একটি অতিসাধারণ ভ্রমণকাহিনি – প্রথম পর্ব

লাদাখ নিয়ে লেখার শেষে নিজের কাছেই নিজে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আবার রাস্তায় নামবই।

রাস্তা আমাকে টানছিল। এ টান অনেকটা নিশির ডাকের মত, সাড়া দেবার আগে বহুৎ ভাবতে হয়, অথচ ভাবনার শেষে সাড়া না দিয়েও থাকা যায় না। সবাই এ ডাক শুনতে পায় না, কিন্তু যে পায়, তার রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে যায়। আমারও যাচ্ছিল। … কোথায় যেন একটা কোটেশন পড়লাম, স্বপ্ন সেইটা নয়, যেটা তুমি রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দ্যাখো, স্বপ্ন হল সেইটা, যেটা রাতে তোমাকে ঘুমোতে দেয় না। সেই স্বপ্ন আমার রাতের ঘুম নষ্ট করতে থাকল।

লাদাখ থেকে ফিরে আসার পর কিছুদিন বেশ শান্তিতে ঘুমিয়েছিলাম। নিজের ভেতর একটা তৃপ্তি কাজ করেছিল কিছুদিন। কীসের তৃপ্তি? আমি মানুষটা খুব সাধারণ, খুব দুর্বল। এমন নয় যে আমি প্রথম বাইক চালিয়ে লাদাখ গেছি, সেই রাস্তায় প্রতি বছর বিভিন্ন ভাবে প্রচুর মানুষ যায়, একাধিকবার যায়, একা যায়, দল বেঁধে যায়, কিন্তু প্রতিটা জার্নিই নিজের মত করে অনন্য হয়ে ওঠে, ইউনিক। আমার জার্নিও তাই ছিল। অনভিজ্ঞতার জন্য প্রথমদিকে টালমাটাল, হওয়া সম্ভব ছিল না, তবুও ক্ষমতার শেষ সীমা পর্যন্ত চেষ্টা করে পেরেছি। সত্যি পারব, এমনটা লাদাখ পৌঁছবার আগে পর্যন্ত ভাবি নি।

কিন্তু সে তৃপ্তি বেশিদিন থাকল না। এক মাস যেতে না যেতেই রাতে ঘুমের মধ্যে কালো পিচের রাস্তা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে লাগল, আয় – আয়। ঘুম ভেঙে যেত। মনের মধ্যে কল্পনা করতাম, আমি আবার বেরোচ্ছি – এইবারে লাহুল-স্পিতি, কল্পা-সাংলা-চিটকুল – নাকি অন্য কোথাও?

দেড় মাসের মধ্যে নিজের জুন মাসের ট্রিপটা কেমন অবিশ্বাস্য লাগতে শুরু করল। আমি কি সত্যিই গেছিলাম? উচ্চণ্ড গরমের মধ্যে প্রথম দিনেই ছশো কিলোমিটার রাইড করেছিলাম? নিজের কাছেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আজ, এক্ষুনি যদি তোমাকে কেউ বলে কাল ভোরবেলা আবার লাদাখের জন্য স্টার্ট করতে হবে – তুমি পারবে? … দিল্লির গরম তখনও একই রকম প্রখর।

কনফিডেন্স কমছিল মনের মধ্যে। না, আর বোধ হয় ওই রকমের রিস্ক নিতে পারব না। আবার একবার বেরিয়ে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে সারাদিন বাইক চালিয়ে ছশো কিলোমিটার ড্রাইভ করা – আমার পক্ষে সম্ভব নয়। … নাকি সম্ভব? জাস্ট ঘরে ফ্যানের নিচে বসে আছি বলে এমন মনে হচ্ছে? বাইরে একবার বেরিয়ে পড়লে কি বাকিটা খুবই অসম্ভব? … কে জানে!

এই সময়ে দেখে ফেললাম পিকু সিনেমাটা। আর সাথে সাথেই মনে সেট করে গেল পরের জার্নি। ইরফান খানের হাতে স্টিয়ারিং, গাড়ি চলেছে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে, কানপুর পেরিয়ে বেনারস পেরিয়ে কলকাতা। আর কলকাতা মানেই তো আমার আরেকটা ঘর! আমার মা-বাবা আছে, আত্মীয় পরিজন আছে, গাড়ি নিয়ে চলে যেতে পারলে একটা দারুণ অসাম সেলিব্রেশন হবে।

একেই ঘুম আসছিল না রাতে, হয়ে গেল আরো বেশি করে ঘুমের দফারফা। পড়তে শুরু করলাম দিল্লি কলকাতা ট্রিপের ওপর যত রকমের লেখা, ট্র্যাভেলগ হয়। জোগাড় করতে লাগলাম তথ্যাদি, কীভাবে যাওয়া যায়, কোথায় থামা উচিত, কোন হোটেলে খাওয়া ভালো, সব পড়তে লাগলাম। গল্পটা আস্তে আস্তে পরিষ্কার হতে থাকল চোখের সামনে। কয়েকটা জিনিস বুঝতে পারলাম, যেগুলো আলাদা করে আগে মাথায় স্ট্রাইক করে নি।

  1. দিল্লি থেকে কলকাতার দূরত্ব যদিও দেড় হাজার কিলোমিটার, পুরো ট্রিপটা যাওয়া-আসা মিলিয়ে পড়বে তিন হাজার কিলোমিটার। সুতরাং, তিন হাজার কিলোমিটার রাইডিং-এর প্রস্তুতি নিয়ে, তবেই বেরনো উচিত।
  2. যে পথে যাওয়া, সেই পথেই ফেরা। সাধারণত এই ধরণের লম্বা ট্রিপে যাওয়াটা যদিও ভালোয় ভালোয় হয়ে যায়, সেই একই পথে অতটা লম্বা জার্নি করে ফিরে আসা প্রায়শই প্রচণ্ড টায়ারিং হয়ে দাঁড়ায়, হাল ছেড়ে দিতে মন চায়। লাদাখে মানালির রাস্তা বন্ধ থাকায় আমাকে একই রাস্তা দিয়ে ফিরতে হয়েছিল – শ্রীনগর জম্মু হয়ে। এটা কতটা ফ্রাস্ট্রেটিং হয়, আমি জানি। কলকাতা থেকে দিল্লি ফেরার দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই, একটাই রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে। অতএব, মনকে সেইভাবে তৈরি করে নিয়ে বেরোতে হবে।
  3. রাস্তাটি চলেছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। রাজ্যগুলি বিভিন্ন কারণে খবরের কাগজের হেডলাইনে থাকে সারা বছর, তবে মূল হাইওয়েটা দিব্যি সেফ। যদিও সবসময়ে এটা রেকমেন্ডেবল যে ভোর ভোর শুরু করো, রাজ্যগুলো দিনের বেলায় পেরিয়ে যাও, বেশি রাতে ড্রাইভ কোরো না। এলাহাবাদ বা বারাণসী, দুটোর মধ্যে যে কোনও একটা জায়গায় থাকা যায় রাতে, তবে লোকে মূলত বারাণসীতেই থাকে, সেই মত জার্নি প্ল্যান করতে হয়।
  4. এবং, প্রতিটি রাজ্যই সমতলভূমিতে অবস্থিত। ঝাড়খণ্ডে হাল্কা পাহাড় আছে বটে, তবে তা নিতান্তই মালভূমির পাহাড়, তা বাদে পুরো রাস্তাটাই সমতল। গরমকালে প্রচণ্ড হিটওয়েভ চলে এইসব জায়গায় – ফলে গেলে গরম কমার পরেই যেতে হবে।

সিকিনীকে ভয়ে ভয়ে জানালাম। সিকিনী প্রথমে তো উড়িয়েই দিল, আমি ইয়ার্কি মারছি ভেবে, আরে সিনেমাতে তো কতকিছুই দেখায়, তাই বলে রিয়েল লাইফে সেইসব পাগলামো করে নাকি কেউ? খানিকক্ষণ ঘ্যানঘ্যান করার পরে বুঝল, আমি ইয়ার্কি মারছি না, সিরিয়াসলিই বলছি। ওকে দু একটা ট্র্যাভেলগ দেখালাম, লিঙ্ক দিলাম পরে পড়ার জন্য। কিন্তু সে লাদাখ যাবার আগে কিছু পড়ে নি, এখন আর কী পড়বে? যে ডাক আমি শুনতে পাই, সে ডাক তো আর ও শুনতে পায় না! এ ডাক সবাই শুনতে পায় না। সিকিনী বা কন্যা ভূতোর কাছে বেড়ানো মানে কোথাও বেশ আরাম করে যাওয়া, তার পরে চুপচাপ কোনও একটা সীনিক বিউটির সামনে বসে থাকা, ওর কাছে “ছুটি” বা “বেড়ানো” মানে খাবার অর্ডার করে খাওয়া, নিজে রান্না না করা, টিফিন প্যাক না করা।

সে হতেই পারে। সবার জীবনে নিজস্ব দর্শন থাকে। একটা দর্শন অন্যজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া খুব খারাপ জিনিস বলে আমি মনে করি, ফলে সাহস করে শেষ কথাটা পেড়ে উঠতে পারছিলাম না। তবুও, গৃহযুদ্ধ অনিবার্য জেনেও – খানিক দোনামোনা করে, পেড়েই ফেললাম কথাটা।

– যাবি আমার সঙ্গে?

… তোরা যদি যাস, তা হলে গাড়ি নিয়ে যাবো, তোরা আরামসে বসে ঘুমিয়ে যেতে পারবি, ড্রাইভিং তো আমিই করব, গাড়িতে এন্টারটেনমেন্ট সিস্টেমও আছে, তাতে গান শোনা যায়, সিনেমা দেখা যায়, পছন্দের গান সিনেমা পেন ড্রাইভে ভরে যা ইচ্ছে হবে দেখবি, বোর হলে বইটই পড়বি, আর ফেরার সময়ে রাজধানী এক্সপ্রেসে করে ফেরত আসবি। আমি একলা ফিরব।

আর তোরা যদি না যাস, তা হলেও আমি যাবো, একলা গেলে আর গাড়ি নিয়ে যাবার দরকার নেই – বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ব। দুদিনে দেড় হাজার কিলোমিটার সমতলে করা খুব বড় কোনও ব্যাপার নয়।

না, বোম ফাটল না, ভূমিকম্প হল না, গৃহযুদ্ধও হল না। আমি মিছেই ভয় করছিলাম। সিকিনী এখন আমাকে চিনে গেছে। ও জানে যে আমাকে বারণ করে লাভ হবে না এই ব্যাপারে, ও জানে যে আমাকে রাস্তা টানে। কিন্তু ওকে যে টানে না এইভাবে! প্রথমে খুব খানিকক্ষণ দোনামোনা করল, এইভাবে এতটা রাস্তা বাই রোড যাওয়া – জানি না আমরা পেরে উঠব কিনা, তার ওপরে ভূতো অনেক ছোট, ও পারবে না এই ধকল নিতে, আর এ তো লাদাখের মত রাস্তা নয় – যে খানিক গেলেই পাহাড় শুরু হবে, সুন্দর দৃশ্য দেখা যাবে চারদিকে, এ পুরো উত্তর ভারতের ওপর দিয়ে যাওয়া, যার বিশেষ কোনও সৌন্দর্য নেই, তার ওপরে রাস্তা কেমন কে জানে, বিহারে কী অবস্থা হবে, কে জানে – এইভাবে গিয়ে কী আনন্দ হবে?

আশ্বস্ত করলাম অনেকগুলো পয়েন্টে। না, বিহার আদৌ ডেঞ্জারাস নয় যদি দিনের বেলায় ক্রস করি – আর আমরা দিনের বেলাতেই ক্রস করব কারণ আমরা বেনারসে রাতে থাকব, সেখান থেকে ভোরবেলা বেরবো, আর বেনারস হচ্ছে বিহারের বর্ডার ঘেঁষে, ওখান থেকে বিহার জাস্ট কুড়ি কিলোমিটার। আমরা ভোর থাকতে থাকতেই বিহার পেরিয়ে যাবো। সৌন্দর্য – হ্যাঁ, হিমালয়ের সৌন্দর্য এ রাস্তায় নেই, কিন্তু এ রাস্তায় অন্য সৌন্দর্য আছে। বিহার আর ঝাড়খণ্ডের সীনিক বিউটি জাস্ট অসাধারণ, অন্যরকম, না দেখলে সে বর্ণনা দিয়ে বোঝানো যাবে না। আর রাস্তা? হ্যাঁ, ছোটখাটো কয়েকটা প্যাচ তো আছেই খারাপ, কিন্তু ওভারঅল রাস্তা ভীষণ ভালো, ওয়েল মেনটেইনড, রাস্তা খারাপ হবে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে ঢুকলে, তাও সে খানিকটাই। এত লম্বা জার্নিতে ওটুকু খারাপ রাস্তা – গায়ে লাগবে না।

ভূতোকে নিয়ে একটা চিন্তা আছেই, মাত্রই দশ বছর বয়েস, খুব একটা বেড়ানোর ইন্টারেস্ট নেই, প্লাস ওর মোশন সিকনেস আছে। গাড়িতে চললে খানিক বাদেই বমি পায়, যদিও আজ প্রায় বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল, তেমন কিছু ঘটে নি। আস্তে আস্তে বড় হবার সময়ে এইসব টেম্পোরারি সমস্যা কেটে যায়। দেখা যাক না, কী হয়। ওষুধপত্র নিয়ে উঠব, দরকার হলে বমির ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেব।

সিকিনী তবুও কিন্তু-কিন্তু করতে লাগল, এমনিতে তার আর খুব একটা আপত্তি নেই, কিন্তু অফিসে ছুটি পাওয়া যাবে কিনা সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়। যাবার সময় আমি ফিক্স করছি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে, কালীপুজো আর ভাইফোঁটা একই সময়ে একই সপ্তাহে পড়েছে, আমার গত পনেরো বছর ভাইফোঁটা পাওয়া হয় নি, আর ভূতোরও একটা পিসতুতো ভাই আছে কলকাতায়, ভূতোও জন্মে থেকে “ভাইফোঁটা” কী জিনিস, তা জানে নি। মুশকিল হচ্ছে, কালীপুজোর সময়টা দিল্লিতে হয় দিওয়ালি, উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় উৎসব। সেই সময়ে অনেকেই ছুটিতে চলে যায়, বাড়ি যাবার জন্য, বাঙালিদের পক্ষে ছুটি পাওয়া ওই সময়টা একটু চাপ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ আমরা বাঙালিরা সাধারণত দু তিনদিনের ছুটি নিই দুর্গাপুজোর সময়ে, সেটাতে কেউ না করে না। দিওয়ালিতে ছুটি নিতে গেলে দুর্গাপুজোয় ছুটি নেওয়া যাবে না, আবার দুর্গাপুজোয় ছুটি না নিলেও যে দিওয়ালির সপ্তাহে ছুটি পাওয়া যাবে তার কোনও গ্যারান্টি নেই।

স্বাভাবিক। জুলাই মাসে দাঁড়িয়ে নভেম্বরে ছুটি পাওয়া যাবে কিনা তা আলোচনা করা একেবারেই যুক্তিযুক্ত নয়। ভূতোর স্কুল ওই সপ্তাহে বন্ধ থাকবে এটা জানা।

তা হলে, সিকিনী যেতে না পারলে কি ভূতো যাবে আমার সাথে?

ভূতোর কাছে কথাটা পাড়তেই ও এককথায় না করে দিল। মা গেলেও ও যেতে রাজি নয়, অতক্ষণ গাড়িতে যেতে তার ভালো লাগে না। তবে, ভূতো খুব অ্যাকোমোডেটিং পার্সন, মানতেই হবে, জাস্ট দু ভাবে ইনস্পায়ার করলাম, পিকু দেখালাম দুবার, আর বললাম, এই জার্নি আমার লাদাখ যাবার থেকে কোনও অংশে কম নয়, যদি এটা করতে পারিস, জানবি তোর বয়েসে এই রকমের ট্রিপ আর কেউ করে নি, স্কুলে গিয়ে ঘ্যাম নিয়ে সব্বাইকে বলতে পারবি, সবাই হাঁ হয়ে যাবে।

চারদিনের মাথায় ভূতো নিজে থেকেই রাজি হয়ে গেল। কোনও জোরাজুরি করতে হল না।

আমি দুজনকার জন্য ফিরতি রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিট কেটে রাখলাম, বারাণসীতে রাহি ট্যুরিস্ট বাংলোতে যাবার এবং আসার রাতের জন্য ঘর বুক করে রাখলাম। ৭ই নভেম্বর শুরু করে ৮ই নভেম্বর সন্ধ্যেয় বাড়ি পৌঁছনো, আবার ১৪ই নভেম্বর শুরু করে ১৫ তারিখ রাতের মধ্যে দিল্লি ফেরত।

আগস্ট গেল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি নাগাদ সিকিনী আমাকে বলল, একটা টেস্ট ড্রাইভ করলে কেমন হয়? দোসরা অক্টোবর ছুটি, শুক্রবার পড়েছে, মানে লং উইকেন্ড। চল্‌, বেরিয়ে পড়ি।

যা ভাবা তাই কাজ। গন্তব্য ঠিক হল ম্যাকলিওডগঞ্জ, ধরমশালা থেকে বাইশ কিলোমিটার ওপরে। দিল্লি থেকে পাঁচশো কিলোমিটার। যাওয়া আসা মিলিয়ে হাজার কিলোমিটার।

দু তারিখ ভোর ভোর বেরিয়ে পড়লাম। অনেকটাই ভালোয় ভালোয় গেলাম, মাত্রই পাঁচশো কিলোমিটার বলে ধীরেসুস্থে ব্রেক নিয়ে বিকেল নাগাদ ধরমশালায় পৌঁছলাম। তার পরেই শুরু হল এক বিকট জ্যাম। সেদিন ধরমশালার স্টেডিয়ামে ছিল ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ম্যাচ, লোকাল লোক তো বটেই, লং উইকেন্ডের মওকা পেয়ে দিল্লি পঞ্জাব থেকে হাজারে হাজারে লোক সেদিন এসেছে খেলা দেখতে এবং উইকেন্ডের ছুটি কাটাতে, ফলে পাহাড়ের সরু রাস্তা দিল্লির বদ্‌তমিজ ড্রাইভারদের হাতে পড়ে পুউরো জ্যামপ্যাকড, না যাবার রাস্তা খোলা, না আসার রাস্তা।

বাইশ কিলোমিটার পেরিয়ে আমরা যখন হোটেলে গেলাম তখন রাত নটা বাজে। পরের দুটো দিনও খুব ভালো কাটল না, রাস্তায় থিকথিক করছে ভিড়, ম্যাকলিওডগঞ্জের একটা পাতিস্য পাতি রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে টেবিলের ধারে লাইন দিতে হচ্ছে এই রকমের ভিড় সেদিন, ফেরার সময়েও রাস্তায় আম্বালার টোল গেটে বিশাল জ্যাম এবং দিল্লি ঢোকার মুখে আরও বিশাল জ্যামে পড়ে বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছিল। চার তারিখ বাড়ি ফিরেছিলাম রাত দশটায়, সকাল সাতটায় ম্যাকলিওডগঞ্জ থেকে স্টার্ট করে। মানে, মাত্র পাঁচশো কিলোমিটার চলতে সময় লেগেছে পনেরো ঘণ্টা! মানে অ্যাভারেজ স্পিড সাড়ে তেত্তিরিশ কিলোমিটার ঘণ্টাপ্রতি? কিন্তু এত আস্তে তো আমি চালাই নি! শুধু জ্যামে এমন টাইম খেয়ে নিল? এভাবে চললে তো কলকাতার জার্নি দুদিনে করা চাপ হয়ে দাঁড়াবে!

এদিকে গাড়িও খুব একটা ভালো চলছে বলে মনে হচ্ছিল না। কীরকম যেন একটা ফাঁপা আওয়াজ আসছে বনেটের নিচ থেকে গিয়ার পাল্টাবার সময়ে, ওদিকে গাড়ির স্পিড একশোর কাছাকাছি নিয়ে গেলেই সারা গাড়ি কীরকম থরথর করে ভাইব্রেট করছে, আশিতে নর্মাল চলছে। রাস্তা স্মুথ, এত ভাইব্রেট করার তো কথা নয়! নভেম্বরে গাড়ি নিয়ে সত্যিই বেরোতে গেলে একটা প্রপার সার্ভিসিং করানো দরকার তা হলে।

আমার গাড়িটি ওয়্যাগনআর। ২০০৬এর মডেল। খুব বেশি চালানো হয় না, তাই ন বছরে উনত্রিশ হাজার কিলোমিটারের বেশি চলে ওঠে নি। শহরের রাস্তায় একশো কিলোমিটারের স্পিড ওঠে না – তাই কখনও খেয়াল করি নি এর আগে, কিন্তু এইবারে চালাতে গিয়ে মনে হল অল ইজ নট ওয়েল।

কিন্তু সিকিনী কি যাবে? ভূতো কি যাবে? আমি একা গেলে তো বাইক নিয়েই বেরিয়ে যাবো, সেক্ষেত্রে গাড়ির সার্ভিসিং-এর এক্ষুনি কোনও দরকার নেই, বরং বাইকের জন্য আমাকে কিছু খরচা করতে হবে। সার্ভিসিং, নী গার্ড, ট্যাঙ্ক ব্যাগ উইথ জিপিএস ভিউয়ার। গাড়ি, না বাইক? কী নাচছে আমার কপালে? বাইক, না গাড়ি?

দুর্গাপুজো মিটল। সোসাইটিতে পুজো হয়, আমার ওপর এইবারে পড়েছিল কালচারালের ভার। চারদিন ধরে অমানুষিক খেটে আমার গলায় হল ইনফেকশন, গলা দিয়ে আর আওয়াজ বেরোয় না, তবু সেই গলা নিয়েই খানিক কুঁই কুঁই করে একদিন রাতে সিকিনীর কাছে কথা পাড়লাম।

– ছুটি অ্যাপ্লাই করেছিস?
– আরে ধুর, ও হবে না, বাদ দে। এমনিও ছুটি পাবো না, আর এক এক দিনে সাতশো আটশো কিলোমিটার যাওয়া জাস্ট ইমপসিবল ব্যাপার। দেখলি তো, ম্যাকলিওডগঞ্জ যেতেই কেমন পুরো দিন লেগে গেল?
– কিন্তু, সে তো একে পাহাড়ি রাস্তা, তায় জ্যাম ছিল। যাক গে, যাবি কি যাবি না বল।
– না, আমার আর যাবার মন নেই। বডডো হেকটিক হয়। কী যে তোর ভালো লাগে সকাল থেকে রাত্তির অবধি ড্রাইভিং করতে –
– তা হলে ভূতো …?
– আমি না গেলে ও যাবে কী করে? তুই ওকে সামলাতে পারবি না। গাড়ি চালাবি না সামলাবি? যদি শরীর খারাপ হয়?
– যদি সামলে নিই?
– তা হলে ওকে জিজ্ঞেস কর।

ভূতোকে জিজ্ঞেস করা গেল। মা না-ও যেতে পারে শুনে খানিক দমে গেল, কিন্তু মেয়েটি বড় সহানুভূতিশীল। বাবার মনেও কষ্ট দেওয়া হবে, বোধ হয় এমন কথা চিন্তা করেই, সে বলল, কোনও ব্যাপার না, আমি বাবার সাথে চলে যেতে পারব।

কিন্তু, মেয়ে মানে, তো মা মানে না। অতএব, আমার আবার চিন্তা শুরু হল। বাইক, না গাড়ি? গাড়ি, না বাইক? দুটোরই প্রো এবং কন আছে।

বাইক মাইলেজ দেয় চল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ কিলোমিটার প্রতি লিটারে। গাড়ি সেখানে দেয় – আঠেরো থেকে কুড়ি। জাস্ট অর্ধেক।
যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে ছাড়া আর কোনও টোলে বাইককে পয়সা দিতে হয় না। গাড়িতে সমস্ত টোলে পয়সা লাগে। দিল্লি থেকে কলকাতা টোটাল টোল পড়ে সতেরোশো টাকা, শুধু যেতে। এর পরে পেট্রল ভরার খরচ ইত্যাদি।
একা গেলে সিকিনী আর ভূতোর ফেরার টিকিট ক্যানসেল করতে হবে। হাতে আরও নীট চার হাজার টাকা ফেরত আসবে। তাই দিয়ে অবশ্য গাড়ির টোলের খরচ উঠে যাবে।

তা হলে? গাড়ি, না বাইক? হাতে আর মাত্র দুটো শনিবার আছে। সার্ভিসিং বলো, অ্যাকসেসরিজ কেনা বলো – সবই করতে হবে এর মধ্যে।

মুশকিল আসান করল রাণা। রাণা আলম, আমার ফেসবুক বন্ধু, মেসেজ করে জানালো – বিয়ে করছে ৭ই নভেম্বর। ৮ তারিখ আমি কি বহরমপুরে আসতে পারব?

কিছু কিছু মানুষ থাকে, যাদের ডাকে পাহাড় ডিঙিয়েও যাওয়া যায়, বহরমপুর তো খুব কাছের ব্যাপার। তড়িঘড়ি রাণাকে ফোন করলাম। বললাম, এই ব্যাপার – আমি ৮ তারিখ রাতে বাড়ি পৌঁছচ্ছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে তো আমি হাজির থাকতে পারব না, কিন্তু আমি ৯ তারিখ সক্কাল সক্কাল বহরমপুর গিয়ে তোমাদের সাথে দেখা করে আসব।

বাইকে/গাড়িতে আমি দিল্লি থেকে আসছি – মূলত এইটুকু শুনেই ফোনের মধ্যে রাণা তিন চারবার খাবি খেয়ে ফেলল। তার পরে বলল, শোনো, এত চাপ নিতে হবে না, তুমি পারলে এসো, না পারলেও আমি কিচ্ছু মনে করব না, তুমি যে আসতে চেয়েছো, এতেই আমি যারপরনাই মুগ্ধ। শুধু আমার জন্য এক্সট্রা চাপ নিতে হবে না।

খোকাকে বোঝানো মুশকিল যে রাইডিং বা ড্রাইভিং আমার কাছে “চাপ” নয়, বরং রিফ্রেশিং। কিন্তু আমি তখন দিশা পেয়ে গেছি, উত্তর পেয়ে গেছি আমার প্রশ্নের। বাড়ি যাবার তা হলে এখন একটা নয়, একাধিক কারণ হল। কালীপুজো, ভাইফোঁটা, পারলে গুরুর বন্ধুদের সাথে কলকাতায় একটা ভাট সাথে খ্যাঁটন, এবং, রাণার সাথে দেখা হওয়া, মিসেস রাণার সাথে আলাপ করা। আর, বিয়ে উপলক্ষ্যে যাওয়া, খালি হাতে কি যাওয়া যায়? একটা তো উপহার কিনে নিয়ে যেতে হয়। আর উপহার সমেত লাগেজ নিয়ে বাইকে যাওয়া একেবারেই পসিবল নয়। সুতরাং, আইদার দিস অর দ্যাট, আমি গাড়িতেই যাচ্ছি।

পরদিন সক্কাল সক্কাল গাড়িটা সার্ভিসিং-এ দিতে গেলাম, আর সিকিনী-ভূতোকে জানিয়ে গেলাম, এইবারে তোদের কাছে দেড় সপ্তাহ সময়, আরাম সে ঠিক কর। আমি কোনও চাপ দেব না। তোরা যাস বা না যাস, গাড়ি যাবে, আমি যাবো। বারাণসীতে হোটেল বুক করা আছে যাওয়া এবং আসার, তোদের ফেরার টিকিট বুক করা আছে রাজধানী এক্সপ্রেসে। সমস্ত অপশন দিয়ে দিলাম, নাউ কল ইজ ইওর্স।

সিকিনী বোধ হয় এতটার জন্য তৈরি ছিল না। বার বার জিজ্ঞেস করতে লাগল, সত্যি যাবি? পারবি এতটা যেতে? শিওর তো? আমি তা হলে ছুটির জন্য কথা বলব।

সিকিনীর গালটা আলতো করে টিপে দিলাম আমি, ভরসা করে দ্যাখ, ঠকবি না। আমি পালটে গেছি সেটা তুই জানিস, কিন্তু কতটা পাল্টেছি, সেটা দেখবার এই সুযোগ। দ্যাখ – অফিসে কথা বলে।

মারুতির সার্ভিস সেন্টারে গিয়ে গাড়ির সমস্যাগুলোর কথা বললাম। সার্ভিস ইঞ্জিনীয়ার আমাকে নিয়ে টেস্ট ড্রাইভ করে খুব চিন্তিত মুখে গাড়িটাকে ওয়ার্কশপে নিয়ে গেল। ওয়ার্কশপে যে রকমের চ্যানেল থাকে, নিচটা ফাঁকা, দুদিকের সাপোর্টে চাকা প্লেস করে গাড়ির নিচে চলে যাওয়া যায়, সেইখানে গাড়ি নিয়ে দাঁড় করিয়ে নিচে গেল ইঞ্জিনীয়ার। সেইখান থেকে আমাকে ইশারা করে ডাকল নিচে।

নিচে গিয়ে যা দেখলাম, তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। জং লেগে বনেটের নিচে পুরো লোহার ফ্রেম গলে অর্ধেক হয়ে গেছে। হাত দিলে ঝুরঝুর করে জং পড়ছে। ওর ওপরেই চাপানো আছে ইঞ্জিন সমেত সমস্ত কলকব্জা। যে কোনও মুহূর্তে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত ওই লোহার বিম ভেঙে গেলে, আর সেই অবস্থায় আমি পাহাড়ের ভাঙাচোরা রাস্তায় চালিয়ে এনেছি এই গাড়ি!

ইঞ্জিনীয়ারকে বললাম, পুরো বিম চেঞ্জ করান। আর, পরের পরের সপ্তাহে আমি এই গাড়ি নিয়ে বাই রোড কলকাতা যাবো, সমস্ত দিক দিয়ে একদম ফিট করিয়ে দিন গাড়িটাকে।

লোকটা বরাভয় দেখিয়ে বলল, চিন্তা করবেন না, একদম ফিট বানিয়ে দেব, তবে চারদিন মত রাখতে হবে গাড়িটা। আমরা সবকিছু টেস্ট করে তারপরে ছাড়ব।

আমি বললাম, এক সপ্তাহ রাখুন, চাপ নেই।

পাঁচ দিনের মাথায় গাড়ি ফেরত পেলাম গুণে গুণে আট হাজার টাকা দিয়ে। আবার আমাকে নিয়ে গাড়ির তলায় গিয়ে সমস্ত দেখাল, আর বলল, হাইস্পিডে গাড়ি ভাইব্রেট করছিল এই কারণেই, সাপোর্ট লুজ হয়ে গেছিল। এইবারে যত খুশি স্পিড তুলুন, গাড়ি আর কাঁপবে না।

পাঁচ তারিখে, জার্নি শুরু হবার ঠিক দুদিন আগে, সিকিনী জানাল – তার ছুটি কনফার্ম হয়েছে। বস অনেক কথা শুনিয়েছে, কিন্তু লোকটা ভালো, ছুটি ক্যানসেল করে দেয় নি।

আমার ছুটি সেই জুলাই মাস থেকেই অ্যাপ্রুভ করানো ছিল, এইবারে আমি আর আগের বারের মত রিস্ক নিই নি। অতএব, সন্ধ্যেবেলায় সিকিনী আর ভূতোকে নিয়ে বসলাম প্ল্যান ফাইনাল করতে। মূলত – ওদের মানসিকভাবে জার্নির জন্য তৈরি করতে। বেসিকগুলো জেনে রাখা দরকার।

আমাদের জার্নি হবে দুটো ভাগে। একসাথে যে হেতু দেড় হাজার কিলোমিটার যাওয়া সম্ভব নয়, (অসম্ভবও নয়, ননস্টপ কলকাতা থেকে দিল্লি এসেছে এমন লোককেও আমি চিনি – কিন্তু আমি সে পথে হাঁটছি না) তাই প্রথম দিনে আমরা যাব আটশো কিলোমিটার, বেনারস। রাস্তা ভালো, কিন্তু যতই ভালো হোক – দূরত্বটা যেহেতু বিশাল, তাই আমাদের বেরোতে হবে সকাল সকাল। ভোড় চারটেয় টার্গেট রাখব, সাড়ে চারটের বেশি দেরি করব না স্টার্ট করতে।

প্রথম ক্রুশিয়াল পার্টটা হচ্ছে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে। যেটা আমরা জানি, দুশো কিলোমিটার সুপারস্মুথ। যদি দু থেকে আড়াই ঘণ্টায় ওই দুশো কিলোমিটার পেরিয়ে আসতে পারি, তা হলে পরের ছশো কিলোমিটারের জন্য চাপ কম থাকবে।

ফলে, আমাদের কম স্টপ নিতে হবে। খুব দরকার ছাড়া থামব না। চিড়েভাজা করে নাও, ডিমসেদ্ধ করে নাও, দরকার হলে ফ্লাস্কে গরম চা নিয়ে চলো, রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড় করাব, গাড়িতে বসেই ব্রেকফাস্ট করব, তার পরে আবার দৌড়। লাঞ্চ, টয়লেট আর পেট্রল ভরা – এই তিনটে কারণ ছাড়া আমরা থামব না। নিতান্ত যদি না কারুর শরীর খারাপ করে।

ওয়্যাগন আরের ট্যাঙ্ক ক্যাপাসিটি পঁয়ত্রিশ লিটার। মাইলেজের হিসেবে ফুল ট্যাঙ্কে খুব বেশি হলে পাঁচশো কিলোমিটার যাওয়া যেতে পারে। মানে, মাঝে একবার দাঁড়াতেই হবে তেল ভরার জন্য।

পরের দিনের জন্য রইল বাকি সাতশো কিলোমিটার। না, ঠিক সাতশো নয়, সাড়ে ছশো, কারণ আমরা কলকাতা যাবো না, যাবো ব্যান্ডেল, যেটা কলকাতা থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটার আগে পড়বে। আবার সক্কাল সক্কাল, বেশি নয়, সকাল ছটা নাগাদ স্টার্ট করতে পারলে বেলা দশটা নাগাদ বিহার, একটা নাগাদ ঝাড়খণ্ড ক্রস করতে পারব। ঝাড়খণ্ড পেরোলেই পশ্চিমবঙ্গ। সাড়ে তিনটের সময়ে শক্তিগড়ে পৌঁছে আমরা লেট লাঞ্চ করব। কচুরি ছোলার ডাল আর ল্যাংচা। ব্যাস, তার পরে বাড়ি পৌঁছতে আর এক থেকে দেড় ঘন্টা খুব বেশি হলে। সন্ধ্যের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে রেস্ট নিতে পারব।

আমার নিজেরও তাড়াতাড়ি বাড়ি পৌঁছনোর প্ল্যান ছিল, কারণ পরদিন বহরমপুর যেতে হবে, রাণার বাড়ি। একটা ট্রেন আছে ভোর সাড়ে চারটেয় নৈহাটি থেকে, সকাল সাড়ে আটটায় বহরমপুর পৌঁছয়। সেটা ধরতে হবে। মানে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে ভোর সাড়ে তিনটেয়। তিনটে পঞ্চান্নতে গৌড় কিংবা চারটে দশের ব্যান্ডেল নৈহাটি লোকাল ধরে নৈহাটি স্টেশন, তার পরে লালগোলা প্যাসেঞ্জার। ওটা না পারলে নৈহাটি থেকে পরের ট্রেন আটটা পঞ্চাশে, সেটা বহরমপুর ঢুকবে বারোটা চল্লিশে।

দেখি, কখন পৌঁছনো যায় – সিকিনীকে বললাম, আমরা সব্বাই শুক্রবার তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ব, কারণ ভোর চারটেয় বেরোতে গেলে তিনটেয় উঠতে হবে। এখন হাল্কা ঠাণ্ডা পড়ে গেছে, সকালে চান করার চাপ না নিয়ে বেনারসে সন্ধ্যেবেলায় পৌঁছে চান করা যেতে পারে। গোছগাছ এখন থেকেই সেরে রাখতে হবে।

দিল্লি-কলকাতা রোড ট্রিপের নেশা এইবারে এদের মধ্যে হাল্কা করে লেগে গেছে – দুজনেই রাজি হয়ে গেল।

অল্‌ সেট।


8 thoughts on “একটি অতিসাধারণ ভ্রমণকাহিনি – প্রথম পর্ব

  1. “রাণা আলম, আমার ফেসবুক বন্ধু, মেসেজ করে জানালো – বিয়ে করছে ৭ই নভেম্বর। ৮ তারিখ আমি কি বহরমপুরে আসতে পারব?”
    এইটার জন্যই লেখাটাকে ক্ষমা করতে পারছি না…
    হেব্বি… বাকিটা কই????

    Liked by 1 person

  2. আপনার ‘লাজবাব দিল্লি’ আমার দারুন লেগেছিল। পুরো বইটাই পড়েছি। আপনি যে ব্লগ লেখেন জানতাম না। ইনটলারেন্স নিয়ে আপনার লেখাটা রাণাদা শেয়ার করেছিল। সেই সূত্রে জানলাম। তারপর থেকে ব্লগের লেখাগুলো একটা একটা করে পড়ছি। ভালো লাগছে। আমার এক গাড়িপাগল বন্ধু আছে। বাইক চালিয়ে লাদাখ যাওয়াটা তার একরকম স্বপ্ন। তাকে আপনার লেখাগুলো পড়াবো।

    Like

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.