পর্ব ১ , পর্ব ২ , পর্ব ৩ এবং পর্ব ৪ -এর পরে …
সকাল হল। ঠাণ্ডাটা বেশ ভালোরকমই ছিল, কিন্তু শূন্যর নিচে নামে নি। হাঁচোরপাঁচোর করে পায়ে জুতো গলিয়ে টেন্টের বাইরে বেরোলাম। বুনানের এখন নাক ডাকছে না, যদিও নিঃসাড়ে ঘুমোচ্ছে। অর্পণ বেরিয়েছিল আরও ভোরে, প্রকৃতির মাঝে হালকা হতে। সে হালকা টালকা হয়ে তাঁবুর ঠিক বাইরেই বিজেন্দারের সাথে খেজুর করছিল – আধোঘুমে শুনছিলাম – হাম তো কালকাট্টা মে নেহি র্যাহতে হ্যায়, কালকাট্টা সে থোড়া দূর এক গ্রাম হ্যায়, হামারা ঘর উসি গ্রাম মে হ্যায়। কালকাট্টা মে তো ঠান্ডা নেহি পড়তা হ্যায়, পাস মে হি ও হ্যায় না – কী বলে, বঙ্গোপসাগর হ্যায়, ইসি লিয়ে কালকাট্টা মে ইতনা ঠান্ডা নেহি হোতা …
বাইরে কাঠকুটোর আগুন এখনও ধিকিধিকি জ্বলছে। তাড়াতাড়ি তার পাশে গিয়ে বসলাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে আদা দেওয়া গরম চা চলে এল। মনে হচ্ছে এখন আর প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবার দরকার হবে না। সামলে নেওয়া গেছে। সামনেই ডিকেডি আর বান্দরপুঞ্ছ রেঞ্জ, সকালের প্রথম সোনালী রোদ্দুর পড়েছে তার চূড়োয় – ঝলমল করছে চারদিক। আকাশে লেগেছে লালচে রঙ, সে-ও আস্তে আস্তে সোনালী হয়ে যাচ্ছে।
সাড়ে আটটার মধ্যে দুরন্ত ব্রেকফাস্ট চলে এল – আলু-জিরা, রুটি, ডবল ডিমের ওমলেট আর ডিমসেদ্ধ। না দাদা, আপনারা সকালে যে ব্রয়লারের ডিম খান, সেই জিনিস না – দেশী মুরগীর ডিম। লাল টুকটুকে কুসুম, আর সে কী টেস্ট! এই প্রেম আর বিজেন্দর মিলে এবারের ট্রেকটাকে মোটামুটি ফুড ট্রেক বানিয়ে রেখে দিয়েছে।
বুনানও উঠে পড়েছে, তবে খেল না বিশেষ কিছু, শরীর এখনও ঠিক হয় নি। কালকের মতই আমরা হাঁটা শুরু করলাম – খচ্চরগুলোকে রেডি করে পিঠে মাল বেঁধেছেঁদে ওরা একটু পরে শুরু করবে।
আজ বেশির ভাগটাই বরফে হাঁটা। কাল এসেই বরফের ওপর খানিক খচমচ করে হেঁটে দেখে নিয়েছি, মোট্টেই অসুবিধে হচ্ছে না। অতএব, অর্পণ আর বুনানের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম, আর খানিক পরেই যা হবার, তাই হল। বুনান হনহনিয়ে খানিক বাদেই দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল, বেচারা অর্পণ আমাকে সম্মান দিতেই আমার সাথে টুকটুক করে হাঁটতে লাগল, আর একটু এগোবার পরেই আমি দাঁড়াচ্ছি আর জিভ বের করে হ্যা হ্যা করছি।
তবে কালকের থেকে অবস্থা সামা-ন্য হলেও উন্নত। প্রায় দেড় কিলোমিটার চলে এসেছি। এখন অনেকখানি রাস্তা খাড়াই উঁচু, বরফ আর নেই রাস্তায়। ধীরে ধীরে এগোচ্ছি, হঠাৎ পেছন থেকে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে প্রেম এসে ওভারটেক করে গেল আমাদের। একটু এগোতেই রাস্তা ঘুরে গেছে ওপরে, সেইখানে দেখি পাথরের ফাঁক দিয়ে সরু জলের ধারা এসে পড়েছে পথের ওপরে, চারপাশে বরফ জমে আছে, আর সেইখানে প্রেম পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটু এগোতেই বোঝা গেল কারণটা কী।
মিনি ঝরণায় পাথরের ওপর জল জমে বরফ হয়ে আছে – কিন্তু এটা চারপাশের ঝুরো বরফের মত নয়। কতযুগ ধরে এখানে জল জমেছে কে জানে, বরফ এখানে কাঁচের মত, শক্ত এবং মসৃণ। পা ফেলতেই হড়কে গেলাম, কোনওরকমে ব্যালান্স সামলাতে গিয়ে টের পেলাম প্রেম শক্ত হাতে ধরেছে আমাকে। সে নিজেও পিছলোচ্ছে – দুজনে পাশাপাশি হাত না ধরলে এই ছোট্ট স্ট্রেচটুকু একা পেরনো মুশকিল, আমার তো ট্রেকিং শু-ও নয়।
প্রায় তিন কিলোমিটার চলে এসেছি আজও। এবং, আর সত্যিই পারছি না উঠতে। একই সমস্যা, একই সিম্পটম। অর্পণ এগিয়ে গেল সন্তোষকে সাথে নিয়ে, প্রেম রইল আমার সাথে। নিচ থেকে টুংটুং আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে – খচ্চরেরা এসে গেল প্রায়।
তারা এল, আমি উঠে বসলাম। এবং বসার পরে আর কোনও সমস্যা নেই। ওঠার মুখে যেমন যেমন নিয়ম, সামনের দিকে ঝুঁকে যান, নামার সময়ে বডি পেছন দিকে হেলিয়ে দিন – এসব আমার জানা, এতে সমস্যা কিছুই হয় না। খচ্চরের পিঠে বসে দিব্যি মনে হতে লাগল, আমি কেন বসে আছি, আমি তো আরামসে হেঁটে যেতে পারি – পিঠে ব্যথা নেই, পায়ে ব্যথা নেই, কোমরে ব্যাদনা নেই, কোথাও কিছু নেই, দিব্যি সুস্থসবল একটা মানুষ। … কিন্তু নামতে সাহস পেলাম না, জানি সমস্যা হবেই অন্যত্র।
একটু এগোতেই আমরা পৌঁছে গেলাম একটা চারদিক সাদা বরফে ঢাকা ছোট্ট ভ্যালিতে, আর সেটা পেরিয়ে একটু এগোতেই আমাদের জার্নি শেষ। আমাদের আজকের জার্নি ছিল ছ কিলোমিটারের। এগারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম একটা উঁচু জায়গায়, প্রেম বলল, এটাই দয়ারা টপ। সামনে একেবারে তিনশো ষাট ডিগ্রির ভিউতে বিভিন্ন বরফের চূড়ো, একদিকে বান্দরপুঞ্ছ, অন্যদিকে শ্রীকণ্ঠ, ডিকেডি এবং তাদের সঙ্গের ছোটোখাটো পীক। নিচের দিকে নীলচে পাহাড়, তার মাঝে মেঘেরা খেলে বেড়াচ্ছে, সামনে পাথরের কয়েকটা অস্থায়ী বাসস্থান, নিচে গোইতে যেমন দেখেছিলাম। পুরোটাই বরফে ঢাকা। তার সামনেই একটা বরফে ঢাকা ঢালু জমি নেমে গেছে, আর তার বাঁ পাশ দিয়ে একটা বিশাল উঁচু টিলা উঠে গেছে। খচ্চরওলা আর বিজেন্দর দুজনে মিলে টকাটক সেই টিলায় উঠে চলে গেল, জলের সন্ধানে। এখানে বহমান জল নেই, ওপরের দিকে একটা বহমান জলের সোর্স আছে – সেইটা পাওয়া গেলে আমরা ওপরে গিয়ে টেন্ট লাগাব, নইলে এখানেই।
তারা গেল এবং এল, আমি বসে বসে খানিক ছবি তুলে ভাবলাম, মোবাইলে দুটি ছবি তুলি – পরে শেয়ার করতে সুবিধে হবে, ও মা, বের করে দেখি দুটি মিসড কল এবং ছটি এসেমেস। এবং, এবং, রোমিং-এ ফুল সিগন্যাল।
এইখানে? দয়ারা বুগিয়াল টপে? বুনান এবং অর্পণও এল। তারাও মোবাইল বের করে দেখল, এয়ারটেল, ভোডাফোন, সবারই ফুল সিগন্যাল আসছে এখানে। ব্যাপক ব্যাপার! কোথায় দূরে কোন পাহাড়ের গায়ে টাওয়ার বসানো আছে কে জানে, এইখানে তার সিগন্যাল এসে পৌঁছচ্ছে। টপাটপ কিছু ছবি শেয়ার করে লোকজনকে হিংসে দেওয়া গেল।
জলের সন্ধানে যারা গেছিল, তারা ফিরে এল। ওপরে জল পাওয়া যায় নি, তাই এখানেই নিচের দিকে টেন্ট বসানো হবে। টিলার নিচে, যাতে হাওয়াটা আটকায়। আজকে দুটো টেন্ট খাটানো হল, একটা আমাদের জন্য, একটা প্রেম, বিজেন্দর, সন্তোষ এবং খচ্চরওলাদের জন্য, কারণ নিচের দিকে আর কোনও হাট নেই। সেই দ্বিতীয় টেন্টেরই এক্সটেনশনে পলিথিন টাঙিয়ে রান্নার জায়গা তৈরি হয়ে গেল। টেন্টের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে বরফ। একজন সেখান থেকেই থালায় করে বরফ চেঁছে চেঁছে তুলে টিনের ড্রাম ভরতে লাগল, প্রেম আর বিজেন্দর কাঠকুটো জোগাড় করে আগুন জ্বালিয়ে ফেলল, এই আগুনেই বরফ গলিয়ে জল হবে, সেই জলে চা হবে, রান্না হবে …
প্রেম বলল, চা খেয়ে নিয়ে আমি আপনাকে আর দুইপায়নদাকে ঘোড়ায় করে এই টিলার ওপরে তুলে দিচ্ছি, ওপরে গিয়ে একটু ঘুরে আসুন, ওপরে আরও ভালো ভিউ পাওয়া যায়।
এদিকে এতটা চলে এসে ঘোড়া, আই মিন খচ্চরদের বেশ তেষ্টা পেয়ে গেছে। সন্তোষ এক টিন জল নিয়ে গিয়ে ধরল, দুই খচ্চর মিলে তিন চুমুকে সেই জল শেষ করে আহ্লাদে চামরের মত ল্যাজ দোলাতে থাকল। এইবারে আমাদের নিয়ে তারা টিলায় উঠবে। এদিকে ঘোড়ার পিঠে চড়া আমার কাছে যতটা সহজ, বুনানের কাছে ততটাই শক্ত। টপে উঠে খচ্চরের পিঠ থেকে নেমে বুনানের দার্শনিক উপলব্ধি, এচ্চেয়ে পায়ে হেঁটে ওঠা অনেক সহজ।
ওপরে উঠে চোখ জুড়িয়ে গেল চারদিকে বরফ, আর বরফ। যেদিকে তাকাই, দিগন্তবিস্তৃত সাদা চাদর, ধবধবে সাদা, আর উঁচু উঁচু পাইন গাছের সারি। সামনেই প্রকাণ্ড বান্দরপুঞ্ছ রেঞ্জ, মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই বোধ হয় ধরা যায়। বরফে পা রাখলে প্রথমে জুতোর সোল, তার পরে জুতোটাই ডুবে গেল।
এ জিনিস লিখে বোঝানো সম্ভব নয়, খানিক ছবি দেখুন বরং।
ঘণ্টাদেড়েক ঘোড়াঘুরি করে আবার নেমে এলাম, ততক্ষণে ম্যাগি তৈরি। খানিক গল্পগুজব, আস্তে আস্তে সূর্যাস্তের সময় হয়ে গেল, আকাশের রঙ পাল্টাতে শুরু করল।
আমি আবার ওপরের দিকে উঠে এলাম। নিচে কোনও মোবাইলের সিগন্যাল ধরছে না, একমাত্র ওপরেই ধরছে।
আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে এল – আকাশে ফুটে উঠল একটা দুটো করে হাজার হাজার তারা। খচ্চরওয়ালা আজ তার গল্পের ঝাঁপি খুলে বসল। … একটা টিম এসেছিল বান্দরপুঞ্ছ সামিট করতে, পীকের দিকে ওঠার সময়ে একজনের হার্ট অ্যাটাক হয়। এই খচ্চরগুলোকে নিয়েই সে উঠছিল পোর্টার হিসেবে। তাড়াতাড়ি সেই লোকটিকে নিয়ে সে নেমে আসে – কারণ অন্তত উত্তরকাশী না পৌঁছনো গেলে মিনিমাম মেডিক্যাল সাপোর্টও জুটবে না। এই ওপরের যে টিলাটা – যেখানে আমরা দুপুরে উঠেছিলাম, সেখানে একটা টেম্পোরারি হেলিপ্যাড আছে, ওইখানেও এনে ফেলতে পারলে ফোন করে হেলিকপ্টার ডেকে নেওয়া যেত। … কিন্তু ওই অবধি আনবার আগেই লোকটা মারা গেল। আমরা তার ডেডবডি নিয়ে নিচে নিচে নেমে এলাম।
খাওয়া শেষ হয়ে গেল সাড়ে সাতটার মধ্যেই – এর পরে শুয়ে পড়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই, কিন্তু এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়লে জাস্ট ঘুম আসে না, রাতে হাজারবার ঘুম ভেঙে যায়। খানিক গল্পগুজব ইত্যাদি সেরে শেষমেশ নটার সময়ে ঘুমোতে যেতে হল। আজ, ম্যাজিকের মত, বুনান পুরো নিঃশব্দে ঘুমোল – একবারও নাক না ডেকে। অতএব, আমারও ঘুম আসতে সময় লাগল না।
***************************
এখানে আমাদের দেড়দিনের স্টে। সকালবেলায় ঘুম ভেঙে উঠে দেখি, আকাশে রাশিরাশি মেঘ। সামনে ডিকেডি আর শ্রীকণ্ঠ পুরো ঢেকে গেছে মেঘে – কালচে মেঘ আর ধূসর মেঘে ঢাকা আকাশ। সূর্যোদয়ের ছবি সেভাবে তোলা হল না। প্রেম চা নিয়ে এসে বলল, ওখানে এখন তেড়ে স্নোফল হচ্ছে, যদি মেঘ এদিকে উড়ে আসে, তা হলে এখানেও হওয়া বিচিত্র নয়।
আজকে রিল্যাক্স করার দিন। আজ আবার ওপরে যাব। অন্যদিক দিয়ে – আরও ভালো কিছু ভিউ পাওয়া যেতে পারে।
বুনান ট্রেক করতে ভালোবাসে, ছবি তুলতে ভালোবাসে – কিন্তু সবচেয়ে ভালোবাসে কী বলুন তো? কাঁচালঙ্কা। মানে যে কোনও টিয়াপাখিও লজ্জা পেয়ে যাবে বুনানের লঙ্কা খাওয়া দেখলে। এই দুদিনে বিজেন্দরকে ও মোটামুটি পাগলা করে দিয়েছে লঙ্কা চেয়ে। তো – এই ভালোবাসা দেখে আজ প্রেম বুনানের জন্য একটা স্পেশাল ডিশ তৈরি করে আনল – এই দেখুন ছবি।
বরফ গুঁড়ো করে, কাঁচালঙ্কাবাটা আর নুন মাখিয়ে। আমি মুখে দেবার সাহস করি নি, বুনান অর্ধেকটা খেল, অর্পণ দু চামচ, তারপরে বাকিটা ঘোড়াদের খেতে দেওয়া হল, তারা এসে থেকেই দেখছি চেটে কামড়ে বরফ খেয়ে তেষ্টা মেটাচ্ছে আর কেমন অস্থির অস্থির ভাব দেখাচ্ছে। খচ্চরওলা বলল, ওরা নুন খুঁজছে – নুন খেতে চাইছে। তো, বাকি ওই নুন-লঙ্কা মেশানো বরফকুচি তাদের সামনে ঢেলে দেওয়া হল, প্রথমে দুটো খচ্চর খুব উৎসাহ নিয়ে চাটতে শুরু করল, তারপরে বোধ হয় ঝাল লাগায় কেমন সন্দেহকুটিল চোখে তাকিয়ে অন্যদিকে সরে গেল।
আমরা অন্যদিক দিয়ে উঠলাম, কিন্তু আকাশে মেঘ আর রোদের খেলা চলছে, আকাশ ক্লিয়ার নয়। ওপরে উঠেই তাক লেগে গেল – অদূরে একটা ডোম শেপের ঘর, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের, চারদিক সাদা হয়ে আছে, সামনে একটা কিউট ছোট সাঁকো।
আমি আর অর্পণ এগোলাম সেদিকে। সাঁকো পেরোতেই পায়ের ডিম পর্যন্ত ডুবে গেল বরফে, এত বরফ। মহা আনন্দে খানিক হাঁটাহাঁটি করলাম, ছবি তো তুললামই – অর্পণ আবার একটা ঢালু জায়গার ওপরে উঠে সেখান থেকে স্লাইড করে নেমে আসার চেষ্টাও করতে লাগল।
ঘন্টাতিনেক মত ওপরে রইলাম – ততক্ষণে আস্তে আস্তে মেঘ সরে গিয়ে আকাশ একদম পরিষ্কার হয়ে গেল, আর চোখের সামনে ঝলসে উঠল বান্দরপুঞ্ছ রেঞ্জ।
আজ সূর্যাস্ত হল জম্পেশ। আমরা তো কোন ছাড়, এমনকি খচ্চরগুলো পর্যন্ত মুগ্ধ হয়ে দেখল সূর্যাস্তের ছটা।
ফিরে এলাম আগুনের কাছে, প্রেম আলু পোড়াচ্ছিল, পোড়া আলু খেতে যে কী উমদা হয়, সে কী বলব। গপাগপ খেয়ে ফেললাম। … এদিকে আমি তো সলিডে বিচরণ করি, বুনান আর অর্পণ তো বেশি স্বচ্ছন্দ জলপথে। ইতিমধ্যেই কত গেলাস লাল পানি শেষ করে ফেলেছে কে জানে, অর্পণ এইবারে ক্লেম করল, সে এখন গান গাইবে।
গাইবে তো গাইবে। কেউ তারে দাবায়ে রাখতে পারল না। উদাত্ত কণ্ঠে সে শুরু করল ফসিলসের গান। তার পরে বোধ হয় রূপম ইসলামেরও একদুখানা গান পেরিয়ে সে ঢুকে গেল গুলাম আলিতে। তারপরে কিশোরকুমার টুমার হয়ে একেবারে মাখোমাখো কেস। এমতাবস্থায় আমিই বা কী করে চুপ থাকি? অদ্যই প্রায় শেষ রজনী, কাল রাতে আমরা এই সময়ে উত্তরকাশীর হোটেলে থাকব। অতএব, আমিও গলা ছাড়লাম।
সব এন্থু শেষ হবার পরে শুতে চলে গেলাম রাত সাড়ে নটা নাগাদ। কাল বছরের শেষ দিন। প্রেম বলল, কাল ওর বাড়িতে আমাদের নেমন্তন্ন। খাসী কাটা হবে।
একটি অতিসাধারণ ভ্রমণকাহিনি আর তালেগোলে হরিবোলে, দয়ারা বুগিয়ালে, কি একই লেখকের লেখা? কেন জানি বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
আমি আপনার লেখার একজন ভক্ত পাঠক, অনেক দিন আগে থেকে।
আগের লেখাগুলোতে ছিল, দেখার চোখ, সাথে সূক্ষ্ম রসবোধ, সর্বপরি জীবন বোধ।
আর এই লেখাতে কি ঘটছে? ভাসা ভাসা কমেন্টারি, আর ঝুলে যাচ্ছে মনে হলে টয়লেট জোকসের অবতারণা।
দুঃখিত এত কঠিন কথা বলতে হল বলে। পাঠকের মৃত্যু হলে কারও ক্ষতি হবে না, তার নিজের ছাড়া, আর লেখকের মৃত্যু হলে ক্ষতি আমাদের সবার।
LikeLike