– কেন এইসব পাগলামি?
– কী পাস?
– কী পাও?
– একঘেয়ে লাগে না?
– পাগলামিটা এই বয়েসে এসে না করলেই নয়?
– লোকে এই বয়েসে থিতু হয়, চাকরিবাকরি, সংসার – এইসবে বেশি মন দেয় – আপনি এই বয়েসে রাস্তায় নামবার কথা ভাবছেন? যখন বয়েস ছিল, তখন তো কোনওদিন ভাবতে দেখি নি?
প্রশ্নের রকমফেরে আমি খেই হারাই, বিব্রত হই, উত্তর পাই না খুঁজে। এ কেমন আমি বদলে গেলাম, আমি জানি না। খালি এটুকুনি বুঝি, আমাকে ডাকছে রাস্তা। নিশির ডাকের গল্প শুনেছি ছোটবেলায়, এখন নিজে সেই ডাক অনুভব করতে পারি। শেষরাতের হাইওয়ে আমায় চুম্বকের মত টানে, ঘুমে, আধোঘুমে। মাত্র দুবার আমি সেই ডাকে সাড়া দিতে পেরেছি, গত বছর। সে-ও প্রায় বছর পুরোতে চলল। চাইলেই বেরোতে পারি না, অনেক টান থাকে পেছনের দিক থেকে। তবু বেরোতে আমাকে হবেই, আর বেরোবই যখন, তখন সেই বেরোনটা একটা বড় স্কেলে করলে কেমন হয়?
গত বছরেই পর পর বেশ কিছু খবর উঠে এসেছে শিরোনামে, দেশের সীমানা পেরিয়ে লোকজন নিজের গাড়িতে পাড়ি দিচ্ছে বিদেশে। প্রথম দেখলাম একটি দম্পতির খবর, তারা ব্যাঙ্গালোর থেকে গাড়ি চালিয়ে গেছে প্যারিস। খবর পড়ে ইনিশিয়াল প্রতিক্রিয়া হলঃ এ-ও কি সম্ভব? ব্যাঙ্গালোর থেকে কাশ্মীর করার আগেই দুবার ভাবতে হয়, আর এরা ড্রাইভ করেছে একটা নয়, দুটো নয়, কম করে আট-নটা দেশ পেরিয়ে অন্য একটা মহাদেশে?
প্রাথমিক বিস্ময় কেটে যাবার পরে মনে হল, অসম্ভবই বা কি? রাস্তা যদি মাঝপথে কাটা না থাকে, তা হলে তো চলে যাওয়াই যায়। হ্যাঁ, অনেক রকমের প্রস্তুতি নিতে হয়, অনেক তথ্য জোগাড় করতে হয় পথের ব্যাপারে, কিন্তু যদি কেউ সত্যিই একাগ্রতার সঙ্গে এই সমস্ত প্রস্তুতি নেয়, তা হলে না পারারই বা কী আছে?
সুপ্ত ইচ্ছেগুলো মনের মধ্যে যখন একটা দুটো টুকরো জুড়ে জুড়ে দানা বাঁধছে, তখন পেলাম পরের খবর – এই দিল্লি থেকেই তিনজন মহিলা, গাড়ি চালিয়ে গেছেন লন্ডন। দিল্লি থেকে। ফিরে এসে তাঁদের দুটি প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় পড়লাম, যার প্রথমটা আমার জানা ছিল, দ্বিতীয়টা জানা ছিল না। প্রতিক্রিয়াদুটি হল, চাইলে হাইওয়েতে ড্রাইভ করে মেয়েরাও পৃথিবী ঘুরে আসতে পারে, পৃথিবীটা সত্যিই মোটামুটি নিরাপদ জায়গা; আর, শুধু ভারত নয়, পৃথিবীর সমস্ত দেশের পুলিশই কমবেশি করাপ্ট। ভিনদেশের গাড়ি দেখলে বা ড্রাইভার দেখলে তারাও লুঠবার চেষ্টা করে। ভারতের পুলিশ কোনও এক্সেপশন নয়।
এই রিপোর্টটা প্রথম পড়লাম Mums and stories নামে একটা ফেসবুক পেজে, ডিসেম্বর মাসে। পোস্টের লিঙ্ক (https://www.facebook.com/mumsandstories/posts/528194794010707) আমি দিয়েছিলাম ফেসবুকে, অনেকেই হয় তো দেখেছিলেন। তার পরে পরেই দেখলাম হিন্দুস্তান টাইমসের রোববারের ম্যাগাজিন Brunch-এ তাদের নিয়ে খবর বেরিয়েছে।
লক্ষ্য স্থির করলাম। তিনজন মহিলা, নিধি তিওয়ারি, সৌম্যা গোয়েল আর রশ্মি কোপ্পার – এদের নামে সার্চ করে আরও দু তিন জায়গা থেকে লিঙ্ক পেলাম, যতটুকু তথ্য জোগাড় করতে পারলাম, তাতে চোখ মোটামুটি কপালে উঠে যাবার জোগাড় হল। এরা প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। যে রাস্তা এরা বেছে নিয়েছে, সে রাস্তায় যাবার কথা সাধারণভাবে কেউই ভাববে না।
অনলাইনে যতটুকু রিসার্চ করা যায়, কাজ শুরু করলাম, মূলত দু তিনটে জিনিস শুরুতে জানা দরকার, এই জার্নি করতে কতদিন লাগে, কত খরচা হয়, আর কী কী প্রস্তুতি নিতে হয়। আমি তার সাথে আরও একটা জিনিস খুঁজতে লাগলাম – এইভাবে আরও কেউ এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে পাড়ি দিয়েছে কিনা।
পেলাম। দু হাজার দশ সালে তুষার আর পূজা – এক দম্পতি লন্ডন থেকে গাড়ি চালিয়ে এসেছে দিল্লি। তাদের প্রস্তুতি, খরচার জোগাড়, স্পনসরের জোগাড় – সমস্ত কিছু তারা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখে গেছে নিজেদের তৈরি করা সাইটে, প্রস্তুতির শুরুর দিন থেকে শেষ পর্যন্ত। এইখানে সেই প্রস্তুতি, স্বপ্ন-দেখা আর স্বপ্নপূরণের গল্প লেখা আছে।
তুষার আর পূজাই একমাত্র নয়, গত কয়েক বছরে আরও কয়েকটা এই ধরণের এক্সপিডিশন ঘটেছে, আর সত্যি বলতে কি, মহাদেশ পেরিয়ে অন্য দেশে যাওয়া – দু-চাকায় বা চারচাকায় চড়ে, এই ধরণের অ্যাডভেঞ্চার ঘটছে গত শতাব্দীর শেষ দশক থেকেই – ভারতীয়রা এতদিন এ ব্যাপারে পিছিয়ে ছিল, এখন আস্তে আস্তে ভারতীয়রাও নামছে রাস্তায়, সমমনস্ক দম্পতি, বন্ধু কিংবা নিতান্তই পথের সাথীরা হাত মিলিয়ে পাড়ি দিচ্ছে লম্বা লম্বা রাস্তা।
তুষাররা থাকে লন্ডনে, তাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেই করা যায় – কিন্তু প্রথমত তারা লন্ডন থেকে দিল্লি গাড়ি চালিয়ে এসেছে ২০১০ সালে – প্রায় ছ বছর হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাস্তার প্রকৃতি পাল্টেছে, কিছু দেশের নিয়মকানুনও হয় তো পাল্টেছে, লেটেস্ট খবর দিতে পারে একমাত্র এই তিনজন দুঃসাহসী মেয়ে, যারা সদ্য ঘুরে এসেছে এই রাস্তা, উলটোপথে, এবং নতুন পথে।
স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে চাই অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর। যোগাযোগ করতে হবে এদের সাথে, নিধি, সৌম্যা, রশ্মি। কিন্তু কীভাবে যোগাযোগ করা যায়? আজকাল ফেসবুকের কল্যাণে যোগাযোগ স্থাপন করা খুব বড় কোনও ব্যাপার নয়। তাই আবার ল্যাপটপ খুলে বসলাম – তাদের ওপর লেখা সমস্ত রিপোর্ট আবার পড়লাম, এবং জানতে পারলাম, সম্পূর্ণ জার্নিটা ড্রাইভ করেছে একা নিধি। মাত্র গত বছরেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী মেয়েদের নিয়ে নিধি একটা সংস্থা তৈরি করেছে – উইমেন বিয়ন্ড বাউন্ডারিজ। সেইখানে গিয়ে নিধির ইমেল অ্যাড্রেস জোগাড় করাটা খুব কঠিন কাজ ছিল না আদৌ।
উত্তেজনা চরমে উঠল যখন মেল করার দু দিনের মধ্যে নিধির উত্তর পেলাম, জানুয়ারিতে একদিন দেখা করব – এই রকম ঠিক হল। আমি মনে মনে প্রশ্নমালা সাজাতে থাকলাম, আর দয়ারা বুগিয়াল যাবার চেষ্টা করতে থাকলাম।
ধরুন, আপনাকে যদি জিজ্ঞেস করি, ভারত থেকে – আরও ছোট করে বললে, দিল্লি থেকে যদি বাই রোড লন্ডন যেতে চাই – কোন রুট ধরে যাবো? আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, রুট আছে একাধিক, কিন্তু কোন রুট ধরে যাবো?
মোটামুটি গোটাগুটি দু তিনটে রুটের কথা আপনি ভাবতেই পারেন – প্রথমটা শর্টেস্ট রুট, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুর্কী, বুলগেরিয়া, সার্বিয়া হয়ে জার্মানি, সেখান থেকে বেলজিয়াম বা ফ্রান্সের রাস্তায় লন্ডন। ঐ রুটই একটু ডাইভার্ট করে ক্যাস্পিয়ান সাগরের ওপর দিক দিয়ে করলে হবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাকস্তান, রাশিয়া হয়ে ইওরোপের রাস্তা। কিন্তু দেশগুলোর কয়েকটার নাম শুনেই আশা করি বুঝতে পারছেন কতটা বিপজ্জনক এই রাস্তা। লোকে তাই এই রুট বাছে না। অবশ্য, “বিপজ্জনক” একটা রিলেটিভ শব্দ। লোকে অ্যাভয়েড করে মানেই যে কেউ এই রাস্তায় ইওরোপ থেকে ভারতে আসে নি এমন নয়। এসেছে। কিন্তু সেই সময় আলাদা ছিল, আজ মধ্য এশিয়ার যে অবস্থা, তাতে করে এই রুট না নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
… আর কী রুট আছে? – কেন, আমাদের অতি পরিচিত লাদাখ দিয়ে! প্যাংগং লেকের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা চলে গেছে সোজা, সেই রাস্তা দিয়ে গেলে পড়ে চুশূল, ভারতের মধ্যে সবচেয়ে ঠাণ্ডা পড়ে যেখানে। এই চুশূল হচ্ছে ইন্দো-চায়না বর্ডার। মাঝেমাঝেই আন্তর্জাতিক সীমারেখা অগ্রাহ্য করে চীনা আর্মি ঢুকে পড়ে লাদাখে। চুশূলের অন্য প্রান্তটা হচ্ছে আকসাই চীন, চীনের সবচেয়ে রেস্ট্রিকটেড এলাকা, বিদেশীদের জন্য। তাই চীনের ভিসা পেলেও এই রাস্তায় চীনে ঢোকা, একেবারেই অসম্ভব।
পরের সম্ভাব্য রাস্তা হচ্ছে নেপাল দিয়ে। নেপাল-চীন-কিরঘিজস্তান-কাজাকস্তান-রাশিয়া হয়ে ইওরোপ। ২০১০ সালে তুষার আর পূজা এই রাস্তা দিয়েই ড্রাইভ করে এসেছিল ভারতে। সম্ভাব্য শর্টেস্ট রুট এটাই। যদিও পুরোপুরি হিমালয়টা টপকাতে হয় এই রাস্তায়, এবং জায়গায় জায়গায় রাস্তা বিপজ্জনকও বটে, কিন্তু যে একবার খারদুংলা জয় করেছে (একবার নয়, আসলে দু-বার), তার কাছে আর বাকি হিমালয় কী এমন ব্যাপার?
ব্যাপার একটা আছে। সেটার জন্যেই গত বছরে নিধি, রশ্মি আর সৌম্যাকে এই রাস্তার আশা ত্যাগ করে নিতে হয়েছিল সবচেয়ে লম্বা রুটটা। গত বছর মে মাসের বিধ্বংসী ভূমিকম্পে নেপালের বেশির ভাগ রাস্তা, বেশির ভাগ এলাকাই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে তারা যে রাস্তা দিয়ে শেষমেশ গেছিল, সেটা বোধ হয় সবচেয়ে লম্বা রুট বলা চলে।
দিল্লি থেকে গাড়ি চালিয়ে তারা গেছিল সোজা মণিপুর। সেখান থেকে মায়ানমার। সেইখান থেকে ওপর দিকে মোচড় দিয়ে চীন। তার পর একে একে কিরঘিজস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, রাশিয়া, ফিনল্যান্ড, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স। সবশেষে ব্রিটেন। প্রায় চব্বিশ হাজার কিলোমিটার। ৯৫ দিন। মনে আছে, পুরো রিপোর্টটা পড়বার পরে আমার হাঁ-মুখটা যখন বন্ধ হল, প্রথম যে চিন্তাটা মাথায় এসেছিল সেটা হচ্ছে – এটা আমাকে করতে হবে। না হলে আমি শান্তিতে মরতে পারব না।
রাতের ঘুম আবার নষ্ট হল। ঘুম আসছে না, অন্ধকারের মধ্যে ঝিলিক মেরে যাচ্ছে হাইওয়ের ধারের রিফ্লেক্টর। আমি মনে মনে প্রশ্নগুলোকে স্ট্যাক করছি। খরচ প্রচুর, কীভাবে টাকার জোগাড় হবে? চাকরি করি, কে আমাকে এতদিনের ছুটি দেবে? এতগুলো দেশের ভিসা, কে আমাকে সাহায্য করবে? আরও কতকিছু হয় তো আমি জানিই না, যা না জেনে আমার পথে নামা উচিতই হবে না – কে আমাকে জানাবে?
সুমিতকে ফোন করলাম। সেই সুমিত, লাদাখ যাবার পথে সোনমার্গে যার সাথে দেখা হয়ে গেছিল, পরে যার সাথে আমি বাকি ট্রিপ সম্পূর্ণ করি। সুমিত এখন থাকে পুণেতে। ছেলেটা মনে হয় ছোটবেলায় কখনও কুম্ভমেলায় গেছিল-টেছিল। ফোন ধরেই বলল, ও ইতিমধ্যে এদের ব্যাপারে সমস্ত কাগজের রিপোর্ট পড়ে ফেলেছে, এবং ও-ও স্বপ্ন দেখছে এই পুরো ট্রিপটা করার – মোটরসাইকেলে।
আমাদের চিন্তা এতটা মিলে যাবে, এটা আমি ভাবতে পারি নি। দিন গোনা শুরু হল, নিধির সাথে একদিন বসতেই হবে।
জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নিধির সাথে আবার যোগাযোগ করলাম। ঠিক হল ১৭ই জানুয়ারি আমরা কোথাও একটা মীট করব – কিন্তু বিধি বাম। তার আগের বুধবার থেকে আমি পড়লাম ভাইরাল ইনফেকশনে। জ্বর, কাশি, কনজেশন – বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা ছিল না কদিন। অবশেষে সময় হল পরের রবিবার, তেইশে জানুয়ারি।
তাজ হোটেলের পাশে একটি ক্যাফে কফি ডে মীটিং প্লেস হিসেবে খুব নামকরা, আমি জানতাম না। ফলে লোকেশনটিও সেভাবে জানা ছিল না। নিধি দুপুর দুটোর সময়ে সেখানে যখন আসতে বলল, আমি একটু তাড়াতাড়িই বেরোলাম। প্রজাতন্ত্র দিবসের ফুল ড্রেস রিহার্সাল একটু আগেই শেষ হয়েছে, রাস্তা খুলেছে ট্র্যাফিকের জন্য। ইন্ডিয়া গেটের পাশ দিয়ে আসতে তাই বিশেষ কোনও অসুবিধে হল না। দেড়টার সময়ে সিসিডি স্পট করে নিধিকে ফোন করতেই নিধি বলল, আরও পনেরো কুড়ি মিনিট লাগবে পৌঁছতে, আমি যেন অপেক্ষা করি।
অবশ্যই। সুন্দর নরম রোদ উঠেছে, অনেকদিন টালবাহানা করবার পরে দিল্লিতে অবশেষে শীত পড়েছে, অপেক্ষা করতে একটুও অসুবিধে হবার কথা নয়। এ পাশে তাজ হোটেলের এন্ট্রি, আর সিসিডির ঠিক পেছনেই শেরাটন হোটেল, ফ্রাসোঁয়া ওলান্দ রাষ্ট্রের অতিথি হয়ে এখানেই থাকবেন কদিন পরে, তাই রাস্তায় পুলিশ আর মিলিটারির আধিক্য।
অপেক্ষা করতে হল অবশ্য পনেরো কুড়ি মিনিটের থেকেও অনেকটা বেশি। দুপুর সোয়া দুটোর ঘর যখন পেরোচ্ছে ঘড়ির কাঁটা – নিধি ফোন করল, সিসিডির ডানদিকে আরেকটা ক্যাফে আছে, Too Mikki Tapas নামে। নিধি বসে ছিল একটা টেবিলে, প্রাথমিক আলাপ পরিচিতির পরে সরাসরি চলে গেলাম টপিকে। আমিও ভাবছি এই রাস্তায় চলবার কথা, আর ভাবছি বাইকে যাবো।
এইটুকু শুনেই নিধি বলল, তো ভাবার কী আছে? কী মনে করেছিলে? আমি বলব, না না, বাইকে সম্ভব নয়? ও সব অসম্ভব টাইপের শব্দ আমার ডিকশনারিতে নেই। ইট ইজ ভেরি ভেরি মাচ পসিবল।
কিন্তু ফিনল্যান্ড তো আর্কটিক সার্কলের ওপরে – প্রচন্ড ঠাণ্ডা নিশ্চয়ই? বাইকে ওইখান দিয়ে যাওয়া সম্ভব?
নিধি এবারেও কনফিডেন্ট – অসম্ভব কেন হবে? ওখানে কি লোকে বাইক চালায় না? শোনো, পুরোটাই নির্ভর করছে তুমি কতটা তৈরি তার ওপর। ঠাণ্ডায় বাইকিং তুমি করেছো আগে, সঠিক প্রিপারেশন নাও, আপাদমস্তক নিজেকে কভার করো, তারপরে বাইক চালাও। ঠাণ্ডা থাকলে ঠাণ্ডা লাগবে, কিন্তু তাই বলে সেটা বাইক না-চালানোর পক্ষে কোনও অজুহাত হতে পারে না।
খানিক চুপ করে থাকার পরে, নিধিই বলল, আর লন্ডন পর্যন্তই বা যাবার কথা কেন ভাবছো? লন্ডন তো পৃথিবীর শেষ নয় – ওখান থেকে বাইক শিপ করিয়ে নিয়ে আরও উত্তরে যাও – আইসল্যান্ড, গ্রীনল্যান্ড। কিংবা শিপ করিয়ে নেমে এসো আফ্রিকায়। আফ্রিকাটা কভার করো – ইউ নো, দুনিয়াটা গোল, এর কোনও শেষ নেই।
ঠিক কথা, এর কোনও শেষ নেই, কিন্তু সবার আগে যে প্রশ্নটা কুরে কুরে খাচ্ছিল আমাকে, সেইটা করে ফেললাম এইবারে – ছুটি। তুমি না হয় একটা এনজিও চালাও, একটা স্কুলের ফাউন্ডার মেম্বার – তো নিজের জন্য তিন সাড়ে তিন মাসের ছুটির ব্যবস্থা করাটা তোমার কাছে খুব অসম্ভব নয় – কিন্তু আমি তো সার্ভিস করি একটা কোম্পানিতে। সেখানে তিন মাসের ছুটি কীভাবে চাইব, সেটাই বুঝে উঠতে পারছি না। তোমার সঙ্গীরা – তারা কীভাবে ছুটি ম্যানেজ করেছিল?
নিধি একটু হাসল, সিকি, স্বপ্ন যখন কাউকে তাড়িয়ে বেড়ায়, তখন লোকে ঠিক ছুটির ব্যবস্থা করে নেয় – কেউ চাকরি ছেড়ে দেয়, কেউ অন্য কোনওভাবে চেষ্টা করে ছুটি নেবার। এগুলো অর্গানাইজেশন টু অর্গানাইজেশন ভ্যারি করে – তাই তোমাকে এই লড়াইটা নিজেই লড়তে হবে। আমার সঙ্গীদের অর্গানাইজেশন শুরু থেকেই এই ট্রিপটার পক্ষে ছিল, তাই তাদের ছুটি ম্যানেজ করতে অসুবিধে হয় নি।
আর খরচ?
হ্যাঁ, খরচ প্রায় মারকাটারি। আমাদের প্রত্যেকের প্রায় আট দশ লাখ টাকার মত খরচা হয়েছে।
আ-ট দ-শ লা-খ? মানে, এর কতটা নিজের পকেট থেকে গেছে? তোমরা স্পনসর পেয়েছিলে, সেটা জানি, কিন্তু স্পনসর নিশ্চয়ই পুরোটা দেয় নি?
নিধি আবার হেসে ফেলল – না, অবশ্যই না। তোমার কাছে প্রচুর, প্রচুর পয়সা থাকলে তুমি নিজের খরচায় এই ট্রিপটা করবার কথা ভাবতে পারো, কিন্তু আদারওয়াইজ, স্পনসর ছাড়া সম্ভব নয়। হ্যাঁ, আমি স্পনসর পেয়েছিলাম, মিনিস্ট্রি অফ এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স আমাকে অন্যভাবে সাহায্য করেছিল প্রতিটা দেশের ভিসা পাবার ব্যাপারে – তার পরেও আমাকে লোন নিতে হয়েছে এই ট্রিপটা করার জন্য। আমি এখনও ইএমআই দিয়ে যাচ্ছি। দিয়ে যাব আগামী কয়েক বছর।
আমি বললাম, তবু … যদি একটা ব্রেকআপ দাও।
নিধি বলল, দ্যাখো, সবচেয়ে কস্টলি আর সবচেয়ে হস্টাইল দুটি দেশ হচ্ছে মায়ানমার, আর চায়না। গাড়ির পারমিট, লোকাল হেল্প আর ভিসা মিলিয়ে চায়নায় খরচা হয়েছে মাথাপিছু তিন লাখ করে। মায়ানমারে এক-সোয়া এক লাখ মাথাপিছু।
– মানে, এখানেই প্রায় চার পাঁচ লাখ টাকা!
– ঠিক তাই। এই দুটো দেশ যদি কোনওভাবে বাইপাস করে যেতে পারো, বাকি দেশগুলোর জন্য ভিসা ফি খুব বেশি কিছু না। তোমাদের ট্র্যাভেল এক্সপেন্ডিচার অলমোস্ট অর্ধেক হয়ে যাবে।
– বাইপাস? কীভাবে?
– খুব সহজ। তোমরা বাইকে যাবে বলেই সম্ভব। বাইক কার্গোতে ফ্লাই করিয়ে নাও কিরঘিজস্তান। তোমরাও প্লেনে চলে যাও, ওখান থেকে রাইড শুরু করো। স্ট্রেট এক মাস সময় বাঁচবে, চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা বাঁচবে। ছুটি ম্যানেজ করতে পারলে তোমরা ইওরোপের প্রত্যেকটা দেশ ছুঁয়ে আসতে পারবে, কিংবা গ্রীনল্যান্ড চলে যেতে পারবে।
– আর ফুয়েল?
– নেগলিজিবল। পুরো ট্রিপে আমাদের ফুয়েল লেগেছে এক লাখ দশ হাজার টাকার।
– আইএনআর?
– ইয়েস, আইএনআর।
– আর মেজর খরচা কী?
– মেজর হচ্ছে, কারনেট। ওটা তোমাদেরও লাগবে।
কারনেট আমি জানতাম। এক দেশে রেজিস্টার্ড গাড়ি যখন অন্য দেশে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন এই কারনেট গাড়ির পাসপোর্ট ভিসার কাজ করে। কারনেট রেজিস্টার করায় যে সংস্থা (ভারতে সেটা ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশন) তাদের কাছে একটা পরিমাণ টাকা জমা রাখতে হয়। পরিমাণটা হচ্ছে, গাড়ির যা কারেন্ট ভ্যালু, তার পাঁচগুণ। কারনেটের ভ্যালিডিটি থাকে ৬ থেকে ১২ মাস। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যদি গাড়ি আবার রেজিস্টার্ড দেশে ফিরতে না পারে, এই টাকাটা ফোরফিট হয়ে যায়, আর ফিরে এলে পুরোটাই রিফান্ড পাওয়া যায়। এর অন্য একটা অপশন আছে, সেই অপশন অনুযায়ী গাড়ির কারেন্ট ভ্যালুর পঁচিশ পার্সেন্ট জমা দিতে হয়, ফিরে এলে তার অর্ধেক ফেরত পাওয়া যায়।
নিধি বলল, আমাদের স্কর্পিও গাড়ির জন্য এই কারনেটের টাকা জোগাড় করাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছিল। কিন্তু বাইকের জন্য এটা খুব বড় কিছু সমস্যা হবে না। সমস্যা হবে ভিসা পাবার সময়ে। সাধারণভাবে লোকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় প্লেনে। ফলে টিকিট শো করতে হয় যে অমুক তারিখে আমার ল্যান্ডিং – সেই অনুযায়ী ভিসা তৈরি হয়। আমাদের কেসটাই ছিল আলাদা। আমাদের প্রত্যেকটা দেশে ঢোকা বা বেরনো ছিল বাই রোড, আর আমরা আগে থেকে তার কোনও ডেট দিতে পারি নি। সব জায়গাতেই টেনটেটিভ ডেট দিতে হয়েছিল। বিদেশমন্ত্রক আমাদের প্রতিটা কেসে সাহায্য করেছিল, তাই আমরা সবকটা দেশের ভিসা সময়মতো পেয়েছিলাম, খুব বড় কোনও ঝঞ্ঝাট ছাড়াই।
– এটাই কি কারণ, গাড়িটাকে জাহাজে ফিরিয়ে আনা? নইলে দু-দুবারের ভিসার খরচা করতে হত? মাল্টিপল এন্ট্রি কোনও ভিসাই ছিল না?
– না। বাই রোড এন্ট্রি বা এক্সিটের ক্ষেত্রে মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা দেওয়া হয় না। সেই জন্যেই আমরা একই রাস্তায় ড্রাইভ করে ফিরে আসার কথা ভাবি নি। সেক্ষেত্রে খরচা কোথায় পৌঁছে যেত – কল্পনাও করতে পারি না।
– তোমরা তিনজনে গেছিলে। আমার ধারণা তোমরা তিনজনেই ভালো ড্রাইভিং জানতে। তবু পুরো রাস্তাটা তুমি একা ড্রাইভ করলে কেন?
নিধি মুচকি হেসে হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গী করল, ওরা শখের ড্রাইভার। সিটির বাইরে কখনও চালায় নি। প্রথমে বার খেয়ে আমার সঙ্গে বেরিয়ে পড়েছিল, কিন্তু খারাপ ওয়েদারের জন্য যখন মায়ানমারে আমাদের পাঁচদিন আটকে থাকতে হয়েছিল, দুদিনের মাথায় ওরা নাকে কান্না জুড়েছিল, বাড়ি যাবো – বাড়ি যাবো করে। পরে রাশিয়ায় ঢোকার আগে ওরা সত্যিই ফ্লাইটে বেরিয়ে গেছিল – পুরো রাশিয়াটা আমি একা চালিয়েছি, ওরা আবার আমাকে জয়েন করেছিল ফিনল্যান্ডে। লং ড্রাইভের যে আনন্দ, সে আনন্দ ওদের স্পর্শ করে না।
এবার আমিও হাসলাম নিধির সঙ্গে। সত্যি, এমন মানুষ আমি যে চিনি না, তা তো নয়। লং ড্রাইভের যে আনন্দ, যে এক্সট্যাসি, সে যে অনুভব করতে না পারে, তাকে তো জোর করে অনুভব করানো যায় না।
– নিধি, শুনেছি চীনে একটা নিয়ম আছে, চাইনিজ স্পিকিং কাউকে সঙ্গে নিয়ে তবেই ড্রাইভ করার অনুমতি মেলে – যতক্ষণ তুমি চীনের মাটিতে আছো –
– চীন আর মায়ানমার। দু জায়গাতেই নিয়ম আছে, তুমি যদি লোকাল ভাষা না জানো, তোমাকে লোকাল ভাষা জানা একজন গাইডকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে।
– কিন্তু বাইকে সেটা সম্ভব হবে কী করে? আমাদের লাগেজ থাকবে, তার পরে তো কাউকে পিলিয়নে বসিয়ে চালাতে পারব না!
– তার জন্যেও চিন্তা নেই। এই গাইড প্রোভাইড করার এজেন্সি আছে, এরা দু তিনটে গ্রুপকে একত্র করে একটা গাইডের সঙ্গে ছাড়ে, সে সঙ্গের কোনও একটা গাড়িতে বসে, বাকিদের তাকে ফলো করতে হয়। তোমার প্ল্যান যখন মেটেরিয়ালাইজ করবে, আমার সাথে আবার যোগাযোগ কোরো, আমি তোমার সাথে কনট্যাক্ট করিয়ে দেব। হয় তো গ্রুপ জড়ো করতে এক দুদিন থেকে যেতে হবে, কিন্তু লোকে এইভাবেই যায়, এটা বড় কোনও ইস্যু নয়। তুমি যখন যাবে, আমাকে বোলো, আমি দু তিনটে এ রকম এজেন্সির সাথে তোমার যোগাযোগ করিয়ে দেব, প্লাস কারনেটের জন্যেও যোগাযোগ করিয়ে দেব। আই’ল বি মোর দ্যান হাপি টু হেল্প ইউ গাইজ। আর তোমরা যদি সত্যিই বাইক ফ্লাই করিয়ে নাও কিরঘিজস্তানে, তা হলে এগুলো জানবারই দরকার নেই। জাস্ট টেক দা কারনেট অ্যান্ড ফ্লাই।
– আর কিছু টিপস? যা হয় তো আমার জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল, আমি করি নি?
– টিপস দিতে চাইলে টানা দু দিন ধরে টিপস দেওয়া যায়। কিছু থাম্ব রুল আছে যেগুলো তোমাদের সব দেশেই মেনে চলতে হবে। প্রথম হচ্ছে, বাজেট। আমরা দিনপ্রতি পঁয়ত্রিশ ডলার বাজেট রেখেছিলাম, খাওয়া, থাকা, হোটেল, আমাদের আরামসে চলে গেছিল।
– ডলার চলে সমস্ত জায়গায়?
– মূলত দুটো কারেন্সি নিয়ে আমাদের ডিল করতে হয়েছিল – ইউএসডি, এশিয়ার দেশগুলোর জন্য, আর ইওরোপে ইউরো। লন্ডনে অবশ্য জিবিপি, তবে ডলার দিয়ে কাজ চলে যায় ফরেনার হিসেবে।
– আর কিছু?
– আর … ট্র্যাফিক রুল সমস্ত দেশে মেনে চলার চেষ্টা করবে। প্রথম দুশো কিলোমিটার চারপাশের অন্য গাড়িদের দেখবে, তারপরে নিজেই শিখে যাবে। ফর এক্সাম্পল, মায়ানমারে, সামনের গাড়িটা যতক্ষণ না তোমায় সিগন্যাল দিচ্ছে, ততক্ষণ তুমি তাকে ওভারটেক করতে পারবে না। করেছো কি মামু ধরবে। ধরলেই ফাইন। পুলিশ সব দেশেই এক ধরণের করাপ্ট, ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, রুল ভাঙলেই – এমনকি না ভাঙলেও, ক্যাঁক করে এসে ধরবে, প্রথমে ফাইন চাইবে, দরাদরি করে পরিমাণটাকে কমানো যেতে পারে, সেটার জন্য আর রসিদ চেও না।
আমাদের গাড়িতে রাইট লেন ড্রাইভিং-এ সমস্যা হয়েছিল প্রথম দিকে। লেফট লেন ড্রাইভিং তো এই ইন্ডিয়ার পরে পেলাম সেই লন্ডনে। ওভারটেক করতে গেলে বাঁদিকে ঝুঁকে রাস্তা দেখতে হত। বাইকে তোমাদের এই অসুবিধেটা নেই, এর রাইট লেন লেফট লেন হয় না – জাস্ট বাইকের জন্য যে ডেজিগনেটেড লেন আছে, সেইটা ধরে চলে যাও।
– সব রাস্তায় কি বাইক অ্যালাওড? ইন্ডিয়াতেই এমন কিছু রাস্তা আছে, যেখানে টু হুইলার নিয়ে যেতে দেয় না, শুধু ফোর হুইলার চলে সেখানে। জার্মানির অটোবান-এর গল্প শুনেছি এত, সেখানে কি বাইক অ্যালাওড?
নিধি একটু চিন্তা করল, তার পর বলল, হয় তো অ্যালাওড, হয় তো নয় – আমি শিওর নই। তবে গুগল করলে পেয়ে যাবে। ইন ফ্যাক্ট আমি তো বাইক নিয়ে চিন্তা করি নি, তাই মনেও পড়ছে না অটোবানে টু হুইলার দেখেছি কিনা। তবে কোথাও যদি বাইক অ্যালাওড না হয়ে থাকে, তার আগেই সাইন দেওয়া থাকবে বা কিছু মার্কিং থাকবে। এসব নিয়ে এখনই চিন্তা না করলেও চলবে। আগে তো রাস্তায় নামো।
– আর অ্যাকোমোডেশন? নিশ্চয়ই আগে থেকে বুক করো নি?
– প্রশ্নই ওঠে না। বুক করেছিলাম, হোটেল বুকিং দেখাতে হয় ভিসা পাবার জন্য। কিন্তু বুকিং ডট কম থেকে সেইভাবেই বুক করেছিলাম, যেগুলো ফ্রি ক্যানসেলেশন ছিল, বা হোটেলে গিয়ে পে করার অপশন ছিল। বুক করলাম, প্রিন্ট আউট নিয়ে এমব্যাসিতে জমা দিলাম, ভিসা পাবার পরে সেগুলো এক এক করে ক্যানসেল করে দিলাম। পরে যখন যেখানে গেছি, সেখানে গিয়ে সার্চ করেছি হোটেল। একটা কাজ আমরা করতাম, প্রতিটা দেশে ঢুকে, প্রথমে আমরা একটা সিম কার্ড কিনতাম। লোকাল ডেটা সিম, জাস্ট ডেটা। জিপিএস চালানোর জন্য, হোটেল খোঁজার জন্য, আর দরকারমত বাড়িতে একটা দুটো কল করে নেওয়া যেত – হোয়াটস্যাপে বা ভাইবারে। চার জিবি, পাঁচ জিবি ডেটা সমেত সিম কার্ড মোর দ্যান সাফিশিয়েন্ট।
– হুঁ, এইটা একটা কাজের ইনফো দিলে তুমি। আরেকটা কথা বলো, এই স্পনসর জোগাড় করতে কতটা চাপ পেতে হয়েছিল?
নিধি একটু অন্যমনস্ক হল। ইউ জাস্ট কিপ ভেরি লো হোপ অন দ্যাট। যদি না খুব তাগড়া কনট্যাক্ট থাকে তোমার। আমাদের তেমন কিছু ছিল না। দশ জায়গায় চিঠি পাঠিয়েছিলাম। প্রথম পজিটিভ রেসপন্স পাই মাহিন্দ্রা ফার্স্ট চয়েস হুইলস-এর থেকে। পরে ওরাই আরও কিছু স্পনসর জোগাড় করে দেয়, কয়েক রাউন্ড আলোচনার পরে। ওরা যদি ‘হ্যাঁ’ না বলত, হয় তো এই ট্রিপ আমি করতে পারতাম না।
চিন্তাটা বাড়িয়ে দিল, নিধি। স্পনসর জোগাড় করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ এই ধরণের এক্সপিডিশনের ক্ষেত্রে। প্রতিটা পদে প্রতিটা সংস্থাকে কনভিন্স করানো খুব সোজা কথা নয়।
আরও খানিক গল্প হল। নিধির ছোটবেলার গল্প, আমার স্বপ্ন দেখার গল্প। কদিন আগে কলকাতার একটা কোনও কাগজ থেকে এসেছিল নিধির ইন্টারভিউ নিতে। তারা নিধিকে স্ক্রিনশট পাঠিয়েছে – কিন্তু নিধি বাংলা পড়তে পারে না। আমাকে মোবাইলে দেখালো স্ক্রিনশটগুলো – বসে বসে খানিক অনুবাদ করে পড়ে শোনালাম।
http://ebela.in/entertainment/ride-a-long-interview-with-nidhi-tiwari-1.277720
প্রায় ঘন্টাদুয়েক আড্ডা মারার পরে অবশেষে বিদায় নিলাম। নিধি বারবার জানাল, যে কোনও স্টেপে, যে কোনও বিষয়ে যদি কোনও রেফারেন্স, কোনও এন্ডর্সমেন্টের দরকার হয়, আমি যেন অবশ্যই যোগাযোগ করি।
নিশ্চয়ই করব, নিধি। আগে প্ল্যান তৈরি করি। আরও অনেক, অনেক প্রশ্ন উঠে আসবে, অনেক যোগাযোগেরও দরকার হবে। আমরা নিশ্চয়ই আবার কথা বলব, খুব শিগগিরই।
চলে আসার পরে মনে পড়ল, ব্যাগে করে ক্যামেরাটা নিয়ে গেছিলাম। ছবিই তোলা হয় নি – ভুলে গেছি একেবারে।
স্বপ্নেরা দানা বাঁধছে, তারা আস্তে আস্তে আকার পাচ্ছে। সামনে দুটো খুব বড় বড় চ্যালেঞ্জ, মাস তিনেকের ছুটির ব্যবস্থা করা, আর টাকা পয়সার জোগাড় করা। হয় তো সাত আট লাখ টাকায় হয়ে যাবে, হয় তো তার কমেই হয়ে যাবে। এবং আমি এটা জানি – আমাকে নিংড়ে ফেললেও এ টাকা বেরোবে না। আমাকে তাই সবার সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। এই ট্রিপ, যদি বড় কোনও স্পনসর না পাই, তা হলে আমাকে ক্রাউড-ফান্ডিংএর ব্যবস্থা করতে হবে। বড় স্পনসরের চেষ্টাও করব।
দু হাজার সতেরো টার্গেট রাখছি, একান্তই না হয়ে উঠলে, দু হাজার আঠেরো। একটা আলাদা ওয়েবসাইট খুলব, সেইখানে আমি নিয়মিত আপডেট দিতে থাকব, রুট প্ল্যান, লজিস্টিক্স, স্পনসরশিপের লিস্ট, ভিসার স্টেটাস – আর সত্যি ট্রিপটা করে ফেলতে পারলে আমি তো আপনাদের জন্য একটা সুবিশাল ট্র্যাভেলগ নিয়ে হাজির হব – সে নিয়ে নিশ্চয়ই আপনাদের মনে কোনও সন্দেহ নেই?
সবার সাহায্য দরকার। সবার কাছে আমি আগাম কৃতজ্ঞতা জানাই। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব আমার এই ট্রিপের ওয়েবসাইট তৈরি করে। আপনারা যদি নিজেরা না-ও পারেন, যদি আপনাদের কোনও বিশেষ কনট্যাক্ট থেকে থাকে, কোনও ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, কোনও নেতা-মন্ত্রী – একটু আমার সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবেন। কথা বলবার দায়িত্বটা আমার।
দেখুন, আমি আপনার আধবয়সি,কিন্তু আপনার হেন লেখা নেই যা আমি পড়িনি, আপনার ই মত এক অসম্ভব রকমের অটোমোবাইল এনথুসিয়াস্ট্ আমি, আপনি এক কাজ করতে পারেন এবং করা উচিত, এখনো সময় আছে, ১৯ ও ২০ এ ফেব্রুয়ারি গোয়াতে আয়োজিত India Bike Week এ চলে যান, মাত্র দুদিনের ব্যাপার, ভারতের সবচেয়ে বড় বাইকিং ফেস্টিভ্যাল, গোয়াতেই প্রতি বছর হয় মাত্র দুদিনের জন্য, বিদেশ বিঁভুইয়ের তামাম বাইকার, সংস্থা মজুত হয় এখানে, বাইকে চড়ে দেশ-বিদেশ পাড়ি দেওয়া ভুরি ভুরি লোকজন পেয়ে যাবেন। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে Powerdrift চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার ইউটিউবে, আপনি ওদের PD Army জয়েন করুন। এটা এই মুহুর্তের সবচেয়ে অসাধারন একটা অটোমোবাইল চ্যানেল এই দেশে, অসাধারন তাদের প্রতি একটা ভিডিও, ওদের আপনি google+ আর facebook এও পাবেন। ওদের প্রেজেন্টেশান্ গুলো অসাধারন, ওদের চিফ্ টেস্ট রাইডার Sagar Sheldekar এর মত বাইক পাগল মানুষ দেশে দুটো নেই, সারা পৃথিবী ঘুরেছেন, হেন বাইক নেই যা তার চড়া নেই, এছাড়া Akash Dingare যিনি ন্যাশন্যাল চ্যাম্পিয়নশিপ উইনার। ওখানে আপনি GEARS(Goan Enthusiast and Riders) নামে একটা গ্রুপ পাবেন, এভাবে একজন দুজন কে আলাদা করে জোগাড়ের দরকার নেই। আপনি Moto Run 2015 দেখেছেন? অরূনাভ মজুমদার – এক ব্যাঙ্গালোর নিবাসি বাঙালি আঠাশ দিনে ৭০০০ কিমি পথ পাড়ি দিলেন Tvs star city plus এ চড়ে ১১০ সিসির বাইক, সংস্থাই স্পনসর করল। ব্যাঙ্গালোর থেকে ব্যাঙ্কক
LikeLike
অনেক ধন্যবাদ তথ্যগুলোর জন্য। আমি চেষ্টা করব যোগাযোগ করার।
LikeLike