পর্ব ১ , পর্ব ২ , পর্ব ৩ , পর্ব ৪ আর পর্ব ৫-এর পরে
আসলে কী জানেন তো, আমরা সকলেই দুটো জীবন কাটাই। একসাথে। একটা, যেটা আসল আমি, আরেকটা, যেটা সবাই আমায় জানে। আমার মুখোশ। লেখক যখন লেখে, উত্তম পুরুষে, তখন সে মুখোশ চড়িয়েই লেখে। তার মত ভালো, সংবেদনশীল, অ্যাডভেঞ্চারাস, পাগল প্রেমিক চরিত্রের প্রেমে যাতে সবাই পড়ে, সেটা এনশিওর করার দায়িত্ব নেয় লেখক নিজেই। লেখনীর দোষেগুণে সেই চরিত্রচিত্রণে সে কখনও সফল হয়, কখনও হয় না।
সব লেখার ক্ষেত্রেই এ কথা সত্যি। সে গল্প উপন্যাস স্মৃতিকথা ট্র্যাভেলগ লেখাই হোক বা এক দু লাইনের ফেসবুকের স্ট্যাটাস। উত্তম পুরুষে লেখকের মত উত্তম আর কেউ হয় না।
আর, দু একবারের চেষ্টায় যখনই লেখক তাতে সফল হয়ে যায়, তখন পাঠকের সেই এক্সপেক্টেশন ধরে রাখার একটা তাগিদ নিজের অজান্তেই গড়ে ওঠে তার মধ্যে। সে চেষ্টা করে যেন তার পরের লেখাগুলোকেও লোকে একইরকমভাবে পছন্দ করে।
আমার এই লেখার প্রথম চারটে পর্ব লোকে যতটা মন দিয়ে পড়েছে, অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে, আমার মনের মধ্যে তত খুশি ভরে উঠেছে। কিন্তু পঞ্চম পর্ব – কেউ কেউ জানালেন, ততটা ভালো লাগে নি। কোথাও যেন একটা তাল কেটেছে। ঠিক দিল্লি-কলকাতা ট্র্যাভেলগের মধ্যে এইসব জিনিস – চিড়িয়াখানা গেলাম, আর্সালানে বিরিয়ানি খেলাম – এ সব খাপ খায় না।
খারাপ লাগে নি? সত্যি করে বলো, সিকি। মনের মধ্যে কোথাও কি একটু ক্ষুণ্ণতা জমা হয় নি?
হয় নি আবার? হয়েছে বৈকি। ভালো লাগাতে না পারলে, খারাপ লাগা এসে যাবেই অবধারিতভাবে। কিন্তু সে খারা লাগা তো অযৌক্তিক নয়। আসলে, আমার নিজেরও পোস্ট করার পরে পড়তে ভালো লাগছিল না। ট্র্যাভেলগের ট্র্যাক ছেড়ে গত পর্বটা কেমন মনোলগ হয়ে যাচ্ছিল – সেটা আমি নিজেও টের পেয়েছি। আসলে, লেখাটা যখন শুরু করেছিলাম, ঠিক, লোককে ভালো লাগানোর উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু করি নি, এক্সপেক্টেশন জন্মাবে – এমন ভেবে আগের পর্বগুলো লিখি নি। জন্মে গেছে, এবং সেটা আমার কাঁধে এসে উঠেছে। এখন তাকে বাঁচিয়ে রাখার দায় আমার। সসম্মানে সে দায়িত্ব আমি ঘাড়ে নিয়ে আজকের পর্ব লিখছি।
যে কোনও ভ্রমণকাহিনির তিনটে পার্ট থাকে – গিয়ে পৌঁছনো, ঘুরে দেখা, এবং ফিরে আসা। এখন, বেড়ানোর অংশটা – এই ট্রাভেলগে – কলকাতা, যেটা আমার লেখার অধিকাংশ পাঠকের কাছে আপুন-কা-ইলাকা, নিজের বাড়ি, নিজের পাড়া। বেড়াবার জায়গা নয়। সম্ভবত তাল কাটার সেটা একটা কারণ। যাই হোক, আগে থেকেই জানিয়ে রাখি, এই লেখা শেষ হবে আমার দিল্লি ফেরার পর, সম্পূর্ণ আট পর্বে।
===========================================================
১৬৭৩ সাল। পাটুলির জমিদার রামেশ্বর রায় তৎকালীন মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের কাছ থেকে গঙ্গার ধারে বংশবাটি এলাকায় ৪০০ একরের একটি গ্রাম যৌতুক এবং রাজা উপাধি পান। তিনি সেখানে বসতি স্থাপন করেন। বংশবাটিতে বংশবিস্তারও করেন। প্রায় একশো বছর বাদে তাঁর বংশধর, রাজা নৃসিংহদেব রায় এইখানে একটি মন্দির বানান। ইতিহাস বলছে, রাজা নৃসিংহদেব যাচ্ছিলেন বিলেত। যাবার পথে তিনি কয়েকদিনের জন্য বারাণসেতে অবস্থান করছিলেন, যখন তাঁর সাথে পরিচিতি হয় কয়েকজন তান্ত্রিক সাধুর। বিলেত যাবার প্ল্যান ক্যানসেল করে তিনি বারাণসীতেই থেকে যান ছ বছর – ১৭৯২ থেকে ১৭৯৮, এবং সেই তান্ত্রিকদের কাছে তিনি মন দিয়ে তন্ত্রবিদ্যা শিক্ষা করেন, কুণ্ডলিনী সম্বন্ধে সমস্ত জ্ঞান অর্জন করেন। তার পরে তিনি ফিরে আসেন বংশবাটিতে, এবং তন্ত্রমতে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার সূচনা করেন। শেষ অবশ্য তিনি করে যেতে পারেন নি, তার আগেই ১৮০২ সালে রাজা মারা যান। এর পরে মন্দির সম্পূর্ণ করার দায়িত্ব হাতে নেন তাঁর স্ত্রী, রানী শঙ্করী দেবী। মন্দির সম্পূর্ণ হয় ১৮১৪ সালে।
এই মন্দিরটিই আজ হংসেশ্বরী মন্দির নামে বিখ্যাত। বলতে পারবেন, এখানে কোন দেবীর মূর্তি আছে?
হংসেশ্বরী বললেই প্রথমে মনে আসে সরস্বতীর কথা, হংসবাহিনী। কিন্তু না, এই মন্দিরের সঙ্গে সরস্বতীর দূর দূর পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক নেই। এটি এই মন্দিরের কালীঠাকুরের নাম। এমন কি হংসেশ্বরীর সাথে হংস বা হাঁসেরও কোনও সম্পর্ক নেই। গল্পটা শুনুন।
বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির এখন আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া টেকওভার করেছে, তারাই রক্ষণাবেক্ষণ করে। এই অঞ্চলে এই মন্দিরটি বিভিন্ন দিক দিয়ে ইউনিক – এর স্থাপত্য সাবেকি তন্ত্রমতে বানানো – যা দক্ষিণবঙ্গের আর কোনও মন্দিরে নেই। এবং এর সংলগ্ন অনন্ত বাসুদেব মন্দিরও এই অঞ্চলের টেরাকোটার একটি মাত্র মন্দির। হুগলি জেলায় সম্ভবত আর কোনও টেরাকোটার মন্দির নেই।
মূল মন্দিরটি ২১ মিটার লম্বা এবং এতে ১৩টি মিনার আছে। প্রতিটি মিনারের মাথা এক একটি পদ্মকুঁড়ির আকারে তৈরি। মন্দিরটি পাঁচতলা। প্রতিটি তলা তন্ত্রমতের এক একটি মূল স্নায়ুকে রিপ্রেজেন্ট করে – ইড়া, পিঙ্গলা, বজ্রাক্ষ, সুষুম্না এবং চিত্রিনী। মূল মিনারের একদম ওপরে সহস্রজ্যোতিসমেত সূর্যদেবের একটি ধাতুমূর্তি রাখা আছে। হংসেশ্বরী দেবী অধিষ্ঠিতা রয়েছেন গ্রাউন্ড ফ্লোরে, নীলবর্ণের মূর্তি, চতুর্ভুজা। এটি নিমকাঠের মূর্তি। একইসঙ্গে এখানে শিব এবং কালীর পুজো হয়। তন্ত্রমতে, প্রাণায়ামের সময়ে শ্বাস ছাড়ার মুহূর্তে “হং …” বলে একটি নাদ নির্গত হয়। তেমনি শ্বাস নেবার সময়ে “স …” করে একটি আওয়াজ হয়। এই দুয়ের সংযুক্তিতেই হং-স। এবং দেবীমূর্তির সংযোজনে এই মুর্তির নাম হংসেশ্বরী।
হংসেশ্বরী মন্দির দেখে এলাম ফেরার আগে। সে গল্প পরে। আগে ভাইফোঁটা।
শুক্রবার সকালে ভাইফোঁটার পাট চুকল সাড়ে দশটা নাগাদ। ভূতো এবং তার পিসতুতো ভাইয়ের জীবনে প্রথম ভাইফোঁটা। দুজনেই খুব খুশি এবং উত্তেজিত।
আমারও যেন কত বছর পর ফোঁটা নেওয়া হল? তেরো কিংবা চোদ্দ বছর।
আজ শেষ দিন। ভূতো এর আগে ব্যান্ডেল চার্চ দেখেছে, কিন্তু ইমামবাড়া দেখে নি। তাই দুজনকে নিয়ে বেরোলাম ইমামবাড়া। এম্নিতে হুগলির রাস্তায় খুব একটা গাড়ি চলে না, মূল ফটকের পাশেই অঢেল জায়গা, গাড়ি লাগিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাবো, সামনে ধাপিতে বসা একটি রিক্সাওলা, লুঙ্গি তুলে খানিক দাবনা চুলকে বলল – দাদা, এখানে কিন্তু গাড়ি রাখতে কুড়ি ট্যাকা নেব।
আমি তো হাঁ। বলে কী? ইমামবাড়ার আশেপাশে এত বছর ঘুরেছি, আড্ডা মেরেছি, কখনও তো শুনি নি এখানে “গাড়ি” রাখতে টাকা নেয়? দিল্লির নাম্বার দেখে বেশি শখ হয়েছে বোধ হয়। শুধোলাম, কীসের টাকা হে?
লোকটা উদাস মুখে হাঁটু চুলকে বলল, এই এমনি – আমরা গাড়ি দেখার জন্য নিই।
বললাম, তোমাকে আমার গাড়ি দেখতে তো কেউ বলে নি। এক পয়সাও দেব না।
লোকটা আরও উদাস হয়ে বলল, না দিলে দেবেন না – এমনিই বললাম। আপনার ইচ্ছা।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে সিকিনী, ভূতো, এবং আমার দিদি ও তার পুত্রকে নিয়ে ঘুরতে বেরোলাম অন্যদিকে। প্রথমে রাজহাটের দিকে, সেখানে নাকি একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক আছে, গিয়ে দেখলাম ধূলিধূসরিত পার্কটি জঙ্গল সেজে বন্ধ হয়ে আছে, ভেতরে তিনটে অসহায় ময়ূর বন্দীদশা কাটাচ্ছে। দিদি বলল, চন্দননগরে “ছুটি পার্ক” আছে, সেখানে বাচ্চাদের জন্য ট্রেন রাইড ইত্যাদি কীসব আছে। গাড়ি ঘোরালাম দিল্লি রোড দিয়ে চন্দননগরের দিকে। গিয়ে দেখি ছুটি পার্কও বন্ধ। পাশের একটি পার্কের কাউন্টার থেকে মুখ বাড়ালেন এক দিদিমনি, বললেন, এই পার্কটাতে শুধুমাত্র “কাপল”রা সময় কাটাতে আসে, বাচ্চা নিয়ে গেলে আপনাদের ভালো লাগবে না।
সূর্য তখন অস্ত যাচ্ছে। অগ্রহায়ণের সোনালি ধানেরা দুলছে হাওয়ায়, সরু কিন্তু মসৃণ পিচের রাস্তায় পড়েছে সোনালি রোদের ছোঁয়া।
আবার একটা পার্ক খোঁজার চেষ্টায় জল ঢেলে এইবারে এক রকম জোর করেই আমি সবাইকে নিয়ে গেলাম বাঁশবেড়িয়ার হংসেশ্বরী মন্দির। তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। আলোয় সাজানো মন্দির দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছিল। এই মন্দিরে আমি এসেছিলাম বোধ হয় ঠিক কুড়ি বছর আগে – ১৯৯৫ সালে, আমার জলপাইগুড়ি কলেজের এক বন্ধুর বাড়ি ছিল এখানে, তার সাথে। তখন এত সুন্দর ছিল না মন্দির পরিসর। এখন খুব সুন্দর ঝকঝকে বাঁধানো হয়ে গেছে – এএসআই রক্ষণাবেক্ষণ করে এখন। চারদিকে সুন্দর আলো দেওয়া, পাশের জমিদারবাড়ির ভগ্নাবশেষটুকুও সযত্নে সংরক্ষণ করা, আর অন্যপাশে পুকুরটাও। বেশ খানিকক্ষণ সময় কাটালাম সেখানে।
জমিদারবাড়ির ভগ্নাবশেষ
কাল সকালে আমার ফেরা। সিকিনী আর ভূতো ফিরবে রাজধানী এক্সপ্রেসে। আমি গাড়ি নিয়ে একলা ফিরব, এই রকমই কথা ছিল। কিন্তু পথের দেবতা আর আমার কথায় কবেই বা কান দিয়েছেন। আমার শুভানুধ্যায়ী স্বজন ধারণা করে নিলেন, একা একা অতটা রাস্তা ফেরত যাবে ছেলেটা – পারবে না। বোর হয়ে যাবে। ওর একজন সঙ্গী দরকার। আমি যদিও সঙ্গীর প্রয়োজনীয়তা একবারের জন্যেও অনুভব করি নি, তবু স্বজনবাহিত হয়ে বাবা প্রস্তাব পাড়ল যে, আমার সাথে যাবে। তারপরে ট্রেনে চেপে ফেরত আসবে।
আমার আপত্তি করার কিছু ছিল না, গাড়ি তো খালিই যাবে, বারাণসীতে হোটেলও বুক করা আছে, বাড়তি কোনও সমস্যা নেই। কথা পাকা হওয়ামাত্র আমি বাবার জন্য ফিরতি টিকিট কেটে নিলাম।
কিন্তু শুভানুধ্যায়ীদের আমার জন্য চিন্তা তবুও কমল না। বাবা বয়স্ক মানুষ, সে-ও আমার সঙ্গে টানা দুদিন অতখানি জার্নি করে উঠতে পারবে না, এই সাব্যস্ত করে পরিবর্তে অন্য দুজনকে আমার সাথে জুড়ে দেওয়া হল। একজন আমার আত্মীয় – গৌরব, অন্যজন তার বন্ধু, স্টিফেন। স্টিফেন গুরগাঁওতে চাকরি করে, কলকাতার ছেলে, ওর রবিবার এমনিই ফেরার ছিল, আর গৌরব তার বন্ধু হিসেবে আমার সঙ্গে এমনিই যাবে, যে হেতু আমি স্টিফেনকে সরাসরি চিনি ন।
মনে মনে খুবই খারাপ লাগল, কোনও দরকার ছিল না আমাকে জিজ্ঞেস না করেই এইসব প্ল্যানপ্রোগ্রাম করার। আমি একাই ফিরতে বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলাম। খামোকা লোকজন সাথে নিয়ে লম্বা জার্নি করার মত ইচ্ছে আমার ছিল না, আমার সাথে আসলে খুব বেশি লোকের বনে না। তা ছাড়া, আমাকে বেরোতে হবে সক্কালবেলায়, গৌরব আর স্টিফেন আসবে কলকাতা থেকে, এদিকে গৌরবের সকালবেলায় ওঠার কোনওরকমের বদনাম নেই বলেই জানি, ওরা কীভাবে সকাল ছটার মধ্যে ব্যান্ডেল এসে পৌঁছবে? আমার এখান থেকে দেরিতে শুরু করা মানে বারাণসী পৌঁছতে রাত তো হবেই। আবার পরদিন ভোরে উঠে বেরনো …
কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে আপত্তি জানানোর উপায় থাকে না, বিশেষত আপত্তির লক্ষ্য যদি নিজের আত্মীয়স্বজন হন। চুপচাপ বাবার জন্য কাটা ফিরতি টিকিট আবার ক্যানসেল করলাম। কথা হল গৌরব এবং স্টিফেন ভোর সাড়ে পাঁচটায় ব্যান্ডেল লোকাল ধরবে হাওড়া থেকে, সাড়ে ছটায় ব্যান্ডেল। আমাদের বাড়িতে এসে চা খেয়ে আমরা লেটেস্ট সাড়ে সাতটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ব।
মনে অস্বস্তি নিয়েই ঘুমোতে গেলাম, ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে। কে জানে, কেমন হবে জার্নি – একটাই লাভ, গৌরব আর স্টিফেন, দুজনেই ড্রাইভিং জানে, আমাকে হয় তো একটানা পুরো ড্রাইভ করতে হবে না, ভাগাভাগি করে ড্রাইভ করা যাবে।
======================================
তখনও কি জানতাম, পরের দু দিনে কী কী সাসপেন্স লেখা আছে আমার কপালে? আমি কি জানতাম, যে ট্রিপ শেষ করার আগেই আমাকে উলটো ভাবতে হবে – ভাগ্যিস আমি একা বেরোই নি? ভাগ্যিস আমার সঙ্গে আরও দুজন ছিল?
ট্রাভেলগে সাসপেন্স দিব্যি মানিয়ে যাচ্ছে… 🙂
হংসেশ্বরী মন্দিরের পিছনের দিকটা পুরো বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলোর মত… এরকম যে হুগলীতেও আছে, জানতাম না !!!
LikeLike
হ্যাঁ। ওটাই টেরাকোটার অনন্ত বাসুদেব মন্দির। হুগলির একমাত্র টেরাকোটা।
LikeLike