পর্ব ১ , পর্ব ২ ,পর্ব ৩ আর পর্ব ৪-এর পরে
নাঃ, কলকাতা আমার শহর নয়। এ শহরে আমি বোধ হয় একটি রাতও আজ পর্যন্ত কাটাই নি। সেই অর্থে দিল্লিই বোধ হয় আমার কাছে সেই শহর, যে শহর জানে আমার প্রথম সবকিছু। কিন্তু তাই বলে কি কলকাতা বেড়াতে যাবো না? বিশেষ করে ব্যান্ডেলে এসে, যেখান থেকে প্রতি দশ পনেরো মিনিটে একটা করে ট্রেন যায় হাওড়া ইস্টিশনের দিকে, যেখানে যাবার জন্য আমাদের কখনও টাইম টেবিল দেখতে হয় না, জাস্ট ইচ্ছেমত ব্যান্ডেল স্টেশনে গিয়ে পড়লেই চলে?
ভূতোও কলকাতা দেখে নি, মানে, কলকাতা “দেখা” বলতে যা বোঝায় আর কি। আসতে আসতে অনেক আলোচনা হচ্ছিল, হাতে যখন দু তিনদিন সময় রয়েছে, ভূতোকে একদিন সারাদিন ধরে কলকাতার যা সম্ভব দেখানো হোক। সমস্যা বাধছিল অঞ্চল বাছতে। কখনও ঠিক হয় সায়েন্স সিটি – তো পরক্ষণেই মনে পড়ে, ওখানে গেলে, শুধু ওটিতে যেতে আসতেই একটা গোটা দিন বেরিয়ে যাবে, খুব বেশি হলে নিকোপার্ক দেখা যেতে পারে ওর পরে, তার বেশি কিছু নয়। বরং সেন্ট্রাল কলকাতা টার্গেট করা হোক, জাদুঘর আছে, তারামণ্ডল আছে, ভিক্টোরিয়া আছে, আর দুপুরে লাঞ্চটা যদি আহেলি-তে করে ফেলা যায়, তো কেমন হয়? সিকিনী বলল, না, আহেলি বড় কস্টলি, আমরা বরং স্টার থিয়েটারের সেই ভ-মা তে যাবো। আমার মন অপশন দিচ্ছিল বালিগঞ্জ প্লেস, তো যাই হোক, বেরিয়ে তো পড়ি, যা হবে দেখা যাবে।
প্রথম তারামণ্ডলে গিয়েই হতাশ হলাম, সে রিনোভেশনের জন্য বন্ধ ছমাস যাবৎ (আবছা মনে পড়ল, গত বছরেও এ চত্বরে এসে দেখেছিলাম রিনোভেশনের জন্য বন্ধ আছে, এ শহরে কদ্দিনে ছ’মাস হয় কে জানে!)। অগত্যা হাঁটতে হাঁটতে সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল।
সেখান থেকে চিড়িয়াখানা। আমি নিজেই কলকাতার চিড়িয়াখানা দেখেছি, তখনও সম্ভবত ইশকুলে ভর্তি হই নি। এখন গিয়ে আর কিছুই চিনতে পারলাম না, তবে ভূতোর খুশিতেই এখন আমাদের খুশি হবার বয়েস।
সবচেয়ে মন কাড়ল বাচ্চা হাতিটা, একটা দুষ্টু পায়রার সঙ্গে সে লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে খেলা করছিল। আর পায়রাটাও তেমনি, আমাকে-ধরতে-পারে-না স্টাইলে খালি খালি বাচ্চাটার শুঁড়ের কাছে এসেই ফুড়ুৎ করে পালিয়ে যাচ্ছে, আর বাচ্চাটা গোল গোল করে ছুটে যাচ্ছে।
এর মাঝে খাবার ব্যাপারে পুরোপুরি মত পালটে সোজা চলে গেলাম পার্ক সার্কাস। আর্সালানে গিয়ে পেটপুরে আবার বিরিয়ানি খেলাম। সেখান থেকে ফিরে এলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে।
প্রাক্-প্রেমপর্বে আমরা, মানে আমি আর সিকিনী, দু একদিন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে বসেছিলাম। সেইসব স্মৃতি মনে পড়ে গেল। আর একদিন মনে আছে, দুজনে মিলে উনিশে এপ্রিল দেখতে গেছিলাম হাজরায়, বিজলি সিনেমাহলএ। সিনেমা দেখে সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে এসেছিলাম বাবুঘাট। অনেকক্ষণ লঞ্চঘাটে বসে থেকে তারপরে ট্রেন ধরে বাড়ি গেছিলাম। ভালোবাসার মেয়েটির হাত, সেই প্রথম অনে-কক্ষণ ধরে থাকার অভিজ্ঞতা, সারা শরীরের সেই শিরশিরানি আজও ভুলতে পারি নি।
ভিক্টোরিয়ায় তখন সন্ধ্যে হচ্ছে। ধীরে ধীরে। এত আলোর কারিকুরি সেই সময়ে বোধ হয় ছিল না।
এর পর একটা বাস ধরে বাবুঘাট। ফিরে দেখা সেই সময়গুলোকে। বিশ শতকের শেষ দশকের শেষ মাস। সিকিনী পরের মাসেই প্রথম চাকরি পেয়ে চলে যাবে মেদিনীপুর। আমি তখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছি। ওকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে আমি ফিরে যাবো আমার পেয়িং গেস্ট আস্তানায়, চিংড়িঘাটা। বাবুঘাটে সারিসারি দাঁড়িয়ে ওড়িশা-ঝাড়খণ্ডমুখী বাস, আর পাশ দিয়ে চলে যাওয়া চক্ররেলের ঝুমঝুম আওয়াজ মাঝেমধ্যে, লাইনটা পেরোলেই বিশাল বড় হুগলি নদী।
কিছু বদলায় নি। কলকাতার এইসব অঞ্চল একই রকম রয়ে গেছে দশকের পর দশক। লঞ্চের টিকিট কাটলাম। লঞ্চ এল, হাওড়া পৌঁছলাম। কালীপুজো উপলক্ষ্যে সবাই সেজেছে খুব। হাওড়া ব্রিজ, হাওড়া স্টেশন।
পরদিন আবার যাওয়া হয়েছিল কলকাতা। শারদ্বত হাওড়ায় এসে আমাকে তুলে নিল, সেখান থেকে গেলাম কাবলিদার বাড়ি। অনেকদিন পরে দেখা হল কাবলিদার সাথে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে হাজির হল তাপস, রৌহিন, সুমেরু আর অভিষেক আইচ। গুরুচন্ডালির বইপত্তর গোনাগুনির কাজ। কাজ সেরে আমাদের নন্দন চত্বরে যাবার কথা। সেখানে আরও আসবে লোকজন। একটা মিনি ভাটের আয়োজন করেছে শারদ্বত, আমার অনারে।
ভবানীপুরে এই ছবিটা দেখলাম, মদন মিত্তির তখন সবে জামিন পেয়ে বেরিয়েছেন।
তবে নন্দনের ভাট একটু হতাশ করল। শারদ্বত তো সর্বক্ষণই আমার সাথে ছিল, রৌহিন আর সুমেরুও পরের বাস ধরে এসে গেল, তাপস কেন জানি না এসেই আমাকে দেখে আবার পালিয়ে গেল। এর পরে এল রুণা, রাজীব সেনগুপ্ত, সামরান এবং সবশেষে খানিকক্ষণের জন্য – সব্যসাচী কর। সায়ন্তনী এবং আরও কিছু কুচোকাঁচা আসবে বলেও এল না, বিভিন্ন বাহানা দেখিয়ে। তবে ভাটের স্পিরিট তাতে একটুও কমে না। খানিক কেজো আড্ডা সেরে আবার শারদ্বতের ঘাড়ে চেপে হাওড়া ফেরত। সেখান থেকে বাড়ি।
কাল ভাইফোঁটা। মূলত এই অনুষ্ঠানটার জন্যই এই সময়ে আসা।
আপাতত আমার বাড়ি আর পাড়ার আরও দু একটা ছবি লাগিয়ে শেষ করি।
বাড়ির উঠোনে শিউলি ফুল
বাড়ির বেড়াল
আমাদের বাড়ি
বাগানের ফুলেরা
পাড়ার ছাতিম গাছ। সন্ধ্যে হলেই গন্ধে ম ম করে পুরো এলাকাছাতিম ফুলেরা পড়ে আছে।
আমাদের পাড়া।
ফেরার জার্নিটা থাকবে না? ছোট্ট করে? একটা পর্বে?
LikeLike
আমি একবারও কি বলেছি কোথাও যে, লেখাটা শেষ হয়ে গেছে? এখনও তিন পর্ব বাকি আছে ত!
LikeLike
সেই ভালো…
🙂
LikeLiked by 1 person
ei ami kintu na esheo lokjon ke inspire kore gechi, ashar jonyo. sabya ke jigao!
LikeLike
🙂
LikeLike
toder barhir birhaler nam bodle Sir Knight rakh. Battle scar gulo dekhe bojhai jachhe ki poriman juddho kare territory rokkha korte 😊
LikeLike
সাত জার্মান, জগাই একা – 🙂
LikeLike