল্যান হিসেবে আমাকে সুখদীপ বলেছিল – ও টেন্ট ক্যারি করছে, ডাবল স্লিপিং ম্যাট ক্যারি করছে, আমি যদি পারি, তবে একটা স্লিপিং ব্যাগ অ্যারেঞ্জ করতে পারি নিজের জন্য, তা হলে জমে যাবে।
বেশ ভালো কথা। এর আগের বারে দ্রাসে আমার স্লিপিং ব্যাগে শোবার অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সে বড় আরামের ঘুম হয়। তো, এখন আর এখানে ভালো স্লিপিং ব্যাগ ঝেড়েবেছে কোথায় কিনব? গেছোদাদার শরণাপন্ন হতেই সমাধান মিলল, গেছোদাদার নিজেরই একটা স্লিপিং ব্যাগ আছে, সেটা আমি ধার নিতে পারি লে-যাত্রার জন্য।
হয়ে গেল মুশকিল আসান। একদিন টুক করে গেছোদাদার অফিসে গিয়ে নিয়ে এলাম স্লিপিং ব্যাগ।
সে ব্যাগ পড়ে রইল আমার কম্পিউটার টেবিলের নিচে। সুখদীপের ছুটি ক্যানসেল, টেন্ট যাচ্ছে না, স্লিপিং ম্যাট যাচ্ছে না – আমি আর স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে গিয়ে কী করব?
তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। ভোর চারটেয় উঠতে হবে।
*********************************************************
শুরু হল এক ল্যাদাড়ুশ ক্যাবলাকান্ত পাবলিকের একলা লাদাখ অভিযান। জীবনে যে কোনওদিন একটানা একশো কিলোমিটার গাড়ি চালায় নি, সে প্রথমবার লং ড্রাইভে নেমে একদিনে ছশো কিলোমিটার পাড়ি জমাবার কথা ভাবছে। এ কি সম্ভব?
চারটেতে অ্যালার্ম দেওয়া ছিল, ঘুম খুবই পাতলা ছিল, সাথে সাথে উঠে অ্যালার্ম বন্ধ করলাম। ঘুমন্ত সিকিনীর মুখের দিকে তাকিয়ে মায়া হল। ওকে বলি নি, আমি আসলে একা যাচ্ছি। সুখদীপের নম্বর কাল রাতে ওকে দিয়ে রেখেছি, জানি যে একবার ফোন করলেই জেনে যাবে যে সুখদীপ আমার সাথে যায় নি – তবুও নিজে থেকে ওকে বলতে পারি নি।
পাশের ঘরে গিয়ে জামাকাপড় পরলাম। হাঁটুগার্ড কনুইগার্ড পরলাম একা একা। ব্যাগ গোছানোই ছিল। বাকি সমস্তকিছু প্রিপারেশনবিহীন। দুটি ব্যাগ হয়েছে, একটি ভায়াটেরা ক্ল, অন্যটি একটি বাঙলি লাগেজ ব্যাগ, আর বাঁধবার জন্য খানিক লম্বা নাইলন দড়ি। সে দিয়ে কতটা কি লাগেজ বাঁধা যাবে, কে জানে।
রেডি হয়ে সিকিনীকে ডাকলাম। নিচে গিয়ে বাইক বের করলাম। লাগাতে গিয়ে বুঝলাম, পালসার এনএসের জন্য স্পেশালি তৈরি ভায়াটেরা ব্যাগও আসলে আমি লাগাতে জানি না। দড়িদড়াক্লিপআংটা সবই আছে, কিন্তু কখনও ট্রাই করে দেখি নি এটা আমার বাইক্র পেছনের সিটে কীভাবে লাগায়। বিস্তর চেষ্টা করে মনে হল ফিক্স করেছি, এইবারে তার ওপরে দ্বিতীয় ব্যাগ, নাইলনের দড়ি দিয়ে কোনওরকমে বাঁধলাম। বিস্তর ঘাম ঝরিয়ে অবশেষে মনে হল বেঁধেছি। দড়িটা একটু ছোটই হল, কিন্তু টিকে যাবে মনে হল।
পথের দেবতা তখন বুঝি অলক্ষ্যে হাসিয়াছিলেন। সিকিনীকে টা-টা করে আমি লাগেজবোঝাই বাইক নিয়ে এগোলাম।
আমাদের সোসাইটিটা বেশ বড়সড়। মেন গেট অবধিও পৌঁছই নি, মনে হল ব্যালেন্সের গড়বড় হচ্ছে। দাঁড়ালাম। ঠিক তাই – ওপরের ব্যাগটা হেলে গেছে ডানদিকে। বেশ টাইট করেই তো বেঁধেছিলাম নাইলনের দড়ি দিয়ে, কিন্তু কীভাবে যেন দড়ির গোড়ার দিকটাই ঢিলে হয়ে গেছে। অগত্যা, আবার পুরো দড়ি খুলে নতুনভাবে আবার কষে বাঁধলাম।
একটি প্লাস্টিকের জেরিক্যানে পাঁচ লিটার পেট্রলও নিয়েছিলাম, যদি রাস্তায় দরকারে লাগে – লাগে মানে, লাগবে তো বটেই। তার হ্যান্ডেলের মধ্যে দিয়ে দড়ি গলিয়ে কষে ব্যাগ, স্যাডল ব্যাগ সমস্ত টাইট করে বেঁধেছেঁদে অবশেষে যখন সোসইটির মেন গেট পেরোলাম, ঘড়িতে তখন পাঁচটা বাজছে। পূবের আকাশ একটু একটু করে ফর্সা হবো-হবো করছে।
অচল সিকির যাত্রা শুরু হল।
****
porer porbo gulo likhe felo ekhane
LikeLike
Wonderful !
LikeLiked by 1 person