প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বের পর
পঁচিশে ফেব্রুয়ারি, দিন ৩
ঘুম ভাঙল প্রচণ্ড অস্বস্তির মধ্যে দিয়ে, ঘুরঘুট্টি অন্ধকার তখনও বাইরে। কী রকম যেন একটা সমস্যা হচ্ছে, নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
এমনিতেই আমার নাকের কার্টিলেজ ব্যাঁকা, বাঁদিকের ছ্যাঁদা দিয়ে আমি নিশ্বাস নিতে পারি না জন্ম থেকেই, কেবল ডানদিকটির ভরসায় এত বড় হয়েছি। সর্দিটর্দি হলে, কখনও ডানদিকের নাক বন্ধ হয়ে গেলে রীতিমত শ্বাসকষ্ট হয়, ন্যাসাল স্প্রে ইত্যাদি দিয়ে টিয়ে নাক খুলতে হয়। একদিকেই পাশ ফিরে ঘুমোতে হয়, কারণ অন্যপাশ ফিরলেই ডানদিকের নাক বন্ধ হয়ে যাবে, আর তখন আমার মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়া ছাড়া গতি থাকে না।
অস্বস্তিটা অনেকটা সেই রকমই, কিন্তু – এখন তো আমার ডান নাক বন্ধ নেই! দিব্যি খোলা আছে। তা হলে কি এএমএস অ্যাটাক করছে? নাকি ভারী লেপের তলায় অক্সিজেন ঢুকতে পারছে না বলে দমবন্ধ লাগছে?
নাকটা বের করলাম লেপের তলা থেকে, সাথে সাথে প্রায় জমে যায় আর কি, খানিক পরে আবার ঢুকিয়ে নিতে হল। এইটুকু কাজেই হ্যা-হ্যা করে হাঁফিয়ে গেলাম শুয়ে শুয়ে।
কতক্ষণ এইভাবে চলল জানি না, শেষরাতের দিকে আবার ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙল তখন বাজে সাড়ে সাতটা। ঝট করে উঠে পড়লাম।
হেঁটে বাইরে বেরিয়ে চারটে সিঁড়ি ভেঙে ওপরের দিকে উঠে বাইকের কাছে আসতেই দম ফুরিয়ে গেল। হাতের আঙুলের ডগাগুলো জমে গেল একদম। তীব্র ঠাণ্ডা। রাস্তার ওপরে তখন দুটো অচেনা মুখ। একজন একটা বুলেটে চেপে আছে, অন্যজন ঠেলে ঠেলে বুলেটটা ঢালু রাস্তা বেয়ে ওপরে তুলছে, তার পরে সেখান থেকে গড়িয়ে দিচ্ছে নিচের দিকে। আবার ঠেলে তুলছে।
সেই দুই কেরালিয়ান। কাল রাতে ফিরেছে কাজা ট্রিপ সেরে। আজ ফিরে যাবে শিমলার দিকে, সারারাতের ঠাণ্ডায় মোটরসাইকেলের ব্যাটারি বসে যায়, সকালে স্টার্ট নিতে চায় না, তখন এইভাবে ঠেলে গড়িয়ে গীয়ারে ফেলে স্টার্ট দিয়ে চালু করার চেষ্টা করতে হয়।
ব্যাপারটার সঙ্গে আমি পরিচিত। দিল্লিতে দু বছর আগে পর্যন্ত যখন খুউব ঠাণ্ডা পড়ত শীতকালে, সকালবেলায় বাইক স্টার্ট নিতে চাইত না। এদিকে আমার তো বাইক তো ডিটিএসআই, সুইচ স্টার্ট, কিক স্টার্ট করার কোনও প্রভিশনই নেই। চোক অন করে স্টার্ট দেবারও কোনও রাস্তা রাখা নেই, পুরোটাই ডিজিটাল ট্রিপল স্পার্ক ইগনিশন সিস্টেম। অতএব, হাত দেবার আগেই বুঝলাম আমার বাইকও একই অবস্থায় রয়েছে। তাকেও ধাক্কাধাক্কি করে জাগাতে হবে।
এবং, অক্সিজেনের যে পরিমাণ জোগান, কাজটা একা আমার দ্বারা সম্ভব হবে না।
অতএব, এগিয়ে গিয়ে ছেলেদুটির সাথে আলাপ জমালাম। বেশ মাইডিয়ার ছেলে। নাকো থেকে কাজার রাস্তা সম্বন্ধে বেশ আইডিয়া দিল, বলল, খুব খারাপ কিছু রাস্তা নয়, এই যেমন এসেছো এতটা রাস্তা, তেমনই। সকালে স্টার্ট করে কাজায় ঘণ্টাদেড়েক থাকো, ওখানে লাঞ্চ করো, করে আবার ফিরে এসো, আরামসে একদিনে হয়ে যাবে। গিয়ে থেকে আলাদা কিছু ভালো লাগবে না। এখানে যতটা বরফ দেখছো, ততটাই বরফ কাজাতেও, একটু বেশিকম।
হ্যাঁ, কাজার পরে আর বেশিদূর রাস্তা খোলা নেই – কিব্বার যাবার রাস্তায় ছ কিলোমিটার পর্যন্ত আমরা যেতে পেরেছিলাম, তার পরে বরফই বরফ, আইটিবিপি আর এগোতে দেয় নি, ওখান থেকে আমরা ফিরে এসেছিলাম।
ওরাই সাহায্য করল আমার মোটরসাইকেলটাকে ঠেলে ঢালু রাস্তার ওপরদিকে তোলার। খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুইচ টিপে স্টার্ট দেবার নিষ্ফল চেষ্টা করলাম। খরর খরর আওয়াজ তোলাই সার হল, বাইক স্টার্ট নিল না। এইবারে ভালো করে পজিশন নিয়ে বসলাম, কেরালিয়ান ছেলেদুটো পেছন থেকে ধরে আমাকে শুদ্ধ বাইকটা গড়িয়ে দিল ঢালু রাস্তার দিকে, একটু গড়িয়েই সেকেন্ড গীয়ারে ফেলে ক্লাচ ছেড়ে সুইচ টিপলাম, এবং, বিঙ্গো! বাইক স্টার্ট হয়ে গেল।
জীবনসন্ধি এবং তার সঙ্গী তখনও ঘুমোচ্ছে। বার দুয়েক তাদের ঘরের সামনে দিয়ে গেলাম এলাম, বিভিন্ন সুরে নাক ডাকার আওয়াজ পেলাম। ঘড়িতে বাজে আটটা পনেরো। সাড়ে আটটায় হোমস্টে-র ছেলেটা এল, আর এই দুই পাবলিকও উঠে পড়ল। আমি ততক্ষণে প্রায় তৈরি, ছেলেটাকে বললাম, জলদি চা করে দাও।
চা খেয়ে প্রোপোজালটা আমিই দিলাম, আর আমার সফরসঙ্গীরা প্রস্তাবটা লুফেও নিল – আমি বেরিয়ে পড়ছি, ওরা পেছন পেছন আসবে। কোনও অসুবিধে হলে আমি দাঁড়াব – ওরা পেছন থেকে এসে আমাকে ধরে নেবে।
কেরালিয়ান ছেলেদুটো বেরিয়ে গেল ফিরতি পথ ধরে, ওরা আজ সন্ধ্যের মধ্যে শিমলা পৌঁছতে চায়, বললাম, অতটা চেষ্টা কোরো না, রামপুরে থেকে যাও। তা সে ওরাই জানে ওরা কোথায় থামবে। আমি নটা নাগাদ একাই স্টার্ট করলাম কাজার পথে। লাগেজ সমস্ত রেখে গেলাম হোমস্টে-তে, সন্ধ্যের মধ্যে তো ফিরেই আসব, কাজায় থাকার প্ল্যান নেই আর।
সুন্দর রাস্তা। স্মুথ। প্রথমে খুব তাড়াতাড়ি চড়াই – হাইট বাড়তে থাকল, আট কিলোমিটার এগোতেই দেখি রাস্তার দুপাশে বরফ জমে আছে, আর সকালের প্রথম সূর্যের আলো পেয়ে সেই বরফ গলছে, রাস্তা আধা বরফ আধা জলে মাখামাখি। স্পিড একদম কমিয়ে দিলাম – এই অবস্থাতেই চাকা স্কিড করে বেশি, বুঝতেও পারছিলাম চাকা মাঝে মাঝে গ্রিপ হারাচ্ছে।
কিন্তু চাকার থেকেও বেশি সমস্যা করছে আমার হাত। আঙুলগুলো জমে বরফ, তীব্র কনকনে ব্যথা করছে আঙুলের ডগাগুলোতে – এদিকে আমার হাতে দু লেয়ার গ্লাভস, নিচে উলের গ্লাভস, তার ওপরে সেই লাদাখি মাইনাস টুয়েন্টি গ্লাভস, তাতেও ঠাণ্ডা বাগ মানছে না, ক্লাচ আর ব্রেক ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে, ধীরে ধীরে সাড় চলে যাচ্ছে, ক্রমশ যন্ত্রণাটা বাড়তে বাড়তে উঠে আসছে কাঁধের দিকে।
কিন্তু থামার উপায় নেই, থামলে আরাম মিলবে না, পাহাড়ের যে দিক দিয়ে যাচ্ছি, সে দিকে এখন সূর্যের আলো নেই, ছায়ায় ছায়ায় চলছি, এখানে জায়গায় জায়গায় রাস্তার ওপরেই শক্ত বরফ জমাট বেঁধে আছে। এখানে দাঁড়ালে আরও বেশি ঠাণ্ডা লাগবে। আরেকটু এগোই, রাস্তা ঘুরে যদি রোদের দিকে যায়, তখন দাঁড়ানো যাবে।
আরেকটু এগোতে রোদ পেলাম। একটা নিরাপদ বাঁক দেখে বাইক দাঁড় করালাম, গ্লাভস খুলে পাগলের মত হাত ঘষে যাচ্ছি, হাতে সাড় ফিরছে না। সুমদো তখনও কুড়ি কিলোমিটার।
টানা কুড়ি মিনিট বাদে মনে হল হাতে সাড় ফিরেছে। আঙুলের ব্যথাগুলো আর নেই। এবার আবার শুরু করা যেতে পারে। সামনে যতদূর দেখা যাচ্ছে, আর চড়াই নেই, এবার ডিসেন্ড – উতরাই। মানে বরফ আপাতত আর থাকবে না।
সত্যিই পরের কয়েক কিলোমিটার আর বরফ পেলাম না। চাংদো গ্রামে এসে পৌঁছলাম। পঁচিশ কিলোমিটার, ঘড়িতে তখন সকাল সওয়া দশটা। সুমদো বা সমদো আর দশ কিলোমিটার।
এই দশ কিলোমিটার আমার জীবনের স্মরণীয় একটি রাইড হয়ে থাকবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
এখন ঘরের নিশ্চিন্তির মধ্যে বসে অনায়াসে বলে দেওয়া যায় যে, এই দশ কিলোমিটার রাস্তাই স্পিতির – অন্তত কাজা পর্যন্ত রাস্তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাস্তা। কিন্তু যখন চলেছিলাম, একেবারে জানা ছিল না কোথা দিয়ে চলছি। রাস্তা একটা আছে অবশ্য, কিন্তু সে রাস্তায় কোনও পিচ বা কংক্রিট নেই, শুধু পাথর, নুড়ি থেকে শুরু করে বড় সাইজের বোল্ডারে ভর্তি। মাথার ওপর ঝুলে আছে নড়বড়ে পাথরসমেত পাহাড় – দেখলেই মনে হয়, যে কোনও মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে নেমে আসবে মাথার ওপর।
আসেও। ইতিউতি ডাম্পার, ব্রো-র লোকজন রয়েছে কাজে ব্যস্ত। না, রাস্তা তৈরির কাজে নয়, এখানে রাস্তা তৈরি করাই যায় না, এদের কাজ হচ্ছে নিরন্তর রাস্তা থেকে বড় পাথর সরানো, যাতে গাড়ি যেতে আসতে পারে। কয়েক কিলোমিটার যেতেই দেখলাম সেই মারুতি জিপসির ধ্বংসাবশেষ।
দেখে চেনা যায় না এমনভাবে চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেছে। গতকাল, সম্ভবত এই সময়েরই ঘটনা। পেছনের সীটের দিকটায় রক্তের দাগ ছড়ানো রয়েছে, তারও পেছনদিকে ছত্রখান হয়ে ছড়ানো রয়েছে বাঁধাকপি এবং আরও কিছু সব্জির টুকরোটাকরা। যেন একটু আগেই কেউ তাদের ছুরি দিয়ে এলোপাথারি কেটেকুটে ফেলে রেখে গেছে এখানে।
বাইক অসম্ভব নাচছে, পাথরের ওপর দিয়ে চালানো প্রচণ্ড মুশকিল, আট-দশ কিলোমিটারের বেশি স্পিড তোলাই যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে এগোতে থাকলাম, কিন্তু জাস্ট পাঁচশো মিটার এগোবার পরেই কী যেন একটা মনে হল, একটা জোড়ালো আওয়াজ শুনলাম। সামনে, না পেছনদিকে? ভাবতে ভাবতেই দেখি, আমার ঠিক সামনে – এই পঞ্চাশ মিটার দূরে, ধাঁই করে রাস্তার ওপর এসে পড়ল একটা বড় সাইজের পাথরের চাঙড়।
শুটিং স্টোন! সর্বনাশ করেছে। বাইক থামিয়ে ওপরদিকে তাকালাম। হ্যাঁ, ঠিক তাই – আমার একটু সামনেই পাহাড়ের একদম ওপরের দিক থেকে বৃষ্টির ধারার মত গড়িয়ে নেমে আসছে ছোটমেজবড় বিভিন্ন সাইজের পাথর। পড়ছে ঠিক সেইখানে যেখানে আর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার বাইক পৌঁছে যেত। কী ভেবে থামিয়েছিলাম কে জানে, থামিয়েছিলাম বলেই প্রাণে বেঁচে গেলাম।
এবার কোনদিকে যাই? একটু সামনেই পড়ছে, ইমপ্যাক্টে আমার মাথার ওপরেও যে পাথর পড়বে না, কী গ্যারান্টি আছে? আগে যাই না পিছে?
দুদিকেই তাকালাম। না, আমার মাথার ঠিক ওপরে কোনও পাথর গড়িয়ে আসছে না, কিন্তু এগনোরও জায়গা নেই, পিছনোরও জায়গা নেই, আমি একেবারে শুটিং স্টোন জোনের ঠিক মাঝখানে কোনও এক জায়গায় সম্পূর্ণ ভালনারেবল কন্ডিশনে দাঁড়িয়ে আছি। শেল্টার নেবার মত জায়গা নেই, এবং আগেপিছে ত্রিসীমানায় কোথাও কোনও লোকজনের দেখা নেই।
টানা পনেরো মিনিট ধরে পাথর ঝরল। তার পরে নিজে নিজেই থেমে গেল। আমি, আরও দশ মিনিট স্টিল হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, ছবি তুলব, এমন অবস্থাও ছিল না তখন। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গেছি। পেরোতে হবে, পেরিয়ে যেতে হবে। জানি না, সুমদো এখনও কত দূর।
সুমদো এসে গেল আর চার কিলোমিটারের মাথায়। ছোটো মিলিটারি এসট্যাবলিশমেন্ট, এখানে নিজের আর গাড়ির এন্ট্রি করাতে হয়। এন্ট্রি নেবার যে ঘরটা, সেইখানেই কাঁচের মত শক্ত বরফ জমে আছে, একটু দূর থেকে বোঝাও যাচ্ছে না। বাইক নিয়ে গিয়ে ওখানে দাঁড় করাতে যেতেই পিছলে গেলাম। প্রচুর কষ্টে শেষ মুহূর্তে ব্যালান্স সামলে ধীরে ধীরে পিছোলাম, বরফের বাইরে বাইক পার্ক করলাম।
সওয়া এগারোটা। কিছু খেয়ে নেওয়া উচিত। সামনেই একটা ছোট টি-স্টল স্ন্যাকস কাউন্টার টাইপের। মোমো আর চায়ের অর্ডার দিলাম। দেখি, আমি খেতে খেতে দুই মূর্তি এসে পৌঁছয় কিনা। ফোন তো এখানে কাজ করবে না কারুর, সুতরাং, যোগাযোগের কোনও উপায়ও নেই, আর আমার খুব একটা ইচ্ছেও নেই। আসুক ওরা নিজেদের মত।
মোমোতে মুখ দিয়েই খাবো-না-ফেলব অবস্থায় পৌঁছে গেলাম। হায় হায়, সুমদো এসেও যে মোমোতে চিকেন পাওয়া যাবে না – কে জানত! পুউরো বাঁধাকপি আর মূলোসেদ্ধ ঠাসা। এদিকে এক প্লেট অর্ডার দিয়েছি, আটখানা মোমো পড়ে আছে প্লেটে। … কী আর করা, চা দিয়েই কোনও রকমের কোঁৎ কোঁৎ করে ছখানা ভ্যাজ মোমো খেয়ে ফেলতে হল, সামনে এখনও অনেকটা রাস্তা বাকি, কী হবে, কী জুটবে, কে জানে।
মোমো খাওয়া হল, চা খাওয়া হল, এদিকে জীবনসন্ধি আর সুখদীপের তখনও কোনও পাত্তা নেই। ঘড়িতে প্রায় পৌনে বারোটা বাজে। দুটোর মধ্যে কাজা পৌঁছতে না পারলে ফেরা চাপ হয়ে যাবে।
ঐ দোকানেই জানিয়ে দিলাম আরও দুজন আসবে একটা মোটরসাইকেলে, ওদের জানিয়ে দিও যে আমি এগিয়ে গেছি। কাজা এখান থেকে আর ঠিক পঁচাত্তর কিলোমিটার, সামনেই বড় স্ল্যাবে লেখা আছে।
বাইক স্টার্ট করতেই সামনের রাস্তার ধার থেকে একটা ছেলে হাত দেখাল। পরের গ্রামে যাবে, এই রাস্তাতেই, পাঁচ কিলোমিটার দূরে, আমি যদি ওকে একটু নিয়ে যেতে পারি। – এমনিতে তো অসুবিধে নেই, লাগেজ নাকো-তে ছেড়ে এসেছি, পেছনের সীট ফাঁকাই আছে, কেবল রাস্তাটা খুবই খারাপ। কেবল নুড়ি আর পাথরে ভরা।
বসিয়ে নিলাম ছেলেটাকে, খানিকটা পথ তো চলুক সঙ্গে কেউ। ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে আলাপচারিতা চলতে লাগল যেতে যেতে, একটু পরে এসেও গেল তার গ্রাম, টিপটা। অনেকবার ধন্যবাদ দিয়ে নেমে গেল ছেলেটা – তার নাম জানা হয় নি।
টিপটার পর থেকেই রাস্তা আবার ওপরের দিকে উঠতে থাকল, আর সাথে সাথে ক্রমশ খারাপ হতে থাকল। দুধারে বরফ জমে আছে, আর মাঝখানটায় শুধু পাথর, বিভিন্ন সাইজের, শেপের, কোথাও ঢিবি হয়ে আছে, কোথাও নিচের দিকে গর্ত। ভাগ্যিস আজ বাইকের ওপর আমি ছাড়া আর কিছু নেই, নইলে এই অবস্থায় চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াত, একা একা। অনেকটা দূরে দূরে কখনও সখনও ব্রো-এর কর্মীদের দেখা মেলে, হেল্পমেট-রোদচশমা পরে তারা বেলচা দিয়ে রাস্তা থেকে বরফ সরাচ্ছে কোথাও কোথাও। কিন্তু সে আর প্রয়োজনের তুলনায় কতটুকু! বাকি রাস্তা তো বরফ, কাদা আর পাথরেই ভর্তি।
উচ্চতা অনেকটা বেড়েছে, হাতের কনকনানি এতক্ষণে যদিও অভ্যস্ত হয়ে গেছে – কিন্তু দু-দুখানা গ্লাভস পরার পরে সেই হাতে মোটরসাইকেলের ক্লাচ অ্যাক্সিলারেটর কন্ট্রোল করা খুবই কঠিন ব্যাপার। তার ওপর, প্রতি ইঞ্চিতে রাস্তার লেভেল এমন বিকটভাবে বদলাচ্ছে, যে স্টেডি স্পিড মেনটেন করাই যাচ্ছে না।
এবং, একটা সময়ে, পারা গেলও না। রাস্তা আড়াআড়ি কাটা, বেশ ডিপ গর্ত, মানে গাড়ি চলে যেতে পারে, কিন্তু গর্ত দেখে আমি বাইক স্লো করলাম, এদিকে খাড়া চড়াই, গর্তে চাকা গড়াবার পরে অ্যাক্সিলারেটর বাড়াতেই বাইক গেল বন্ধ হয়ে, গর্ত থেকে সামনের চাকাটাও বের করতে পারলাম না। ধড়াম করে পড়লাম বাঁদিকে।
আমার কিছুই হয় নি, কারণ পড়ন্ত বাইকের তলা থেকে পা সরিয়ে নেবার কৌশলটা আমার আয়ত্তের মধ্যে। কিন্তু এইবারে এই শুয়ে থাকা বাইককে তুলব কী করে? কাল তো আমার দম বেরিয়ে গেছিল প্রায় নাকোতেই। আজ, এইখানে, এতটা ওপরে, এমনিতেই অক্সিজেন প্রচণ্ড কম, শ্বাস নিতে বেশ অসুবিধে হচ্ছে, এই অবস্থায় যদি আমি বাইক তোলার চেষ্টা করি, তা হলে বড় বিপদ কিছু হতে পারে, আমার ফুসফুসের অত জোর নেই।
কী করব? বাইকটাকে এইখানে রেখে উল্টোদিকে নেমে দেখব? একটু দূরেই ব্রো-র লোকজন কাজ করছিল না?
নামতেই পেছনে ফেলে আসা অনেকটা রাস্তা চোখের সামনে দেখতে পেলাম। জনমানবশূন্য, অন্তত চার কিলোমিটার। বহু, বহুউউ দূরে একটা একটা রোড রোলার দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু সেটা বোধ হয় এখান থেকে কিছু-না-হোক ছ সাত কিলোমিটার হবেই। অতটা হেঁটে যাওয়া আর আবার ফিরে আসা সম্ভব নয়।
তা হলে অপেক্ষা করব, কেউ এ রাস্তায় আসা অবধি? কেউ না কেউ তো আসবেই। যতক্ষণেই হোক।
চুপ করে দু মিনিট দাঁড়ালাম। শ্বাসপ্রশ্বাস এখনও স্বাভাবিক, ফলে একটা চেনা গন্ধ নাকে এল।
পেট্রল।
বাইক কাত হয়ে পড়ে আছে, কোনও জায়গা থেকে পেট্রল চুঁইয়ে পড়ছে।
না, পেট্রল নষ্ট করা আমি অ্যাফর্ড করতে পারব না। যা করার নিজেকেই করতে হবে। বাইক আমাকেই তুলতে হবে। শক্ত করে মাটিতে পা গেঁথে, বাঁহাতে এক হ্যান্ডেল, আর ডান হাতে পেছনের সীট ধরে হেঁইয়ো টান দিলাম, বাইক একটু উঠল ঠিকই, কিন্তু আমার দম ফুরিয়ে গেল, পুরোটা তুলতে পারলাম না। … কী করব এবারে?
আবার দু মিনিট দম নিলাম। এবার আন্দাজ করতে পারছি কতটা শক্তি লাগানো দরকার বাইকটা তুলতে। মনে মনে তার প্রস্তুতি নিয়ে আবার এগোলাম বাইকের দিকে। কী মনে হল, এইবারে একটু পজিশন পাল্টালাম। বাঁ হাতে হ্যান্ডেলটা ধরলাম ঠিকই – কিন্তু ডানহাতে পেছনের সীট ধরার বদলে তারও পেছনে, পালসারের এই মডেলের পেছনে দুটো শিং লাগানো থাকে, সেই শিং ধরলাম চেপে।
এবং বিঙ্গো! এতটুকুও অতিরিক্ত শক্তি লাগাতে হল না, বাধ্য ছেলের মত বাইকটা উঠে পড়ল যেন আমার দুহাতে, অত্যন্ত সহজেই আমি তাকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিলাম।
এই হল তা হলে মেকানিজম! এতক্ষণ আমি ঠিক জায়গায় হাত লাগাচ্ছিলাম না, ফলে দু হাতে লোড ডিস্ট্রিবিউশন সমান হচ্ছিল না, তাই এত মেহনত করতে হচ্ছিল। বলিহারি এই বাইকের ডিজাইনারকে, এমন সুন্দরভাবে বানিয়েছে – জাস্ট ঠিকভাবে ধরলেই শুয়ে থাকা বাইককে তুলে ধরে দাঁড় করিয়ে দেওয়া যায়, একদম ভার লাগে না।
প্রথম চেষ্টাতেই বাইক স্টার্ট নিল, একদম নর্মাল। আরও সাবধানে এগোতে থাকলাম, একটু পরেই টাবো। ছোট টাউনশিপ। এইবারে আর ওপরে ওঠা নেই, ডিসেন্ড, ডিসেন্ড। ধীরে ধীরে বরফের পরিমাণ কমতে লাগল, একটা দুটো ইতস্তত বাড়ি দেখা যেতে লাগল – টাবো এসে গেলাম সহজেই।
পা টনটনাচ্ছে – কিন্তু, থামার দরকার নেই, সাড়ে বারোটা বাজে। মনে হয় না দুটোর মধ্যে কাজা ঢুকতে পারব, সেক্ষেত্রে আড়াইটে টার্গেট করতে হবে। চরৈবেতি, চরৈবেতি। এগিয়ে গেলাম। কাজাতেই থামব।
টাবো থেকে কাজা প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার। এখন রাস্তা খানিকটা ভালো। দুদিক ক্রমশ সাদা থেকে সাদাতর হয়ে যাচ্ছে। অপূর্ব সুন্দর লাগছে – বুঝতে পারছিলাম, মনের মত সঙ্গী না পেলে এই রাস্তায় একা চালানোর মত আনন্দ আর কিছুতে নেই।
ছোট্ট একটা ঝরনা, জমে বরফ হয়ে আছে, পাশ দিয়ে যাবার সময়ে একটুখানি দাঁড়ালাম। ছবি তুললাম।
তার পরেই হঠাৎ একটা সমতলভূমি মত, চারদিকে ফ্ল্যাট জমি, বরফে ঢেকে সাদা হয়ে আছে, মাঝখান দিয়ে সরু রাস্তা একেবারে সোজা চলে গেছে। দূরে দেখা যাচ্ছে রাস্তার দুদিকে লাল রঙের কিছু গাছ। সে যে কী অপরূপ, এই প্রথম খারাপ লাগল নিজের ওপর, ক্যামেরা নিয়ে আসতে ভুলে গেলাম শেষ মুহূর্তে।
কাজা পৌঁছবার ঠিক পনেরো কিলোমিটার আগে আবার চড়াই শুরু হল, একেবারে ধপাধপ এঁকেবেঁকে অ্যাসেন্ড করে ওপরের দিকে উঠে গেছে রাস্তা। খুব সাবধানে পাথরের ওপর দিয়ে কাদামাখা বরফের ওপর দিয়ে বাইক চালিয়ে চালিয়ে কাজা শহরে ঢুকলাম, তখন বাজে দুটো চল্লিশ।
আকাশে মেঘ জমেছে। এইবারে একটু টেনশন হল, মেঘের রঙ দেখে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে, মানে স্নো-ফল। আর এমনিতেই রাস্তায় এত বরফ, এর ওপরে স্নো-ফল হলে আর আমায় ফিরতে হবে না – কাজাতেই আটকে যাব আজ। আর এইসব জায়গায় একবার আটকানো মানে – রাস্তা ক্লিয়ার না হলে ফেরা যাবে না।
কাজা প্রায় বন্ধ। প্রথমেই চোখে পড়ল পরপর বাড়িঘর, একটা বড়সড় গ্রাউন্ড, সেখানে কিছু গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। খুব সামান্য কিছু লোকজন রাস্তায় চলাফেরা করছে। এক বয়স্কা মহিলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম, এখানে পেট্রল পাম্প কোথায়? … কাজাতে শেষ পেট্রল পাম্প আছে, সেটা আমি জানি।
বৃদ্ধা একেবারেই হিন্দি বলতে পারেন না, বুঝতেও প্রায় পারেন না। বাইকের ট্যাঙ্কটা দেখিয়ে বললাম, পেট্রল, কাঁহা?
এইবারে বুঝলেন, খুদে খুদে চোখদুটো হাসিতে বুজে গেল – সামনের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন, মন্দির, মন্দির, মন্দির কে নিচে হ্যায় পেট্রল পাম্প।
এগোলাম। সত্যিই সামনে একটা প্যাগোডা টাইপের মন্দির। বৌদ্ধ মন্দিরই হবে সম্ভবত। তার ঠিক পাশে একটা ছোট বাড়ির গায়ে লেখা, ডেকাথলন। বাব্বা, এই কাজাতে ডেকাথলনের দোকান? – অবিশ্যি বন্ধ সে-ও। মন্দির পেরোতেই চোখে পড়ল পেট্রল পাম্পের সাইন। ছোট্ট ফুয়েল স্টেশন একটা, ইন্ডিয়ান অয়েল। যিনি তেল ভরছিলেন, তিনি যেচেই আলাপ জুড়লেন – এই সময়ে তো প্রায় কেউ আসে না, পরশুই রাস্তা খুলেছে, তুমি দিল্লি থেকে আসছো? কাজাতে থাকবে আজকে?
তার পরে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললেন, মৌসম খারাব হ্যায়। বরফ গিরেগা। কাজাতে থাকার কথা ভুলেও ভেবোনা, এখনই নাকোতে নেমে যাবার জন্য এগোও। একবার স্নো-ফল শুরু হলে আটকে যাবে। ঝামেলায় পড়বে।
আমি বললাম, আমার দুই বন্ধু আসবে, ওরা পেছনে পড়ে গেছে। এলে আপনার এখানেই হয় তো তেল ভরবে, ওদের একটু বলে দেবেন ফিরে যাবার কথা। আমিও তা হলে ফিরছি, রাস্তায় দেখা পেলে আমিই বলে দেব।
জীবন আর সুখদীপের কেন একবারও পাত্তা পেলাম না, কে জানে! অনেকটা সময় নিয়ে তো এসেছি, থামতে থামতে, ছবি তুলতে তুলতে। দেখি, ফেরার পথে তো দেখা হতেই হবে – নইলে বুঝব, ওরা নাকো থেকেই বেরোয় নি।
স্পিতি বিজয় আমার শেষ, এবার একই পথে ফেরা। এই রাস্তাতেই এগিয়ে গেলে কিব্বার, কুনজুম পাস পেরোলে রহতাং পৌঁছে যাওয়া যায়, যার অন্য দিকে আছে মানালি। সেইটা পুরোটা করতে পারলে ফুল সার্কিট হত, কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তা একেবারেই সম্ভব নয়। কুনজুম পাস খুলবে সেই জুন মাসে, তার আগে নয়।
আর কোথাও থামাথামি নেই, ফিরতে হবে। … কিন্তু আমি কি একটু তাড়াহুড়ো করে ফেলেছিলাম? এবার সামনে পনেরো কিলোমিটার রাস্তা উতরাই, নিচের দিকে ঢাল, ব্রেক-গিয়ার-ক্লাচের ঠিকঠাক কম্বিনেশন না লাগালে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ঘটল। কাজা থেকে একটু এগোতেই, বাইক পিছলে গেল বরফ মাখা কাদায়, এবং আমি আছড়ে পড়লাম।
এক মুহূর্ত দেরি না করে একটু আগে শেখা জ্ঞান কাজে লাগালাম। হ্যান্ডেল আর শিং ধরে সাথে সাথে বাইক খাড়া করে ফেললাম। আর, এক ফোঁটাও দম নষ্ট হল না।
যাওয়া আসার রাস্তায় দু দুবার পতন হয়ে গেল। এবার, আরও সাবধানে। এখন চেনা রাস্তা, জানি কোথায় পাথরের ঢিবি আছে, কোথায় বরফ আছে, আর কোথায় খানাখন্দ আছে।
কিন্তু এখন যেন ফেরার পথে বরফটা অনেক বেশি লাগছে। প্রায় সোয়া তিনটে বাজে, রোদ পড়ে আসছে, অন্ধকার হবার আগে নাকো পৌঁছতে পারব তো? মাঝে আবার সেই শুটিং স্টোন জোন পড়বে।
উল্টোদিক থেকে একটা ডাম্পার ট্রাক আসছে। আসুক, যথেষ্ট জায়গা আছে, আমি সাইডে সরে বাইক স্লো করলাম। কিন্তু তা-ও ট্রাকটা এতবার হর্ন মারছে কেন? চট করে পেছনদিকে তাকালাম, না, পেছনেও কোওও গাড়ি নেই। আমি সাইড করে একেবারে বরফের ওপরে গিয়েই দাঁড়ালাম। পেরিয়ে যাক।
কিন্তু ট্রাকটা পেরোল না, আমার ঠিক পাশটিতে এসে দাঁড়িয়ে গেল। ট্রাকের পেছনের ছাদ থেকে উঁকি মারল দুটো পরিচিত মুণ্ডু। জীবন আর সুখদীপ। সঙ্গে তাদের বুলেট।
খ্যাখ্যাখ্যা করে হাসতে ইচ্ছে হচ্ছিল – বোধ হয় হেসেওছিলাম, নাক মুখ পুরো ঢাকা থাকার জন্য ওরা দেখতে পায় নি। সুমদো পেরোবার পরেই ওদের বুলেটের টায়ার পাংচার হয়ে গেছিল। ঘন্টাদুয়েক বসে থেকে ওরা এই ট্রাকের দেখা পায়, সেইখানে তাদের বুলেট চাপিয়ে তারা কাজার দিকে রওনা দিয়েছে – এখন লক্ষ্য হচ্ছে কাজায় গিয়ে এই বাইকের পাংচার সারানো।
ঘড়ি দেখেচো কত্তা? সোয়া তিনটে বাজে। এখন কাজা যাবে, বাইক সারাবে, তারপরে ফিরবে?
সুখদীপ নির্বিকার। সে রকম হলে থেকে যাবো আজ – কাজা।
আকাশটা দ্যাখো। ওখানকার লোকজনই বলছে আজ স্নোফল হবে, তা হলে কিন্তু কাল ফেরাটাও আনসার্টেন হয়ে যাবে।
সুখদীপ তাতেও নির্বিকার, কোই বাত নেহি। তুম কাল নিকল জানা রামপুর কে লিয়ে, আগর হম রুক গয়ে তো দো দিন বাদ হি নিকলেঙ্গে, কী ফর্ক প্যায়ন্দা!
অত্যন্ত ভালো কথা। মানে ভার্চুয়ালি একাই ছিলাম জার্নিতে, এবার পুরোপুরি একা হলাম, অফিশিয়ালি। টাটা বাইবাই করে ট্রাক এগলো কাজার দিকে, আমি এগোলাম নাকোর দিকে।
মাঝে আর একবার পড়েছিলাম বরফের মধ্যে, তার বাইরে আর কিছু হয় নি। সাথে সাথেই বাইক তুলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলাম, এবং সাথে সাথে চলা শুরু করে দিয়েছিলাম। বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সুমদো থেকে বেরিয়ে সেই পাথর পড়া এলাকাতে গিয়ে ঢুকলাম। না, যদিও আর পাথর পড়ে নি ফেরার পথে, তবু দশ কিলোমিটার দমবন্ধ করা আতঙ্ক, সেই চিঁড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া মারুতি জিপসির পাশ দিয়ে আবার ফেরা, এবং নাকোতে আমার হোমস্টেয় ঢুকলাম, ঘড়িতে তখন ঠিক সাতটা বাজে।
এসে শুনলাম, দুইমূর্তি ফোন করেছিল এই হোমস্টের ছেলেটাকে, জানিয়ে দিয়েছে ওরা আজ ফিরবে না, কাল ফেরার চেষ্টা করবে। ছেলেটা চুক চুক করে ঘাড় নাড়ল, গলদ ডিসিশন লিয়া উনো নে। আজ বরফ গিরেগা তো ও লোগ ফাস জায়েগা।
ছেলেটার মোবাইল থেকে আরেকবার সিকিনীকে ফোন করে স্টেটাস আপডেট দিয়ে দিলাম। তার পরে বসলাম উনুনের পাশে। সন্ধ্যে হবার সাথে সাথে গুটি গুটি এগিয়ে এসেছে বরফের চাদর। বাইরে বেরোলে সাথে সাথে হাত পা জমে যাচ্ছে। বললাম, আজ চিকেন পাওয়া যাবে?
ছেলেটা বলল, হ্যাঁ যাবে।
তো লাগাও, চিকেন আর রুটি।
One thought on “বরফ ঢাকা স্পিতি – চতুর্থ পর্ব”