জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – ষষ্ঠ পর্ব

[পর্ব ১], [পর্ব ২] ,[পর্ব ৩], [পর্ব ৪] এবং [পর্ব ৫] -এর পরে …

৩রা জুন ২০১৫ – পঞ্চম দিন

ভোর ভোর ঘুম ভাঙিয়ে দিল জীবন। নাই, নাই, নাই যে বাকি সময় তাহার। অ্যাক্লাইমেটাইজেশনের, রেস্ট নেবার কোনও সময় নেই তার, ছুটি কম, তাকে আজ যেতেই হবে খারদুং লা জয় করতে। একা একাই। … কিন্তু খারদুং লা এখন বন্ধ আছে না? কাল তো শুনলাম মারাত্মক স্নো-ফল হয়েছে, ট্র্যাফিক মুভমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে!

তাতে কিছু করার নেই জীবনের। ওকে এগোতেই হবে, যেখানে আটকাবে, সেখান থেকে ফিরে আসবে, নয় তো অপেক্ষা করবে সেখানেই, যদি খুলে যায় বেলার দিকে। তাও বললাম, এখানে পুলিশ বা মিলিটারি – যাকে সামনে পাবে, খোঁজ নিতে নিতে যাও। আমার ফোন নাম্বার দিলাম, কোনও দরকার পড়লে যেন অতি অবশ্যই ফোন করে নেয়।

মিষ্টি হেসে বিদায় নিল জীবন। একদিনের রুম রেন্টের শেয়ার মিটিয়ে সে তার ব্যাগ প্যাক করে নিচে চলে গেল। জীবনের সাথে আমার সেই শেষ দেখা। কে জানে, সে খারদুং লা যেতে পেরেছিল কিনা।

একটা জিনিস খেয়াল করলাম, আজ পঞ্চম দিনে এসে, আমার গায়ে ব্যথা ট্যথা প্রায় মরে গেছে, হ্যাঁ, ফ্যাটিগ একটা আছে, আরও খানিকক্ষণ রেস্ট নিলে হয়, সবে তো সকাল সাতটা বাজে। আবার লেপের তলায় সেঁধিয়ে গেলাম।

আলটিমেটলি নটায় উঠলাম। ফ্রেশ হলাম। নিচে গিয়ে সুমিতদের রুমে নক করে দেখি ওরাও রেডি হয়ে গেছে। পাশে একটা রুম খালি হয়েছে, অতএব বিবেক-প্রিয়াঙ্কাও পাশের হোটেল ছেড়ে এইখানেই চেক ইন করে নিয়েছে। সবাই রেডি হয়েছে কিংবা হচ্ছে। কী প্ল্যান আজকের?

আজ অ্যাপারেন্টলি রেস্ট দিবস। বিশেষ কোনও কাজ নেই, তবে একবার ডিসি অফিস যেতে হবে। না, চেনা রুটের পারমিট নেবার জন্য নয়। ২০১২ থেকে নুব্রা, প্যাংগং – এসবের জন্য ইনার লাইন পারমিটের কনসেপ্ট বাতিল হয়ে গেছে ভারতীয়দের জন্য, ওসব এখন কেবল বিদেশিদের জন্য লাগে। আমাদের পারমিট নিতে হবে, মারসিমিক লা-র জন্য। ওটা এখনও লেস এক্সপ্লোরড, প্যাংগং লেকের কাছে একটা রুট ডাইভার্সন আছে – ফোবরাং গ্রামের মধ্যে দিয়ে। সেইখান দিয়ে মারসিমিক লার দিকে এগোতে হয়।

এখানে এই সব অদ্ভূত অদ্ভূত মজা হয়, কোথায় যে বরফ হয় আর কোথায় হয় না – তার কোনও লজিক নেই। এই যেমন, জোজিলা পাস সারা বছর বরফে ঢাকা থাকে, অথচ তার চেয়ে উঁচুতে নামিক লা বা ফোটু লা টপে বরফ পড়ে না। তেমনি খারদুং লা বরফে ঢাকা, অথচ তার চেয়ে তিনশো মিটার উঁচুতে এই মারসিমিক লা পাসে বরফ পড়ে না। শুধু রাস্তা বলে কিছু নেই সে পথে। পথে পথে পাথর ছড়ানো। পুরোটাই অফরোডিং। গতবছর সজল শেঠের ব্লগ পড়ার পর থেকে মনে মনে বদ্ধপরিকর হয়ে রয়েছি মারসিমিক লা যেতেই হবে। এদিকে সুমিত আর গুরদীপেরও একই ইচ্ছে, ওরা অবশ্য সজল শেঠের ব্লগ পড়ে নি, ওরা ডেভিল অন হুইলস ফলো করে, সেখানে অন্য কারুর ব্লগ ফলো করেছে এবং ওদেরও লক্ষ্য ওই – মারসিমিক লা। তার জন্য পারমিট নিতে হবে।

মোটামুটি এগারোটা নাগাদ সবাই রেডি হয়ে বেরোলাম। সামনেই জার্মান বেকারি, সেইখানে ঢুকে সব্বাই পেট পুরে খেলাম, পরস্পরকে জানাচেনার প্রাথমিক পর্বটা ওখানেই সারা হল। সুমিত উত্তরাখণ্ডের ছেলে, কাজ করে গুরগাঁওতে, গুরদীপের বাড়ি আম্বালায়, অফিস নয়ডায়। এদের দুজনকে দেখলে মনে হয় হরিহর আত্মা – কে বলবে এদের আলাপ হয়েছে জাস্ট ফেব্রুয়ারি মাসে। সুমিত একা একা চলেছিল চিটকুল (হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌর জেলার একটি গ্রাম, চীন সীমান্তের কাছে ভারতের শেষতম জনবসতি), সেইখানে রাস্তায় আলাপ, এই যেমন পরশুদিন ওদের সাথে আমার আলাপ হয়েছে। সুমিত প্যাশনেট বাইকার এবং ফটোগ্রাফার, মেনলি স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে ওর ঝোঁক, দেশবিদেশকারেন্টঅ্যাফেয়ার্স সবকিছু সম্বন্ধেই খুব ইন্টারেস্টেড – কেবল একটি বিষয় বাদে।

মেয়ে।

তিনি মাত্র আঠাশ বছর বয়েসী, বিয়ে করবেন না মনস্থ করেছেন, ফটোগ্রাফি, বাইকিং এবং দেশবিদেশে ঘুরে জীবন কাটাবেন ঠিক করেছেন। অবশ্য মেয়ে দেখলে আড়ষ্ট হয়ে যায়, এমন টাইপের জনতাও নয়। ফ্রি-মাইন্ডের জনতা – ব্যাগেজহীন।

গুরদীপ সংসারি মানুষ, একটি বউ এবং একটি ছানা আছে। বাইকিং এবং ফোটোগ্রাফি তারও নেশা, সেইভাবেই সে-ও চিটকুল যাচ্ছিল – সেখানে সুমিতের সাথে ওর আলাপ। চিটকুল ছাড়াও অবশ্য দুজনেই আরও অনেক জায়গা বাইকে করে ঘুরেছে। গুরদীপ তো লাহুল-স্পিতি ভ্যালিও ঘুরে এসেছে। দলের মধ্যে একমাত্র ক্যাবলা আমিই।

বিবেক আর প্রিয়াঙ্কা – দাবি করল কাজ করে একটি আইটি কোম্পানিতে, তবে ওদের পুরো কালটিভেট করে যা মনে হল, ওরা বিপিও-তে আছে, আইটি-তে নেই। ইন্দিরাপুরমের ছেলে এবং মথুরার মেয়ে, ওদের বিয়ে হয় নি এখনও, তবে হবে শিগগিরই। আপাতত দুজনে বেরিয়ে পড়েছে লে ভ্রমণে। এই বয়েসে যা হয় আর কি – আমরা তিনটি ব্যাচেলর ও সিউডো ব্যাচেলর, সে গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে এসে না পারছে পুরোপুরি আমাদের সাথে মিশতে, না পারছে গার্লফ্রেন্ডকে পুরোপুরি সময় দিতে। মেয়েটি অবশ্য খুবই স্মার্ট, একবারের জন্যও দ্বিধা করে নি দলে ভিড়ে যেতে, বরং বিবেকের মধ্যেই একটু কিন্তু-কিন্তু ভাব ছিল প্রথম দিকে।

গন্তব্য, প্রথমে ডিসি অফিস। মানে ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টরেট অফিস। ওখান থেকেই পারমিট নিতে হয়। বেশি দূর নয়, মার্কেটের শেষ প্রান্তে পোলো গ্রাউন্ড, সেই গ্রাউন্ডের সামনেই ডিসি অফিস।

হেঁটে হেঁটে এগোলাম সবাই মিলে। এদিক সেদিক ছবি তুলতে তুলতে। আকাশ ঘোলাটে। জুন মাসের লে-তে যে সুনীল আকাশ দেখা যাবার কথা, সে আকাশ উধাও। রাশি রাশি মেঘ।

দূরে দেখা যাচ্ছে লে প্যালেস।

সকলেই বলছে, এ বড় আনইউজুয়াল ওয়েদার। জুন মাসে এমন ওয়েদার হয় না লে-তে। খারদুং লা বন্ধ। জীবন যে কোথায় গেল কে জানে! নিজের ফোন নম্বরও দিয়ে যায় নি।

আমিও তো তাইই জানি, এমন ওয়েদার হয় না লে-তে। লাদাখ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। বৃষ্টি এখানে হয় না, তাই যখন সারা ভারত প্রার্থনা করে ভগবানের কাছে, আল্লা ম্যাঘ দে, পানি দে বলে, লাদাখিরা প্রার্থনা করে, ঠাকুর, গ্লেসিয়ার থেকে জলের সাপ্লাই অব্যাহত রেখো। ওরা কখনও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে না। লে-তে বেশির ভাগ বাড়িই পাথরের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে বানানো। এইখানে তেড়ে বৃষ্টি হলে কী হয় সে আমরা দেখেছি ২০১০ সালে। ফ্ল্যাশ ফ্লাডে লে শহর প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছিল।

পারমিট নেওয়াটা জাস্ট একটা মেকানিকাল প্রসেস, কিছুক্ষণের মধ্যেই পারমিট এসে গেল হাতে, ওরাই বলে দিল, বাকি জায়গা যাবার জন্য এক ধরণের ফর্ম হয়, যে কোনও জেরক্সের দোকানে পাওয়া যায়, ওই ফর্ম জায়গায় জায়গায় চেকপোস্টে ভরে জমা দিতে হয়। পারমিটের বদলে এখন ফর্ম চলে।

অতঃপর যাওয়া লে প্যালেসে। ইতিমধ্যেই হোটেল থেকে এতটা দূর চলে এসেছি যে হোটেলে ফিরে মোটরসাইকেল নিতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে। স্থানীয় লোকেরাই বলল, এই পোলো গ্রাউন্ডের পেছন দিয়ে ওই গলিপথ ধরে এগিয়ে যান, এটা সোজা লে প্যালেস গেছে – খুব বেশি দূর নয়।

পাহাড়ী লোকেদের “কাছেই”-এর মানে যে আমাদের থেকে আলাদা, সে সম্বন্ধে আমার বিস্তর জ্ঞান আছে। তবু পাঁচজনে মিলে এগোলাম সে রাস্তা দিয়ে। এর বাড়ির উঠোন, তার বাড়ির গোয়াল – সব মিলিয়ে সে এক সুন্দর এক্সপিরিয়েন্স। পায়ে হেঁটে অফরোডিং। মাঝে এক শিংওলা চমরী গাই আমাদের অলস চোখে মেপে নিল – এইখানে আমাকে বাকিদের লীড করতে হল – বাকিরা গরু দেখে ভয় পাচ্ছিল কিনা।

ছবি দেখুন। সমস্ত ছবি অবশ্য আমার নিজের তোলা নয়। অনেকগুলো সুমিতের ক্যামেরা থেকে নেওয়া।

দুলকি চালে খাড়াই নেই-পথ ধরে একটু একটু করে উঠতে লাগলাম লে প্যালেসের দিকে। দলের মধ্যে সবচেয়ে বয়স্ক আমি, সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছিলাম উঠতে গিয়ে। দম বেরিয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছি। তিন চার ধাপ উঠছি, আর পাথরের ওপর বসে হ্যা-হ্যা করে হাঁপাচ্ছি। আমাকে সঙ্গ দিতে গিয়ে বাকিদেরও দাঁড়াতে হচ্ছে। তার জন্য অবশ্য বিরক্ত হচ্ছে না কেউই, গুছিয়ে ফটো তুলে যাচ্ছে, আর শ্রীমতি প্রিয়াঙ্কা নানা বিভঙ্গে তার বয়ফ্রেন্ডের ক্যামেরার জন্য পোজ দিয়ে যাচ্ছেন, আমরাও ক্যামেরায় তার একটু আধটু নিচ্ছি আর কি।

এইভাবে ধীরেসুস্থে উঠলাম প্যালেসের মুখে। টিকিট কেটেই প্রথমে জল চাইলাম। পর পর দু গ্লাস জল খেয়ে প্রাণ ঠাণ্ডা হল। অতঃপর লে প্যালেস দর্শন। নতুন কিছু দেখার তো নেই, আমার আগে সবই দেখা, অতএব বাকিদের গাইড হিসেবে কাজ করলাম খানিক। মাঝে মাঝেই অরিজিতের নম্বর ডায়াল করে যাচ্ছি, সে তখনও আউট অফ রিচ, মানে নুব্রাতেই আটকে আছে এখনও।

সেই রাস্তা বেয়েই নিচে নামলাম, নিচে নামাটা মোটেই কষ্টকর নয়, তারপরে লে মার্কেটে গিয়ে পেটপুরে লাঞ্চ সারলাম। কী সাঙ্ঘাতিক খিদে যে পেয়ে গেছিল! লাঞ্চ সেরে উঠতে উঠতেই প্রায় তিনটে বেজে গেল। মানে আজ আর স্পিটুক মনাস্ট্রি হবে না, শুধু শান্তিস্তুপ দেখা যাবে।

শ্রীমতি প্রিয়াঙ্কা এমনিতে খুবই ভালো মেয়ে, কেবল মথুরায় বাড়ি তো – যা-ই খাবার দেখেন, দুবার করে কনফার্ম করে নেন – ইয়ে ভ্যাজ হ্যায় না? লাস্টে একবাটি দই চেয়ে সেটা দেখিয়েও জিজ্ঞেস করে নিল – ইয়ে ভ্যাজ হ্যায় না? মাইরি, দই কীভাবে নন ভেজ হয়, সে আর আমার জানা হল না।

সে না হয় হল, কিন্তু কালকের কী প্ল্যান? কাল যে আমাদের খারদুং লা পেরিয়ে নুব্রা যাবার কথা। যেতে পারব কি পারব না? আকাশ ভর্তি কালো কালো মেঘ! ভুল সময়ে এসে পড়লাম মনে হচ্ছে, জুন মাসে লে-র আবহাওয়া তো এমন হবার কথা নয়! এত বৃষ্টি হবে লে-তে, কে জানত? মনে হচ্ছে না আমাদের যাবার আগে মানালির রুটও খুলবে বলে। হয় শ্রীনগর রুটেই ফিরতে হবে, নয় তো গতি এক্সপ্রেস জাতীয় কিছু একটাতে বাইকটা জমা করে দিল্লি পাঠানোর ব্যবস্থা করে আমাকে ফ্লাইটে ফিরতে হবে। শ্রীনগর দিয়ে ওই রুটে দ্বিতীয়বার ফেরা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। নাইটমেয়ারিশ ব্যাপার হবে তা হলে সেটা।

পাঁচজনে মিলে ঠিক করলাম, খারদুং লা যদি কাল না খোলে, তা হলে কালকের দিনটা নষ্ট হবে। সেটা না করে কাল বরং চাং লা পাস পেরিয়ে প্যাংগং লেক চলে যাওয়া যাক। ওটা ঘুরে আসতে দুদিন লাগবে। প্রথম দিন প্যাংগং পৌঁছবো। পরের দিন মারসিমিক লা করে চাং লা পেরিয়ে আবার লে-তে ফেরত। দুদিন বাদে নিশ্চয়ই খারদুং লা খুলে যাবে। বৃষ্টি এখানে নর্মালি হয় না, এক দুদিন হচ্ছে, থেমে যাবে ঠিক।

গেস্ট হাউস থেকে বাইক বের করে এর পর শান্তিস্তুপ যাত্রা। লে-র সেই গলিগুলোর মধ্যে দিয়ে মাত্র তিন বছর আগে হেঁটে ঘুরেছি। আজ আবার বাইকে করে ঘুরতে গিয়ে কেমন একটা জাতিস্মর জাতিস্মর ফীলিং হচ্ছিল। সব চেনা চেনা গলি, চেনা দোকানপাট। এইখানে পর পর তিনটে টি-শার্টের দোকান ছিল, ওইটা সেই কিউরিও শপটা, এখান থেকে বাঁদিকে গেলেই একটা ঘ্যামা খাবার জায়গা আছে – এইসব পেরিয়ে উঠলাম শান্তিস্তুপে। লে মার্কেট থেকে তিন চার কিলোমিটার দূরে।

নতুন কিছু এখানেও দেখার নেই, তবে শান্তিস্তুপ সংলগ্ন ছোট্ট মনাস্ট্রিটিতে তখন একজন বৌদ্ধ মঙ্ক এক ঝিমধরানো দারুন সুরে ত্রিপিটক বা ওই জাতীয় কিছু পড়ে চলেছিলেন। এইটা এইবারের একটা দারুণ পাওনা – খানিক ভিডিও রেকর্ডিং করে নিলাম।

হেডফোন লাগিয়ে শুনবেন, নইলে ড্রামের আওয়াজে আলাদা করে মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে পাবেন না।

এবার কিছু ছবি দিই –

শান্তিস্তুপ থেকে সামনের খারদুং লা টপ –

শান্তিস্তূপ – আকাশ মেঘে ঢাকা।

এর পর খানিক মার্কেটে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি, টিবেটান রিফিউজি মার্কেটে গিয়ে ফটোগ্রাফি, তারপরে মনে পড়া যে আমাকে আবার একটা জেরিক্যান কিনতে হবে। পরদিন প্যাংগং যাওয়া এবং আসা, চারশোর ওপর কিলোমিটার, শুধু ট্যাঙ্কারের পেট্রলে হবে না, বাড়তি লাগবেই।

শক্তপোক্ত দেখে একটা ক্যান কেনা হল প্লাস্টিকের, একটা বানজি কর্ডও কিনলাম, যদি কাজে লাগে। এমনিতে কাল আর গন্ধমাদন নিয়ে বেরোব না, বাড়তি ব্যাগটাতে যা-যা লাগবে না আগামী দু রাতের জন্য, সেগুলো ভরে মিসেস লিন্ডার গেস্ট হাউসে রেখে যাব, আমার সঙ্গে যাবে শুধু ভায়াটেরা ক্ল, তাকে শক্ত করে বাঁধবার প্রভিশন ব্যাগেই আছে, ওটা নিয়ে চিন্তা নেই। সুমিতের অ্যাভেঞ্জারে আমার পেট্রল জেরিক্যানের জন্য একটু জায়গাও হয়ে গেল, আমাকে নিজেকে আর ওটা ক্যারি করতে হবে না। তার সঙ্গে আমরা সবাই এক সেট করে মিলিটারি গ্লাভস কিনলাম, মিলিটারি শপ থেকে। এই গ্লাভস নাকি মাইনাস কুড়ি ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রায় হাতকে গরম রাখতে সাহায্য করে। আমার করোল বাগ থেকে কেনা গ্লাভস ফোটুলা টপের স্নো-ফলে আমাকে মোট্টেই প্রোটেকশন দেয় নি।

কেনাকাটা সেরে একটা রেস্টুর‍্যান্টে ঢুকে আবার গলা পর্যন্ত খাওয়া। মনে শুধু একটা খুঁতখুঁত। মানালি তো হবে না বলেই মনে হচ্ছে, বাইকের ট্রান্সপোর্টেশনের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হল না। যাক, ফিরে এসেই করতে হবে। আর যাই হোক, ওই শ্রীনগর রুটে আমি দ্বিতীয়বার ফিরছি না।

রেস্ট নেবার নামে সারাদিন ঘুরে টুরে আমরা সকলেই তখন হা-ক্লান্ত। সুমিত আর গুরদীপ তো খাবার টেবিলে বসেই একে অন্যের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ল।

সাড়ে দশটায় হোটেলে ফিরে লাগেজ গুছিয়ে এক ঘুম দেব প্ল্যান করছি, দরজায় টকটক।

খুলে দেখি, বিবেক – সিকিস্যার, আপনার কাছে এক্সট্রা ডায়ামক্স আছে? আমাদের স্ট্রিপটা শেষ হয়ে গেছে।

শেষ হয়ে গেছে? কতগুলো খেয়েছো? কবে থেকে খাচ্ছো?

না, খাচ্ছি পরশু থেকে, তো, কাল তো চাং লা পাস পেরোতে হবে, স্টকে আর একটাই পড়ে আছে, আপনি যদি একটা দেন তো …

দিলাম, আমার কাছে পনেরোটার মধ্যে তেরোটাই পড়ে আছে। বললাম, এইভাবে এত ডায়ামক্স কিন্তু দরকার নেই। শরীর এমনিতেই অ্যাক্লাইমেটাইজড হয়ে আছে এখন, আর ডায়ামক্স না খেলেও চলবে।

আলো নেভানোর আগে একবার অরিজিতের ফোনে ট্রাই করলাম, এখনও নট রিচেবল। মানে খারদুং লা খোলে নি। কাল পরশু আমি নিজে নেটওয়ার্কের বাইরে থাকব, তাই হোয়াটস্যাপে দু একজনকে বললাম অরিজিতকে লাগাতার ট্রাই করে যেতে কাল পরশু। কী হল কে জানে।

সাড়ে এগারোটায় ফাইনালি বিছানায় শুতে পারলাম। শোয়ামাত্র ঘুম।


মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.