একটি অতিসাধারণ ভ্রমণকাহিনি – দ্বিতীয় পর্ব

পর্ব ১ -এর পরে

যাকেই বলছি, প্রত্যেকে বলছে, আপনার হাজব্যান্ড কি পাগল? এত অপশন থাকতে কেউ গাড়ি চালিয়ে কলকাতা যায়? খরচা তো অনেক বেশি পড়বে!

যাকেই বলছি, প্রত্যেকে জিজ্ঞেস করছে – আপনি বারাণসীতে গিয়ে কাশী বিশ্বনাথকে দর্শন করবেন না? এমনি এমনি গিয়ে বেরিয়ে যাবেন?

যাকেই বলছি, প্রত্যেকে জিজ্ঞেস করছে …

এখন আর ঘাবড়াই না। আগে খুউব সন্দেহ হত। সবাই কি সুস্থ মানসিকতার? আমি একাই কি পাগল? যাকেই শোনানো হচ্ছে – সবাইই এই রকম বলছে? কই, আমিও তো কিছু কিছু লোকের সাথে আমার প্ল্যান শেয়ার করি, আমাকে তো কেউ এ রকম করে বলে নি! তা হলে এই “যাকেই”-এর স্যাম্পল সাইজ কত? অ্যাকচুয়েলি, কারা এই “যাকেই”?

ওপরের কথাগুলো সিকিনীর বয়ানে শোনা। এ রকম অনেক বার “যাকেই বলছি” সিরিজ আমি অজস্রবার শুনেছি গত তেরো বছরের বিবাহিত জীবনে। আমার কোনও প্ল্যান, আমার কোনও সিদ্ধান্ত সিকিনীর মনঃপুত না হলে সিকিনী এই অস্ত্রটা প্রয়োগ করে। মানে আমার সিদ্ধান্তটা ভুল – সেটা একমাত্র সিকিনীরই মনে হচ্ছে না, ওর মতন “যাকেই”-এর দলও ভুল মনে করছে, এর অনুসিদ্ধান্ত – আমার সিদ্ধান্ত পালটানো উচিত। আসলে হয় তো খুব বেশি হলে একজন বলেছে, তাও হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলাতে গিয়ে, সেইটা বাড়ি এসে আমার কাছে ব্যাখ্যান করার সময়ে একটু বিরিয়ানি হয়ে যায় আর কি। মানে ধরুন, কেউ যদি অফিসে বসে তার কলিগকে বলে, “আমার হাজব্যান্ডটা কী পাগলা দেখুন, বলে কিনা গাড়ি চালিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতা যাবে। কী পাগলামি, না?” – তখন উল্টোদিকের কলিগ কি কখনওই বলবে, না না, আপনার হাজব্যান্ড খুবই সুস্থ, একটু অ্যাডভেঞ্চারাস আর কি …? সে জাস্ট কথা শেষ করার তাগিদে বলবে “বটেই তো, বটেই তো, কী পাগলামি!”

সিকিনীর কেসটাও সে রকম। ডিসকারেজিত হবার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমি এ রকম “যাকেই বলছি” শুনেছি এবং শুনে থাকি। এই “যাকেই”-রা কখনও আমার প্রতিবেশিরা হন, কখনও তার অফিস কলিগরা হন, কখনও তার আত্মীয়স্বজনরা হন। তো, আমি এখন এই বক্তব্যসমূহে একেবারে ডিমোটিভেটেড হই না। আগে খুব রেগে যেতাম, জিজ্ঞেস করতাম, কে কে বলেছে এমন কথা, আমাকে নাম বল, কিংবা ওদের আমার ফোন নম্বর দিয়ে একবার বল সরাসরি আমাকে ফোন করে কথা বলতে, বা আমার সামনে এসে একবার বলতে বল। ধীরে ধীরে বুঝেছি, ইহা নিতান্তই সিকিনীর আপন মনের মাধুরী। “যাকেই বলছি”-রা আসলে কোথাও থাকে না।

আবার থাকেও। সে গল্পে পরে আসছি।

শুক্রবার আমি আপিস যাই না – বাড়িতে বসে ল্যাদ খাই। ইংরেজিতে বলে ওয়ার্ক ফ্রম হোম – কিন্তু আমার অফিসে কোনও কাজ নেই, আমি ঘরে কিংবা অফিসে জাস্ট বসে থাকার জন্য মাইনে পাই। তো শুক্রবার ছিল ওয়ার্ক ফ্রম হোম। তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ার ছিল, কিন্তু সেইদিন সিকিনী অফিস থেকে ফিরলই রাত পৌনে নটায়। কাজ সেরে জ্যাম ঠেলে আসতে দেরি। এর পর শেষ মুহূর্তের গোছগাছ, খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি সেরে ঘুমোতে যেতে সেই সাড়ে এগারোটাই বাজল। তিনটেয় ওঠা খুবই চাপ, আমি তাই সাড়ে তিনটেয় অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমোতে গেলাম। যদিও ঘুম আসতে আসতে ক্যালেণ্ডারে তারিখ পালটে গেছিল।

বেরোবার সময়ে আমার উঠতে একটুও দেরি হয় না, যদিও এমনিতে আমি একেবারেই আর্লি রাইজার নই। সাড়ে তিনটেয় উঠে হাল্কা করে চিড়ে-বাদাম ভাজা হল, এক রাউন্ড চা হল। ওরা যতক্ষণে রেডি হচ্ছে, ততক্ষণে আমি নিচে গিয়ে গাড়িতে কিছু লাগেজ রেখে এসেছি। আগের দিন ট্যাঙ্ক ফুল করে রাখা আছে। সাড়ে চারশো কিলোমিটার এমনিতেই চলে যাবে – মাঝে একবার আবার ভরতে হবে।

ঠিক পাঁচটায় আমাদের গাড়ি স্টার্ট করল। ভূতো তো পেছনের সীটে বসেই কাত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। সিকিনী সামনের সীটে। ওডোমিটারের রিডিং নিলাম – ২৯৫০৬ কিলোমিটার। আনন্দ বিহার – গাজীপুর – নয়ডা মোড় – ময়ূর বিহার – নয়ডা ফিল্ম সিটি ছাড়িয়ে গাড়ি এক্সপ্রেসওয়েতে পড়ল ঠিক পাঁচটা পঁচিশে। তখনও আকাশ অন্ধকার। দিল্লিতে এমনিতেই সকাল দেরিতে হয়, তার ওপর এখন তো শীতের শুরু। ভিজিবিলিটি চমৎকার।

এক্সপ্রেসওয়ে একেবারে ফাঁকা। স্পিড বাড়িয়ে দিলাম, কিন্তু কাঁটা একশো ছুঁতেই গাড়ি আবার কেমন থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। তাড়াতাড়ি স্পিড নামিয়ে নিলাম নব্বইতে। গাড়ি এবার স্টেডি। কেন এমন হল? বনেটের ফ্রেম বিম সমস্ত নতুন লাগানো হয়েছে, আমি নিজে দেখে নিয়েছি, তাও গাড়ি কেন কাঁপছে? এমনিতেও আমি একশোর ওপর উঠতাম না, বেরোবার আগে নিজের কাছে নিজে প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছি, যত খালি রাস্তাই হোক, গাড়ি একশোর ওপর চালাবো না, কিন্তু এই এক্সপ্রেসওয়েতেও যদি একশোর নিচে চালাতে হয়, তা হলে তো টাইম মেনটেন করা চাপ হয়ে যাবে। … তা হলে কি চাকার অ্যালাইনমেন্টে গড়বড় আছে? একমাত্র ওটাই আমি চেক করি নি। তাই হবে হয় তো।

নব্বইয়ের স্পিডে চলতে চলতে একসময়ে পূবদিক লাল করে সূর্য উঠল।

dsc_0193

আর তখনই দেখতে পেলাম সামনের সাইনবোর্ডে লেখা – কলকাতা ১২৮৬ কিলোমিটার। আগ্রা আর মাত্র ৫০ – মানে প্রায় দেড়শো কিলোমিটার মেরে দিয়েছি।

dsc_0196

একটু পরেই এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হল, ঘড়িতে তখন বাজে সাড়ে সাতটা। অ্যাজ এক্সপেক্টেড, আড়াই ঘন্টায় দুশো কিলোমিটার টেনে দিয়েছি। নট ব্যাড। গাড়ি সাইড করে হাল্কা ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। ডিমসেদ্ধ, চিড়েভাজা, বিস্কিট। তার পরে আবার জার্নি শুরু।

এর পরে ফিরোজাবাদ, টুন্ডলা ইত্যাদি ছোটখাটো জায়গা পেরিয়ে ইটাওয়া। আগ্রা থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার। রাস্তা আর ততটা ভালো নয়, জায়গায় জায়গায় রাস্তার ওপরেই লোকালয়, বাজার বসছে, একটা দুটো ম্যানুয়াল ক্রসিং, তবু দেড় ঘণ্টার মধ্যেই ইটাওয়া পৌঁছে গেলাম। একটা মাঝারি সাইজের ফ্লাইওভার খানিকটা মুক্তি দিল শহরের জ্যাম থেকে, ফ্লাইওভারের ওপর থেকে দুদিকে দেখে বুঝলাম কেন এটাকে ইটাওয়া বলে।

চারদিকে ইঁটের বাড়ি, আর একটা বাড়িরও বাইরে প্লাস্টার করা নেই। লাল লাল ইঁট দুধারে সর্বত্র দাঁতমুখ খিঁচিয়ে বিরাজমান। দোতলা, তিনতলা, চারতলা – সব ইঁট বের করা বাড়ি। কুৎসিত একটি উত্তরপ্রদেশীয় টাউন। কিন্তু রাস্তা লা-জবাব। মাঝে দু একটা খারাপ প্যাচ আছে বটে, কিন্তু ওভারঅল স্মুথ রাস্তা, কংক্রিট, কিংবা অ্যাসফল্ট। রাস্তার দুধারে এই অসময়েও দুলছে প্রায় শুকিয়ে আসা একতলা বাড়ি-সমান উঁচু কাশের বন। তারই মাঝে চোখে নীল গগোলস লাগিয়ে, ফাটিয়ে একটি পোজ দিয়ে দিলাম গাড়ির সাথে।

dsc_0201

দেখতে দেখতে কানপুর এসে গেল, প্রায় দুপুর হয়ে এসেছে।

একটা সময়ে কানপুর পেরনো খুব ঝক্কির ব্যাপার ছিল। খুব ঘনবসতিপূর্ণ শহর। কিন্তু এখন সমস্ত কানপুর শহরের ওপর দিয়ে চলে গেছে একটি ইয়া লম্বা ফ্লাইওভার। প্রায় ৩০ কিলোমিটার লম্বা একটা এলিভেটেড রোড। এখন কানপুর সিটি পেরোতে সময় লাগে ঠিক পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট। এটা এখন এশিয়ার অন্যতম বড় ফ্লাইওভার।

অনেক ট্র্যাভেলগ পড়ে এসেছি, জানাই ছিল যে আগ্রা পেরিয়ে বাকি উত্তর প্রদেশের ওপর দিয়ে যাবার সময়ে খুব সাবধানে যেতে হয়, কারণ অজস্র গ্রাম পড়ে রাস্তার দুধারে, এবং গ্রামের লোকেদের মাঝখানে ডিভাইডার লাগানো বোথ সাইড ক্যারেজওয়ে সম্বন্ধে প্রায় কোনও ধারণাই নেই। যে কোনও সময়ে দেখা যাবে উল্টোদিক থেকে আসছে একটা ট্রাক, কিংবা ট্রাকটর, কিংবা মোটরসাইকেল। হেডলাইট না জ্বালিয়ে, হেলমেট না পরে, প্রায়শই একটা মোটরসাইকেলে পাঁচজন সওয়ারি চেপে – এবং রাস্তার কর্নার ধরে আসারও কোনও গল্প নেই, কেউ কর্নার ধরে আসছে, কেউ মাঝের লেন ধরেই উল্টোদিক থেকে আসছে, যে যেমন পারে আর কি। উত্তরপ্রদেশ আফটার অল। নিজেকেই সাবধান হয়ে চালাতে হবে।

গাড়িতে চলছে বর্ন ফ্রি, ই.টি., টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লীগস আন্ডার দা সী। ভূতো একবার ঘুম থেকে উঠে দুটো সিনেমা পরপর দেখে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আর সিকিনী বসে বসে গপ্পো করে যাচ্ছি। আমি চালাচ্ছি, সিকিনী টুকটাক ফটো তোলার চেষ্টা করছে।

dsc_0203

dsc_0205

কানপুর পেরিয়ে এসে রাস্তার ধারে একটা ধাবায় থামলাম লাঞ্চ করার জন্য। লোকটি ভরদুকুরেই কিঞ্চিত চড়িয়ে ছিল মনে হল, প্রয়োজনের বেশি কথা বলে যাচ্ছিল। মেনু ফেনু কিছু নেই, এই আছে, ওই আছে – খানিক খাওয়াদাওয়া করলাম, খুব একটা খাদ্যযোগ্য ছিল না সে-সব, লোকটা কী জানি কীসের পুলকে, কলে পাইপ লাগিয়ে আমাদের গাড়িটাকে বেশ ভালো করে ধুইয়ে দিল।

শুরু করলাম প্রায় পৌনে তিনটের সময় আবার। নিজেদের খাওয়া হয়েছে, এইবারে গাড়ির ফুয়েল মিটার বলছে গাড়িরও খাবার সময় হয়েছে। খানিক বাদে ঢুকলাম একটা ভদ্রগোছের পেট্রল পাম্পে, ট্যাঙ্ক ফুল করে নিলাম, নিজেরাও অল্পস্বল্প হাল্কা হয়ে নিলাম। পরের জংশন হচ্ছে এলাহাবাদ। এখানেও একটি আশি কিলোমিটার লম্বা বাইপাস আমাদের সযত্নে মূল এলাহাবাদ শহরের পাশ কাটিয়ে নিয়ে যাবে – অবশ্য তার জন্যে একটা বড় অঙ্কের টোল দিতে হবে। তা সে টোল তো দিয়েই আসছি, কত জায়গায় যে থামতে হল টোল দেবার জন্য।

বড় বড় ট্রাক চলেছে, পিঠে গণ্ডাখানেক ট্রাক্টর বেঁধে।

dsc_0206dsc_0209

এলাহাবাদ বাইপাস পেরোতেই ঝুপ করে সুর্য ডুবে গেল, আর অন্ধকার নেমে এল হাল্কা করে।

dsc_0213

জিপিএস সেট করাই ছিল। বারাণসীর কাছে এসে কোন ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে আমাদের বাঁদিকে টার্ন নিতে হবে, সেটা জানার জন্য আমাদের কাউকেই জিজ্ঞেস করতে হল না। আর সেইখানেই হল বিপত্তি। গুগুল ম্যাপ হাইওয়েগুলো যত সহজে লোকেট করে দেয়, শহরের মধ্যে রাস্তাঘাট ডেস্টিনেশন তত সহজে লোকেট করতে পারে না। ম্যাপ সবসময়ে শর্টেস্ট রুট খোঁজার চেষ্টা করে, সেটা গাড়ি চলবার উপযুক্ত হোক বা না হোক। সেই একবার সারিস্কা যেতে গিয়ে এই বিপত্তি হয়েছিল, গাড়ি নিয়ে একেবারে কার যেন গোয়ালে ঢুকে পড়েছিলাম। এইবারে হল বারাণসীতে। একে তো এমন অদ্ভূত একটি শহর, এখানে বড়রাস্তার চেয়ে গলির সংখ্যা বেশি। তার ওপর কোথাও কোনও স্ট্রিটলাইট নেই। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত, সন্ধ্যে নামার পরে বুঝতে পেরেছি, ওয়ার্কশপ থেকে ফিরে আসার পরে গাড়ির বাঁ দিকের হেডলাইটটা আর কাজ করছে না। ডিপার দুটোই জ্বলছে, কিন্তু মেন বীম বাঁদিকেরটা বন্ধ। একটা হেডলাইটের ভরসায় চলা খুবই কষ্টকর, তাই ডীপার অন করে চলতে থাকলাম, এবং খানিক বাদেই আবিষ্কার করলাম, আমি একটা তুমুল সরু গলির মধ্যে চালাচ্ছি, সামনে কয়েকটা গরুর গাড়ি আর ট্রাক্টর, উল্টোদিক থেকে সাঁইসাঁই করে ছুটে আসছে মোটরসাইকেল আর মারুতি অল্টো বা এইট হান্ড্রেড।

একটা লেভেল ক্রশিং পড়ল। আমি এইবারে আর জিপিএসে ভরসা না করে লোককে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, হ্যাঁ দাদা, বারাণসী ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনটা কোনদিকে পড়বে? আমাদের বুকিং আছে রাহী ট্যুরিস্ট বাংলোতে – ইউপি ট্যুরিজমের বাংলো, তার ল্যান্ডমার্ক হচ্ছে, ঠিক বারাণসী ক্যান্ট স্টেশনের সামনের গলিতে।

লোকটি খুব চিন্তা করে বলল, আপনারা তো ভুল রাস্তায় এসেছেন, এখান থেকে গাড়ি ব্যাকও করতে পারবেন না, বরং এগিয়ে যান এই পাঁচিল বরাবর, ডানদিকে মুড়ে যান, আর্মি ক্যান্টনমেন্ট পড়বে, ওখান থেকে একটু এগোলেই ক্যান্ট স্টেশন।

জয় গুগুল বলে এগোলাম, পাঁচিল বরাবর এগিয়ে মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টেও পৌঁছলাম, তারপরে আরও দুবার এদিক ওদিক গোঁত্তা খেয়ে ঠিক স্টেশনের কাছে এসে পৌঁছলাম। পাঁচিলের ওইপারেই রেললাইন। ট্রেন আসছে, সিটি দিচ্ছে। কিন্তু হোটেল কই? শুনেছিলাম যে মেন রোডের ওপর লাইন দিয়ে হোটেল আছে? এ তো ফাঁকা একটা সরু রাস্তা!

এইবার একটা রিক্সাওলাকে ধরলাম। সে বলল, আপনারা ক্যান্ট স্টেশনে এসেছেন ঠিকই, কিন্তু এটা হল স্টেশনের পেছনের দিক। হোটেল আছে সামনের দিকে। আপনারা এইখান দিয়েই ফিরে যান, “সিধা” গিয়ে চৌকা-ঘাট পড়বে। সেখান থেকে ডানদিকে ঘুরলেই স্টেশনের সামনে পৌঁছে যাবেন।

ট্র্যাভেলগে পড়েছিলাম বারাণসীর লোকেদের “সিধা জাইয়ে”-র গল্পটা। রাস্তা হয় তো এঁকেবেঁকে গেছে ডানদিকে, তারপরে বাঁদিকে। কিন্তু যতক্ষণ না রাস্তায় কোনও ব্র্যাঞ্চিং নেই, ততক্ষণ পর্যন্ত বারাণসীর ভাষায় আপনাকে “সিধা” যেতে হবে।

আবার দুবার গোঁত্তা খেলাম। এক জায়গায় দেখি ওয়ান ওয়ে, এবং আমরা এসেছি উল্টোদিক থেকে। এগনো সম্ভব নয়। আবার একটা দোকানে জিজ্ঞেস করলাম, এবং সেই একই ডিরেকশন পেলাম, ব্যাক করে এই রাস্তায় সিধে যান চৌকা-ঘাট, তার পরে ফ্লাইওভারের তলা দিয়ে ডানদিকে।

জিপিএস অফ করে দিলাম। গাড়ি ঘুরিয়ে একটু একটু করে এগোই আর লোককে জিজ্ঞেস করি। খানিক বাদে একটা প্রচণ্ড জমজমাট মোড়ে এসে পৌঁছলাম, আর পৌঁছেই মনে হল পুউরো পৌরাণিক যুগে পৌঁছে গেছি। মোড়ের ডানদিকে পেল্লায় প্যান্ডেল, তারস্বরে “জয় গঙ্গে মাতা” বাজছে, তারপরে তড়িঘড়ি সেটাকে বন্ধ করে একজন বাজখাঁই গলায় ঘোষণা করে উঠল, “হমারে মহারাজ জি আ গিয়ে হ্যাঁয়, বহোত দূর সে আয়ে হ্যাঁয়, আভি ও সিংহাসন মে আরোহণ কর রহে হ্যাঁয়। আভি হমারে পরম পূজনীয় মহারাজ জি-কা অভিষেক শুরু হোগা, ম্যায় বাকি মহারাজোঁ সে বিন্‌তি করতা হুঁ কি বো হমারে ইস অভিষেক প্রক্রিয়া মে পূর্ণ সহযোগ করেঁ। মহারাজ জি সিংহাসন মে আরোহিত হো চুকে হ্যাঁয়।

কোন্‌ মহারাজের রাজ্যাভিষেক হচ্ছে রে ভাই? এ তো মোদী মহারাজের “ক্‌ষেত্র” বলে জানতাম। মুণ্ডু বাড়িয়ে দেখার আগেই পুলিশ এসে পিপ্‌-পিপ্‌ করে বাঁশি বাজিয়ে আমাকে মোড় থেকে তাড়িয়ে দিল, নাকি আমার জন্য জ্যাম হচ্ছিল। হুঃ, গুল মারার জায়গা পায় নি। বারাণসীতে এমনি এমনিই জ্যাম লেগে থাকে, চব্বিশ ঘণ্টা, অষ্টপ্রহর।

আবার এগোলাম। দু চারজনকে জিজ্ঞেস করে ঠিক পৌঁছে গেলাম এবারে। সাদা রঙের বারাণসী ক্যান্ট স্টেশন, তার ঠিক উল্টোদিকেই প্রতাপ হোটেল, আর তার পাশ দিয়ে ঢুকে গেছে গলি।

সেই গলির ভেতর সারিসারি হোটেল, তার মাঝ দিয়ে আরেকটি গলি। সেই গলির শেষে একটি বিল্ডিং, সামনে লেখা টুরিস্ট বাংলো, উত্তরপ্রদেশ সরকার। অবিশ্যি গলি মানে, সরু রাস্তা। গাড়ি ঢোকা বেরনোর জায়গা আছে। ভেতরে পার্কিং-ও আছে।

সাড়ে ছটায় বারাণসী শহরে ঢুকেছিলাম, হোটেলে ঢুকলাম পৌনে আটটায়।

কত প্ল্যান ছিল, দশাশ্বমেধ ঘাট যাবো, রাবড়ি খাবো, প্যাঁড়া খাবো, কিসুই হল না।


বেরোন হল। কিন্তু, রাবড়ি নয়, প্যাঁড়া নয়। সিকিকে প্রথম যেতে হল একটি পানের দোকানে। … কী ভাবছেন? খাইকে পান বনারস-ওয়ালা? নাঃ, সিকি পানাসক্ত নয় একেবারেই।

তবে? শুনুন গপ্পো।

হোটেলে ঢুকে রুম দেখে নিচে এসেছি গাড়ির কাছে, ডিকি থেকে সুটকেসটা বের করে ওপরে নিয়ে যেতে হবে। ডিকি খোলার পরেই হঠাৎ বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে একটা শক লাগার মত তীব্র ব্যথা, তারপরেই আঙুলটা হু-হু করে জ্বলতে লাগল। আঙুলের ওপরে একটা কালচে লাল বিন্দু, টোবা হয়ে ফুলে উঠেছে।

হুল ফুটিয়েছে কিছুতে, অন্ধকারে ছিল। সাথে সাথে আঙুলের ওই জায়গাটা টিপতে থাকতাম। দু বিন্দু রক্তও বেরোল। সিকিনী বলল, রক্ত বেরোলে চিন্তার কিছু নেই, বিষ ভেতরে যায় নি। কিন্তু বিষ ভেতরে গেলে খানিকক্ষণের মধ্যেই জ্বর আসবে। যদিও খালি চোখে দেখে হুল টুল কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। এখন এর এক ও একমাত্র ওষুধ, চুন। আর বেনারসে শয়ে শয়ে পানের দোকান, এখানে চুনের অভাব? তাই ডান হাতে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল চেপে ধরে একটু এগোতেই একটা পানের দোকান পেয়ে গেলাম, অতঃপর ক্ষতস্থানে চুন লেপন এবং খানিকক্ষণের মধ্যেই জায়গাটা ঠাণ্ডা হয়ে ব্যথা মরে গেল।

একটু ফ্রেশ হয়ে পৌনে নটা নাগাদ বেরোলাম। শুনেছি দশাশ্বমেধ ঘাট এখান থেকে খুব দূরে নয়, রিক্সায় তিরিশ টাকা নেয়। একবার তো দেখে আসি। আর কিছু না দেখলেও চলবে। বেশি দেরি হলে ওখানেই রাতের খাবার কিছু খেয়ে আসব।

একটা ব্যাটারি রিক্সা নিলাম। পাগলের মত ট্র্যাফিক, সবাই তারস্বরে হর্ন বাজাচ্ছে আর ভিড়ের মধ্যেই উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়চ্ছে। তার মধ্যেই কেমন ডজ করে এদিক ওদিক বেঁকিয়ে রিক্সাওলা আমাদের গোধূলিয়া মোড়ে পৌঁছে দিল। রাস্তা খুব একটা কম নয়, যা দেখলাম।

কিন্তু এ তো রাস্তার মোড়, ঘাট কোথায়? রিক্সাওলা সামনে ব্যারিকেড লাগানো একটা গলির দিকে হাত দেখিয়ে বলল, এইটাই দশাশ্বমেধ ঘাট যাবার রাস্তা, এর পরে আর গাড়ি যায় না, সামনেই হেঁটে চলে যান।

রাত সোয়া নটা, কিন্তু কে বলবে রাত হয়েছে? থিকথিক করছে লোক। দুধারে সারি সারি দোকান, কাপড়জামা, বাসনকোসন, মিষ্টি-নমকিন। এমনি একটা দোকানে ঢুকে বললাম, প্যাঁড়া খাবো। সে আমাদের দুটো শালপাতার বাটিতে করে দুটো করে প্যাঁড়া দিল। মুখে দিয়েই থু-থু করে ফেলে দিতে হল। রামোঃ, কী বিচ্ছিরি টেস্ট। এই জিনিস লোকে খায় কী করে? মুখের টেস্ট ফেরাতে একটা করে সিঙারা খেলাম, সেটাও তেমনই বাজে খেতে।

ধুত্তেরি বলে বেরোলাম, আর বেরোতেই দেখি রাস্তার উল্টোদিকের বাড়িটায় ওপরে একটা বিশাল লাল রঙের রঙচটা সাইনবোর্ড, তাতে লেখা – ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী), দশাশ্বমেধ ঘাট।

নিচের তলায় একজন ডক্টর বসুর হোমিওপ্যাথির দোকান, তার সামনে একটি ষাঁড় নির্বিকার মুখে দাঁড়িয়ে শালপাতা চিবুচ্ছে, লোকে জাস্ট এপাশ ওপাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। কতিপয় বিদেশিনী গলায় গাঁদাফুলের মালা ঝুলিয়ে হ্যাট-ম্যাট ইংরেজিতে গল্প করতে করতে বেরিয়ে গেলেন, ওদিক থেকে আওয়াজ এল – “অ্যাই বাবুউ, ফেরার সময়ে একটু রাবড়িটা দেখিস।” এদিকে পচা কলাপাতা-বেলপাতার স্তুপ, ওদিকে গোবরের গাদা, ওপরে সাদা হলুদ সোডিয়াম ল্যাম্প, তার মাঝে পত্‌পত্‌ করে উড়ছে বিভিন্ন সাধু-সন্ত-মহারাজদের “ভব্য সমাবেশ”এর ব্যানার, এইসব গা-ঘিনঘিনে ব্যাপার পেরিয়ে একটু এগোতেই দেখি সামনে দশাশ্বমেধ ঘাট।

dsc_0220

পোচ্চুর ছবি দেখেছি। কিন্তু সামনে থেকে দেখে এতটুকুও ইমপ্রেসিং লাগল না। রাত তখন সাড়ে নটা পেরিয়ে গেছে, লোক বিশেষ নেই, একটি মহিলা ঘাটের নিচের দিকের সিঁড়িতে চৌকি পেতে বসে তখনও পুজোর ডালি বেচছেন। কয়েকবার আমাদের অ্যাপ্রোচ করে হাল ছেড়ে দিলেন। প্রতি পুজোর টুকরিতে একটি করে জ্বলন্ত প্রদীপ। আমাদের সামনেই একজন পুজোর টুকরি কিনে গঙ্গা মাইয়ার আরতি করল, তারপরে জলে প্রদীপ ভাসিয়ে দিল।

জলে সারি সারি নৌকো বাঁধা, তার কোনওটির গায়ে ভোডাফোন, কোনওটির গায়ে এয়ারটেল।

dsc_0221dsc_0235dsc_0231dsc_0222

সিঁড়ি দিয়ে উঠে উঁচু চাতালটায় এসে দাঁড়ালাম। দূরে সারি সারি আলো দেখা যাচ্ছে। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম, ঐটা কাশী বিশ্বেশ্বরের ঘাট, দূরের ঐটা অসসি ঘাট। সর্বাঙ্গে ছাই মাখা একজন সাধুবাবা চান করতে নামল। পাশের চাতালে সারিসারি সেই মাদুরের ছাতা, এখন সবই খালি। দূরে কতিপয় বিদেশীর সাহচর্য্যে তিনজন সাধু গঞ্জিকা সেবন করছেন। সিঁড়ির ওপরে বাঁদিক ঘেঁষে বড় সাইনবোর্ডে লেখা – জল-পুলিশ। একটি পুলিশ দাঁড়িয়ে ছিল, জিজ্ঞেস করে জানলাম, প্রতিদিন ভোর চারটের সময়ে বিশ্বনাথ শিবের প্রভাতী আরতি হয়। সাড়ে চারটে থেকে “দর্শন” শুরু হয়। সিকিনী বলল, আমাকে একজন অফিসে বলেছিল, দর্শন করার জন্য নাকি বিশাল লাইন পড়ে, কিন্তু সে এখানে কাকে চেনে – তাকে বললে ভিআইপি গেট দিয়ে তাড়াতাড়ি দর্শন করিয়ে দেবে। যাবি?

কেন ভাই! আমার তো একেই এইসব ধর্ম মন্দির ভগবান ইত্যাদি আলবাল জিনিসে অ্যালার্জি আছে, তার ওপরে এইসব “ভেতর থেকে ব্যবস্থা” ইত্যাদিতে আমার আরও অ্যালার্জি আছে। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে আমার দেখতে যাবার ইচ্ছে আছে ষোলআনা, কিন্তু “দর্শন” করার ইচ্ছে একফোঁটাও নেই। এখন সে-সব তো এদের “ভেতর থেকে ব্যবস্থা” করা লোককে বলে বোঝানো যাবে না। বারাণসীতে বসে নিজের বক্তব্য পেশ করতে গেলে আমি ক্যাল খেয়ে যেতে পারি। তার চেয়ে না যাওয়াই ভালো।

মুখে বললাম, একটু তো ঘুমোতে দে আজ। সারাদিন ড্রাইভ করেছি আটশো কিলোমিটার। অত ভোরে উঠতে চাপ হয়ে যাবে। দেরি করলে আমাদের বেরোতে আরও দেরি হয়ে যাবে, শক্তিগড়ে পৌঁছে লেট লাঞ্চ করা যাবে না।

সিকিনী বলল, ঠিক আছে, তা হলে কাটিয়ে দে। বেনারসে এসে কাশী বিশ্বনাথের মন্দির দেখব না – যাকেই বলেছি, সে-ই বলছে …

ফিরে এলাম গোধূলিয়া মোড়ে। ঠিক মোড়েই একটি বাঙালি রেস্টুরেন্ট। ঠিক করলাম, সারাদিন লম্বা জার্নি করে এসেছি, কালও জার্নি আছে, সুস্থ থাকাটা জরুরি, অতএব, এক্সপেরিমেন্টে না গিয়ে বাঙালি খাবার খাও।

তা খেলাম। চমৎকার ডাল ভাত বাঁধাকপির তরকারি মাছের ঝোল আর বেগুনভাজা দিয়ে ভরপেট ভাত খেয়ে উঠলাম, শেষ করে বেরিয়ে পাশের দোকান থেকেই মাটির খুরিতে করে একশো গ্রাম করে রাবড়ি। উম্‌দা জিনিস। পেট ভরিল, কিন্তু মন ভরিল না।

বারাণসী কিনা বিহারের প্রায় গায়ে লাগোয়া – বিহার বর্ডার এখান থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূর। যারাই বারাণসী বেড়াতে আসে, তারা এখান থেকে ঘুরে আসে সারনাথ বোধিগয়া। সারনাথ বারানসী থেকে খুবই কাছে। তো, বিহারের প্রক্সিমিটির জন্যেই বারাণসীর হিন্দিতে স্পষ্ট বিহারি টান। খেয়ে দেয়ে একটি ব্যাটারি রিক্সায় উঠে বসলাম, সেখানে আরও দুটি ছেলেমেয়ে ছিল, সম্ভবত কোথাও থেকে পড়ে ফিরছে, কলেজের ছাত্রছাত্রী। রাস্তায় ভিড় একটু কমেছে, তবে জিজ্ঞেস করায় রিক্সাওলা জানালো, বারাণসী কখনও ঘুমোয় না। চাইলে রাত তিনটের সময়েও রিক্সা পাওয়া যাবে। … এদিকে রিক্সা চলছে খুব ধীরগতিতে, প্রায় হাঁটার স্পিডে। একসময়ে থাকতে না পেরে ছেলেটি গলা তুলল – আরে ও ভাইয়া, ইতনা ধীরে কাহে চালাত হো, তানিক তেজ বঢ়াও না।

পৌনে এগারোটায় হোটেলে ফেরত। হোটেলটি ভালো, পরিষ্কার, খুব দামীও নয়। জামাকাপড় বদলে শুতেই ঘুম জড়িয়ে এল চোখে।


ফোনের আওয়াজে এক ঝটকায় ঘুম ভেঙে গেল। কত রাত এখন? কার ফোন বাজছে?

বাজছে সিকিনীর ফোন। নাম ফ্ল্যাশ হচ্ছে, সামবডি ডিরেক্টর অলোক কুমারের নাম। অফিস থেকে ফোন? এত রাতে?

সিকিনী নাম শুনে বলল, ও হ্যাঁ, এ-ই বলেছিল বেনারসে এর কী চেনাশোনা আছে, ব্যবস্থা করে দেবে, তুই কথা বলে নে –

আমিঃ কী বলব? হ্যাঁ, নাকি না?

সিকিনীঃ বল যে সকালে বেরোতে হবে, যদি সকাল পাঁচটা নাগাদ দর্শন করিয়ে দিতে পারে, তা হলে যাবো।

ফোন ততক্ষণে বেজে শেষ হয়ে গেছে। মোবাইলে দেখলাম, রাত সাড়ে এগারোটা বাজে। ঘুমের দফারফা। অলোক কুমারকে ফোন করলাম। উনি ভোর পাঁচটা শুনে খুবই চিন্তিত হয়ে বললেন, আচ্ছা, দেখছি। আমি একজনকে বলে দিচ্ছি, বারাণসী পুলিশের একজন সাব ইনস্পেক্টর আপনাকে দশ মিনিটের মধ্যে ফোন করবেন। তাঁকে বলে দেবেন কখন যেতে চান, তিনি ব্যবস্থা করে দেবেন।

হয়ে গেল। ভেবেছিলাম ছটা অবধি ঘুমিয়ে উঠব, শালা এই দর্শনের চক্করে পড়ে সব প্ল্যান চৌপাট হয়ে গেল। রাতে যদি ঘুম কমপ্লিট না হয়, কাল সারাদিন আবার টানব কী করে? – কিন্তু, ভক্তি বড় কঠিন জিনিস। সেখানে এইসব পার্থিব লজিকের স্থান নেই।

দশ মিনিটের মাথায় একজন এস আই ফোন করলেন। বললেন, সক্কাল সোয়া পাঁচটা নাগাদ গাড়ি নিয়ে একজন আসবে, তার নাম কনস্টেবল মঙ্গল পান্ডে। এই তার নাম্বার। সে আপনাদের “দর্শন” করিয়ে দেবে।

তাতিরাতাচি গামা হন্ডুরাস। “যাকেই বলেছি, সে-ই বলছে”-র এই হচ্ছে নীট ফল। যে জিনিসগুলো আমার সবচেয়ে অপছন্দের, সবচেয়ে ঘেন্না করি, সেই জিনিসগুলোর মধ্যে দিয়ে আমাকে কাল সকালে যেতে হবে। জাস্ট বিরক্তিকর।

মনে মনে অসংখ্য গালাগাল মারতে মারতে – কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, ঘড়ি দেখি নি আর।


7 thoughts on “একটি অতিসাধারণ ভ্রমণকাহিনি – দ্বিতীয় পর্ব

  1. চুনের সন্ধানে যাচ্ছো পড়েই ভাবলাম কেস খেলে।বাংলায় সন্ধ্যেবেলা চুন দেয় না।কারণ না জানা অমার্জনীয় অপরাধ তবুও আমি জানি না।

    Like

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.