জলু – চতুর্থ পর্ব

তৃতীয় পর্বের পর

আজ আর তাদের নাম মনে নেই, একজন ছিল, দাড়িওলা, বেঁটে করে, সে-ই আমাকে বলল, তোর নাম জিনু?

পরের প্রশ্নগুলো এল অ্যাজ এক্সপেক্টেড, কেন র‌্যাগিং পিরিয়ড কাটিয়ে এসেছি ইত্যাদি ইত্যাদি।

আমার প্রচন্ড আড়ষ্ট ভাব দেখে একজন এগিয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে হাসল, ভয় পাস না রে, র‌্যাগিং পিরিয়ড শেষ, আমরা কেউ র‌্যাগিং করতে ডাকি নি তোকে। তুই কাল কলেজ মোড়ে জামাইদার দোকানে বসে গান গাইছিলি?

আড়ষ্টভাবেই বললাম, হ্যাঁ। কি জানি, কলেজ মোড়ে গান গাওয়া অপরাধ কিনা! পাশের আরেকজন বলল,আরে ক্যাজু, ক্যাজু, পোঁদু বলল, তুই নাকি হ্যাভক গান গাইছিলিস! তোর গান শুনতে ডেকেছি।

আর বলতে হল না। ফোর্থ ইয়ার হস্টেল থেকে বেরোলাম পরদিন সকাল সাতটায়। রাত আড়াইটে পর্যন্ত গানবাজনা হয়েছিল। সেই দাড়িওলা দাদা, ঝাড়া এক ঘন্টা মাউথ অর্গ্যানে বিভিন্ন গান বাজিয়ে শুনিয়েছিল। বাকিরাও যে যেমন পারে গলা মিলিয়েছিল। সময়ে সময়ে চা, চানাচুরের সাপ্লাই ছিল নিয়মিত। রাতে ওরাই আমার জন্য মেস থেকে খাবার তুলে এনেছিল। একসাথে খেলাম, তারপর আবার গান। বাকি রাতটা একজনের ঘরে শোবার জায়গাও হয়ে গেল।

hostel_2
দু-নম্বর হস্টেল। এখানেই কেটেছে আমার তিন বছর। ডানদিকে অর্ধেক দেখা যাচ্ছে হস্টেল এক, আর একদম পেছনের দিকে ফোর্থ ইয়ারের হস্টেল, হস্টেল তিন। একদম পেছনে চা বাগান – ডেঙ্গুয়াঝাড় টি এস্টেট।

এই প্রথম হস্টেল জীবনের স্বাদ পেলাম। মস্তি কা পাঠশালা। অ্যায়শ্‌শালা!

এ দিকে আমার রুমমেটদের হাল খারাপ। সারারাত ফিরি নি, ফোর্থ ইয়ার হস্টেলে গিয়ে খোঁজ নেবার মত সাহসও কারুর ছিল না স্বাভাবিকভাবেই। প্রায় প্রত্যেকে চিন্তা করেছে আমার জন্য।

পরদিন সকালে যখন অক্ষত ফিরলাম, তখন সক্কলে হাঁউমাউ করে একসাথে কোশ্চেন করতে শুরু করল। নিজেকে বেশ হিরো হিরো মনে হচ্ছিল। সেই সকালটা এখনও মনে আছে।


তখনও কিছুই জানি না ক্যাম্পাস কত বড়, কোথায় কী আছে। পলিটেকনিকের ভেতর দিয়ে ধরধরি নদী পেরিয়ে কলেজ। সেখানে অ্যাডমিশন নিয়ে সোজা হস্টেল। মাঝে একবার বাবার সঙ্গে সার্কিট হাউস যাওয়া।

বিকেলে সদ্যপরিচিত রুমমেটদের সাথে যাওয়া গেল কলেজ মোড়, টিফিন সারতে। একটা সরু রাস্তা চলে গেছে কলেজের সামনে দিয়ে। এটার নাম ময়নাগুড়ি বাইপাস। কলেজ গেটের আশেপাশে ইতস্তত ছড়ানো কিছু গুমটির দোকান, চা-টিফিনের দোকান, সাইকেলের টায়ার টিউব পাংচার সারানোর দোকান, মুদিখানা, সেলুন, সিগারেটের দোকান আর গোটা দুই এসটিডি বুথ। মুলত খরিদ্দাররা সকলেই এই কলেজের ছেলেপুলে। তাই কলেজ মোড় জুড়ে এদেরই আধিপত্য। ন্যাচারালি। তাদেরই একজন হয়ে আমি একটা দোকানে বসে কামড় দিলাম ব্রেড টোস্টে।

গল্পে গল্পে সন্ধ্যে হয়ে এল, বিল হল নটাকা। দশ টাকার নোট দিয়ে ফেরৎ পেলাম এক টাকার একটা নোট। তখনও এক টাকার কয়েন বহুল প্রচলিত হয় নি, নোট চলত, দু টাকার কয়েনও ছিল দুষ্প্রাপ্য। এক টাকার নোটটা দেখে কেমন যেন লাগল, ঠিক চেনা এক টাকার নোট মনে হল না। খুব নতুন নোটও নয়, কী জানি, এক টাকার নোটের অন্য কোনও ডিজাইন হবে হয় তো। এদিকে দোকানে জ্বলছে একটা টেমি, আবছা আঁধারি আলোয় বোঝা মুশকিল। ওপরে কোণায় ইংরেজিতে ওয়ান লেখা আছে দেখে আমি নিশ্চিন্ত হয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিলাম টাকাটা।

রুমে পৌঁছে আলোর সামনে রেখে দেখি, আরে, এ তো ভারতের নোটই নয়! এই তো পরিষ্কার লেখা, রয়্যাল গভর্নমেন্ট অফ ভুটান! ইংরেজির সাথে একটা দুর্বোধ্য ভাষা লেখা নোটটা জুড়ে, সেটা ভুটানিজই হবে।

বেশ রোমাঞ্চ হল, দোকানদার নিশ্চয়ই খেয়াল না করে আমাকে একটা ভুটানি নোট দিয়ে দিয়েছে, বেশ কালেকশনে রাখার মত একটা জিনিস। আমি এমনিতে কারেন্সি কালেক্ট করি না, সে শখও নেই, কিন্তু ফোকটে একটা বিদেশি নোট পেলে কে-ই বা ছাড়ে!

রাতের দিকে দুর্লভ সম্পত্তি দেখাবার মতন করে রুমমেট অতীনকে দেখালাম টাকাটা, ‘এই দ্যাখ, আজ পেয়েছি।’ অতীন আদৌ ব্যাপারটা পাত্তা না দিয়ে নিজের পার্স খুলে বেশ কয়েকটা এক টাকা দুটাকা পাঁচটাকার নোট দেখালো, সবকটাতেই লেখা রয়্যাল গভর্নমেন্ট অফ ভুটান।

লে হালুয়া! হাসতে হাসতে অতীন জানালো, এটা কোনও বিশাল ব্যাপার নয়, জলপাইগুড়ি জুড়ে ইন্ডিয়ান কারেন্সির সাথে একই রেটে ভুটানি কারেন্সিও চলে। একশো পাঁচশোর নোটও লেনদেন হয়। এখানে ভুটানি নোট পাওয়া কোনও ব্যাপারই নয়!

সত্যিই ব্যাপারটা তাই। চার বছর জলপাইগুড়িতে থাকাকালীন প্রচুর ভুটানি নোট ঢুকেছে এবং বেরিয়েছে আমার মানিব্যাগ থেকে। বাড়ি ফিরে আমার অনেক বন্ধুকেই বিলিয়েছি ভুটানি দু-পাঁচ টাকার নোট। দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপারটা যত অভিনব, জলপাইগুড়িতে সেটা একেবারে জলভাত।

পরে আবার এই সেদিন, ২০১৭ সালে যখন গেছিলাম মোটরসাইকেল নিয়ে, পরিবর্তন তো অনেক দেখেছিলাম, সাথে এটাও লক্ষ্য করেছিলাম, জলপাইগুড়িতে ভুটানি নোট আর চলে না।

সেই সময়ে, এক ভুটিয়া টাকা হত ইকুয়াল টু পঁচাশি ভারতীয় পয়সা। পাসপোর্টের বালাই যেহেতু নেই, এবং জলপাইগুড়ি আর ভুটান যেহেতু অনেকটা কমন বর্ডার শেয়ার করে (এখন আর অতটা করে না, জলপাইগুড়ির তখনকার মহকুমা আলিপুর দুয়ার এখন নিজেই একটা জেলা, ভুটান বর্ডার মূলত তার সাথেই এখন), ফলে খুব সহজেই প্রচুর ভুটানি টাকার লেনদেন ঘটে চলত অবৈধ ভাবে। আমি যে এই এক টাকা ফেরৎ পেলাম দোকানদারের কাছ থেকে, সেটা আসলে ভারতের পঁচাশি পয়সা।

দ্বিতীয় দিন ক্যাম্পাস ঘুরে দেখলাম। সত্যিই সুবিশাল জায়গা নিয়ে তৈরি এই ক্যাম্পাস। শিলিগুড়ি থেকে সোজা রাস্তা চলে গেছে ময়নাগুড়ি হয়ে। এটিই একমাত্র রাস্তা বাকি পৃথিবীর জন্যে, শিলিগুড়ি হয়ে আসাম, ভুটান, বাংলাদেশ সড়কপথে যাবার জন্য। হাইওয়ে জলপাইগুড়ি শহরের ভেতর দিয়েই গেছে, কেবল এই অংশটুকু শহরের বাইরে দিয়ে বাইপাস করে দেওয়া হয়েছে, বাইপাস গিয়ে মিশেছে কুড়ি কিলোমিটার দূরে ময়নাগুড়িতে। শহরের বাইরে, সেই ময়নাগুড়ি বাইপাসের ওপর অবস্থিত জলপাইগুড়ি গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ। কলেজের মেন গেট দিয়ে ঢুকলেই প্রথমে কলেজের মূল বিল্ডিং, এর পর বিশাল বিশাল ফাঁকা মাঠের মধ্যে সরু সরু রাস্তার কোনওটা চলে গেছে ওয়ার্কশপের দিকে, কোনওটা গার্লস হস্টেলের দিকে, কোনওটা প্রফেসর্স কোয়ার্টার্স পার করে শেষ হয়েছে করলা নদীর ধারে। মাঝে একটা মাঠ ডিম্বাকৃতিতে জাল দিয়ে ঘেরা, এখানে ক্রিকেট ম্যাচ থেকে ফুটবল ম্যাচ, অ্যানুয়াল স্পোর্টস ইত্যাদি সমস্ত আয়োজিত হয়ে থাকে, এর নাম ওভাল। ওভালের ঠিক সামনেই পর পর দাঁড়িয়ে আছে জগদীশচন্দ্র বোস হল, জে সি বোস হল বা হস্টেল টু, প্রফুল্লচন্দ্র রায় হল, পি সি রয় হল বা হস্টেল ওয়ান, দুটোই একে অপরের ঠিক মিরর ইমেজ। এক্কেবারে এক ডিজাইন, জাস্ট ডানদিকটা বাঁ দিক, বাঁ দিকটা ডানদিক।

হস্টেলের পেছনে আরেকটা বিশাল মাঠ, তার শেষ প্রান্তে হস্টেল থ্রি, সত্যেন বোস হল। সেই যেখানে গেছিলাম সাত দিনের মাথায়। এটার অনেক অনেক গল্প আছে, সে পরে করা যাবে, শুধু আপাতত জানিয়ে রাখি, এই হস্টেল নতুনদের পক্ষে আদতে একটি ভুলভুলাইয়া। তিনটি আইডেন্টিকাল ব্লক পাশাপাশি জুড়ে এই হস্টেল, এর যে কোনও একটি ব্লকে থাকলে আলাদা করে বোঝা যাবে না কোন ব্লকে আছে এবং বাইরে যাবার রাস্তা কোনদিকে। এই হস্টেলের ছাদে যাবার সিঁড়ি একটা জানলার ভেতর দিয়ে পৌঁছতে হয়। হস্টেলটা তৈরি হয়েছিল নকশাল আমলে, এবং এই অদ্ভুত স্থাপত্যের দৌলতেই এই হস্টেলের তথা এই ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক অনেক কাহিনি, নকশাল আমলের। এক সময়ে এই করলার জলে ভেসে গেছে অনেক ছাত্রের লাশ।

তিন নং হস্টেলের ঠিক পেছন থেকে শুরু হয়েছে চা বাগান। ডেঙ্গুয়াঝাড় টি এস্টেট। এটা লিপ্টনের চা বাগান। এবং, বলবার অপেক্ষা রাখে না যে, এই চা বাগানই ছিল কলেজ ক্যাম্পাসের সবচেয়ে মোহময় জায়গা।

চা বাগান শুনে অনেকের মনে হতে পারে আমাদের ক্যাম্পাস বোধ হয় পাহাড়ে। কিন্তু না, এই চা বাগান সমতলের বাগান। পাহাড় জলপাইগুড়ি শহরের ধারেকাছে নেই। সমতলের বলে এই চা বাগানের চা খুব উৎকৃষ্ট কোয়ালিটির হয় না। তবে সব রকম দামের চা-ই তো বাজারে ছাড়তে হয়!

চা গাছের সম্বন্ধে আমরা ইস্কুলে পড়েছি, প্রচুর জল লাগে, কিন্তু গাছের গোড়ায় যেন জল না দাঁড়ায়। তাই চা গাছ পাহাড়ে হয়। তা এই সমতলে, তরাইতে, জলের তো অভাব নেই, পাশে করলা থেকে প্রচুর জল পাওয়া যায়, কিন্তু জল দাঁড়ানোর সমস্যা থেকে তো সহজে মুক্তি পাওয়া যায় না! খাল কেটে তাই সে জল বের করে দেওয়া হয়। সেই চা বাগানের জলে দুটো আস্ত নদীই তৈরি হয়ে গেছে, যাদের জন্ম ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজের ক্যাম্পাসে। একটার নাম ধরধরি, পলিটেকনিক আর আমাদের কলেজের মধ্যে দিয়ে যে বয়ে গেছে, যার ওপর দিয়ে রিক্সা চেপে আমি প্রথম এসেছিলাম, আরেকটার নাম রুকরুকা। এই ধরধরি আর রুকরুকার অববাহিকাতেই দাঁড়িয়ে আমাদের জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ, ওরফে জলু। পেছনে বয়ে যাচ্ছে করলা নদী, যাকে সমরেশ মজুমদারের উপন্যাস গল্পে খুব দেখা যেত, এখন গুগল করতে গিয়ে জানতে পারলাম একে নাকি টেমস অফ জলপাইগুড়ি বলে ডাকা হচ্ছে। কৃশকায় নদীর জলে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়ে আকাশে রঙের বিচ্ছুরণ ঘটাত।

চা বাগানের ঠিক বুক চিরে চলে গেছে রেললাইন। সিঙ্গল লাইন। এই রেললাইন বাকি ভারতের সঙ্গে নর্থ ইস্টের যোগসূত্র। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে নর্দার্ন ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ের এই লাইন গেছে নিউ কোচবিহার হয়ে গুয়াহাটি ডিব্রুগড় বঙ্গাইগাঁও। একটাই লাইন, কোনও ডাবল লাইন নেই। দূর থেকে আমাদের ঘরোয়া তিস্তা, কামরূপ এক্সপ্রেস তো আসেই, এ ছাড়াও বাকি সমস্ত উত্তরপূর্বের ট্রেন, যেমন ব্রহ্মপুত্র, অবধ অসম, গুয়াহাটি রাজধানী, সমস্তই এই পথ দিয়ে যায়। চা বাগানের বুক চিরে ডিজেল ইঞ্জিনের ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে যখন ট্রেনগুলো বেরিয়ে যায়, বড় সুন্দর লাগে দেখতে, এর সৌন্দর্যের ঠিক ভাষায় বর্ণনা হয় না।

চা বাগান কোথায় গিয়ে শেষ, কেউই কখনও দেখি নি, হস্টেলের ছাদ থেকেও চা বাগানের শেষ দেখা যায় না। অন্যপ্রান্তে খালি আকাশ। খালি বটে, তবে এই খালি আকাশই জাদু দেখায় নভেম্বরের মাঝ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এটা ক্যাম্পাসের উত্তর দিক। ঝকঝকে হেমন্তের ওয়েদারে আকাশের গায়ে ফুটে ওঠে হিমালয়, পুরো নীল রংয়ের। আর সেই হিমালয়ান রেঞ্জের মাথায় মুকুটের মত ঝকঝক করে বরফে ঢাকা শৃঙ্গেরাঃ পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জ।  লোকে পয়সা খরচা করে এদের দেখতে আসে কত দূর দূর থেকে, আমরা হস্টেলের ছাদে বসে, নিজের বেডে বসে দিনের পর দিন দেখেছি কাঞ্চনের রূপ, কখনও টকটকে লাল, কখনও আগুনের হল্কার সোনালী হলুদ রং, কখনও ধবধবে সাদা, কখনও বিষণ্ণ নীল। তবে বছরে ঐ একটা সময়েই দেখা যেত, এক মাসের জন্য। তার পরেই কুয়াশায় ঢেকে যেত তরাই ডুয়ার্স। সে আরেক রূপ।

শুরুর দিকে আস্তে আস্তে এ সব আবিষ্কারের নেশা আমাদের বুঁদ করে রেখেছিল অনেকদিন। পরে সব কিছুর সঙ্গেই অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম। সূর্যাস্তের সাথে সাথে রং বদলানো কাঞ্চনের রূপ আর তেমন দাগ কাটত না আমাদের মনে।

সব মোহময় সৌন্দর্যেরই একটা ভয়ঙ্করতা থাকে। আমাদের ক্যাম্পাসের চা বাগানেরও ছিল। ঐ রূপের টানে প্রচুর ছেলে ভাবুক এবং কবি বনে যেত। হয় তো আজও যায়। বিকেল হলেই খাতা পেনসিল হাতে গুটি গুটি চলে যেত করলার ধারে, কিংবা চা বাগানের নিরালায়। কবিতা লিখত। এই কবিতা লেখার বাতিকে আজ পর্যন্ত যে কত ছেলে অ্যানুয়ালে ব্যাক পেয়েছে, তার হিসেব নেই। তবু, সৌন্দর্যের টান এমনই, রেজাল্ট বেরনোর পর তিনদিন মন খারাপ, চতুর্থদিনই আবার চলে যেত, সেখানেই, মন খারাপ কাটাতে। ও হ্যাঁ, আমাদের কলেজে সেমেস্টার ছিল না, হাফ ইয়ার্লি আর অ্যানুয়াল হত।

জলপাইগুড়ির প্রধান ঋতু দুটো। বর্ষা আর শীতকাল। বাকিগুলো তেমন প্রমিনেন্ট নয়। আর ওভারঅল জলবায়ু স্যাঁতসেঁতে। সব সময়েই প্রচন্ড ঘুম পায়, শীতকালে কম্বলের নিচ থেকে বেরোতে ইচ্ছে করে না। কলেজের ভাষায়, প্রচন্ড ল্যাদের ওয়েদার।

প্রথম দফায় হস্টেলে ছিলাম ঠিক একুশ দিন। ষষ্ঠীর দিন থেকেই কলেজে ছুটি পড়ে, কিন্তু যে হেতু অধিকাংশ ছাত্রেরই বাড়ি কলেজ থেকে বহু বহু দূরে, বছরে দু তিনবারের বেশি যাওয়া সম্ভব হয় না, সেই জন্য ছুটিগুলোকে ছাত্রদের তরফ থেকে এক্সটেন্ড করে দেওয়া হত, পূজোর ছুটি আনঅফিশিয়ালি শুরু হয়ে যেত মহালয়ারও তিন চারদিন আগে থেকে। তবে সে সবও অনেক পরের ঘটনা, অন্তত প্রথম বারের জন্য কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পেছনে মূল ড্রাইভিং ফোর্সটাই ছিল, ‘বাড়ি’ ফেরা। বাড়ি ছেড়ে আর থাকা যাচ্ছিল না। একুশটা দিনকে মনে হচ্ছিল একুশ মাসের সমান।

তবু এরই মধ্যে নিজেদের মতন করে হস্টেল লাইফ এনজয় করতে কেউই ছাড়ি নি। একপাল গরু প্রথম ঘরছাড়া হলে যা যা হয়, প্রায় সব হয়েছিল। ক্লাস সবে শুরু হয়েছে কি হয় নি, প্রথম পরীক্ষা ডিসেম্বরে, সকলের বইই জোগাড় হয় নি, এমতাবস্থায় পড়তে বসা বাতুলতা। অতএব, দিন রাত এর ওর তার ঘরে বিছানা চেয়ার টেবিল দখল করে শুধু আড্ডা, গ্যাঁজ।

ফার্স্ট ইয়ারের জনতার প্রথম আলাপচারিতায় অবশ্যম্ভাবী টপিক মূলত দুটো, কার কেমন র‌্যাগিং হল, আর কার কার ইতিমধ্যেই প্রেমের অভিজ্ঞতা আছে, এবং তারই ল্যাজ ধরে কে প্রেমে কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে।

বর্ষাকালেই প্রেম আর ভূতের গপ্পো ভালো জমে। আমাদের ইনটেক হয়েছিল আগস্ট মাসে, তখন বাংলায় শ্রাবণ মাস, তরাই ভেসে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। প্রকৃতি এত সবুজ আর এত নীল আকাশ, আমরা প্রায় কেউই এর আগে দেখি নি। সন্ধ্যে বেলায় লোডশেডিং, ক্যাম্পাসের ব্যাকআপ জেনারেটর খারাপ, কাঁপা কাঁপা মোমবাতির আলোয় ঘিরে বসে জমতে থাকে আঠেরো ঊনিশ বছর বয়েসী একদল ছেলের আড্ডা। বিষয় প্রেম।

বেশ কিছু ছেলে বেরলো যারা অলরেডি প্রেম করে, আমরা, যারা তখনও প্রেমিকার ব্যাপারে ন্যারো ইন করে উঠতে পারি নি, কিংবা সম্ভাব্য প্রেমিকাকে প্রেম নিবেদন করে উঠতে পারি নি জলপাইগুড়ি আসার আগে, তারা এই সব সফল প্রেমিকদের প্রতি মনে মনে ঈর্ষা জন্মিয়ে ফেললাম। টিনএজের শেষ মাথা, শরীর মন তখন অনেক রকম অবাস্তব কল্পনা করে চলে বিপরীত লিঙ্গকে ঘিরে, জাগরণে, স্বপ্নে, স্বপ্নদোষে। ভদ্রতার আবরণে মুড়ে যতটা সম্ভব প্রশ্ন করা যায় সফল প্রেমিকদের, করে চলেছিলাম আমরা। তারাও ভদ্র ভদ্র ভাবে উত্তর দিয়ে চলেছিল। তাদেরই মধ্যে কেউ কেউ আবার বেয়াড়া রকমের ডেস্প্যারেট ছিল। ‘তুই ওকে (চোখ মেরে ইশারায় বুঝিয়ে) দেখেছিস? টাচ করেছিস?’ এই ধরণের প্রশ্নের উত্তর আসত, ‘ওর পিঠের ঠিক মাঝখানে একটা তিল আছে; আর বলব না – এ বার তোরা বুঝে নে’। এই সব ধরণের কবি কবি ডায়ালগে তখন আমাদের সর্বাঙ্গ শিহরিত হয়ে উঠত, আর কল্পনা লাগাম ছাড়াত।

অনেক রকমের গল্প বেরোল। কেউ সদ্য প্রেমিক, আসার আগে প্রেম নিবেদন করে সফল হয়ে এসেছে, প্রেমিকার হাতটুকুও ভালো করে ধরে উঠতে পারে নি তখনও। কেউ কেউ ভেটেরান প্রেমিক, বগলে চুল গজানোর আগে থেকে প্রেম করে আসছে, চুমু টুমু তো ছোটখাটো ব্যাপার, একে অপরের শরীর অবধি চিনে ফেলেছে অনেকদিন। কেউ কেউ একতরফা ভালোবেসে ফেলেছে তার কোচিংয়ের মেয়েটিকে, প্রপোজ করার সাহস করে উঠতে পারে নি। ইত্যাদি নানা রকমের অভিজ্ঞতার সম্ভারে জানা গেল, জলুতে এই ব্যথা খাওয়া ছেলেপুলেদের ফোস্‌লা বলে ডাকা হয়; এফ ও এস এল এ, ফ্রাস্ট্রেটেড ওয়ান সাইডেড লাভার্স অ্যাসোশিয়েশন।

প্রোপোজ করে প্রত্যাখ্যাত হওয়া ছেলেপুলেও ছিল – আমি নিজে ছিলাম এই দলে। ইলেভেনে যে মেয়েটির ওপর খুব মায়া জন্মে গেছিল তুলসীবাবুর বাংলা ইংরিজির কোচিংয়ে, তাকে একদিন সাহস করে মনের কথা বলতে গিয়ে রূঢ় ‘না’ শুনে চোখ তুলে তাকাতে পারি নি আর তার দিকে। এর পর সে ব্যাচ বদলে নেয়, তার পরে আর তার সাথে দেখা হয় নি – হয়েছিল দূর থেকে, জলপাইগুড়ি চলে আসার কয়েকদিন আগে, মা আমাকে নিয়ে চুঁচুড়ার নামকরা জামাকাপড়ের দোকান ‘বিনীত্‌’ গেছিল আমার জন্য প্যান্টজামা কিনতে, সেখান থেকে বেরোবার মুখে তাকে দেখেছিলাম শেষবার, একজন অপরিচিত মহিলার সঙ্গে, তার মা-ই হবেন, ফুটপাথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল, কালো রঙের সালোয়ার কামিজ পরণে। আমাকে দেখতে পায় নি, আমিই দেখেছিলাম, আর মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ঘেমেনেয়ে নার্ভাস হয়ে গেছিলাম।



এই পর্যন্ত লিখে ফেলার পর মনে হল, কলেজের মেয়েদের সম্বন্ধে একেবারে একটা কথাও লেখা হয়ে ওঠে নি এখনও পর্যন্ত। কলেজে ভর্তি হয়েছি, চারপাশে রঙীন রঙীন প্রজাপতির মত যুবতীকূল ঘুরে বেড়াবেন না, এবং তাঁদের দৃষ্টিধন্য স্পর্শধন্য হবার আকাঙ্খায় যুবককূল থাকবেন না, তাও হয় নাকি?

তাও হয়। ছেলেদের মতই বাড়ি ছেড়ে বাইরে প্রথম একা থাকতে আসা মেয়েরাও ছিল। তবে সম্ভবত ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ বলেই তাদের সংখ্যা খুব খুব কম ছিল। আমাদের ব্যাচে ইতিহাস সৃষ্টি হল মেকানিকাল ডিপার্টমেন্টে প্রথম একটি মেয়ে এসে। এর আগে মেকানিকাল ছিল মেয়েবর্জিত ক্লাস। বেশ তাগড়াই চেহারার এক মেয়ে, মেকানিকালের সবেধন নীলমণি। প্রসঙ্গত, যে সময়ের কথা বলছি, তখন জলপাইগুড়িতে মাত্র তিনটে ডিপার্টমেন্ট ছিল – মেকানিকাল, ইলেকট্রিকাল, সিভিল। তিনটে স্ট্রিম মিলিয়ে আমাদের ব্যাচে সবশুদ্ধু আটজন মেয়ে, দেড়শো ছেলের সঙ্গে ভর্তি হয়েছিল। ফলে কলেজ ছিল আক্ষরিক অর্থে পুরুষপ্রধান ক্যাম্পাস। মেয়েরা একেবারেই নন্‌-এনটিটি হয়ে থাকত, সম্ভব অসম্ভব বিভিন্ন ধরণের শ্লীল এবং অশ্লীল পুরুষালি মৌখিক সম্ভাষণ এবং ইঙ্গিত শুনে শুনে চার বছরের মধ্যে তাদের কান এবং বাকি গায়ের চামড়া বেশ মোটা হয়ে যেত।

ক্যাম্পাসের মধ্যেই প্রিন্সিপাল কোয়ার্টারের কাছে একটু আলাদা দিকে ছিল মেয়েদের হস্টেল। মেন গেটের ভেতরে ছেলেদের প্রবেশাধিকার ছিল না, তবে গেটে কোনও দারোয়ানও ছিল না। চাতকের মত দর্শনপ্রার্থীকে দাঁড়িয়ে থাকতে হত, যদি গেটে কোনও মেয়ের মুখ দেখা যায়, তাকে রিকোয়েস্ট করা, অমুককে ডেকে দাও তো। তথাকথিত ‘ফরবিডেন’ এলাকা বলেই ছেলেমহলে অত্যধিক আলোচিত ছিল লেডিজ হস্টেলের ভেতরের জগৎ। যে যেমন পারত পেঁয়াজ রসুন মাখিয়ে পরিবেশন করত, বাকিরাও তার আনন্দ উপভোগ করত। প্রবেশাধিকার না থাকলেও বিশেষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক কোনও কোনও মেয়ের সাথে থাকতই কোনও কোনও ছেলের। সেই সূত্রেই সেই সব বিশ্বাসঘাতক ছেলেদের মারফৎ জানা যেত লেডিজ হস্টেলের নানা তথ্য। সবচেয়ে বেশি আলোচনা হত লেডিজ হস্টেলে র‌্যাগিং নিয়ে। সম্ভব অসম্ভব অনেক রকমের বিবরণ শুনেছি, কোনওটাই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি। অনেক ডানপিটে ছেলে রাত দুপুরে লেডিজ হস্টেলে উঁকিঝুঁকি মেরে অ্যাডভেঞ্চার করার চেষ্টাও করেছিল, কিন্তু কেউই সে রকম উত্তেজক অ্যাডভেঞ্চারে কোনও উত্তেজনা সঞ্চয় করে ফিরতে পেরেছিল বলে শুনি নি। কেবল তাদের যাওয়ার ঘটনাই রূপকথা হয়ে ছড়িয়ে পড়ত জুনিয়রদের কাছে, আর সেগুলো পরে আরও বিরিয়ানি হয়ে ছড়াত বছরের পর বছর। কে গাছে উঠে সারারাত গাছেই কাটিয়েছে, কে ক্যামেরা নিয়ে গেছিল উত্তেজক ছবি তুলবে বলে, কল্পনা যতদূর পর্যন্ত যেতে পারে ততদূর পর্যন্ত যেত এইসব কাহিনিতে।

এত উত্তেজনার মূল কারণ ছিল, আমাদের সময় পর্যন্ত, মনে হয়, সংখ্যাগত চূড়ান্ত বৈষম্য। একটা ইয়ারে দেড়শো জন ছেলের রাজত্বে সাত আটজন মেয়ে, ফলে সুস্থ স্বাভাবিক ইন্টার‌্যাকশন হবার বদলে ‘নিজেকে বাঁচাও’ ব্যাপারটাই প্রধান হয়ে পড়ত মেয়েদের মধ্যে, আর ছেলেদের জগতে একটা কেমন যেন অলিখিত নিয়ম জারি হয়ে যেত, কলেজের মেয়েদের সঙ্গে আলাপ থাকা বা দেখা করতে যাওয়া খুব লজ্জাজনক ব্যাপার। কেউ যদি কখনও লেডিজ হস্টেলে যেত নিতান্তই নিষ্পাপ কোনও প্রয়োজনেও, তাকে যেতে হত লুকিয়ে লুকিয়ে, কোনওভাবে ব্যাপারটা প্রকাশিত হয়ে পড়লে সেই ছেলের সে দিন আওয়াজে আওয়াজে চোদ্দপুরুষ উদ্ধার হয়ে যেত।

আর কলেজের মধ্যে? না, সেখানেও বিশেষ মেলামেশার অবকাশ ছিল না, অন্তত ফার্স্ট ইয়ারে তো নয়ই। এমনকি থার্ড ইয়ারের মাঝামাঝি পৌঁছেও দেখেছি, কোনও একটি মেয়ে, যে ততদিনে আমাদের প্রায় তিন বছরের সহপাঠী, তার বসার ডেস্কে কেউ চক দিয়ে একটি দুটি খিস্তি লিখে রেখেছে। মেয়েটি মাথা নিচু করে ব্যাগ দিয়ে ঘষে ঘষে সেই খিস্তি মোছার চেষ্টা করছে। ক্লাসের অন্যপ্রান্তে মেয়েটির সেই নাস্তানাবুদ দশা দেখে চাপা হাসির হররা।

দু তরফেই আন্তরিক ভাবে অভাব ছিল ইন্টার‌্যাকশন ঘটবার, কিন্তু কারণটা আসলে কী ছিল, কখনওই বুঝতে পারি নি। আমাদের পরের কয়েকটা ব্যাচ থেকে পরিস্থিতি অনেক অনেক স্বাভাবিক হয়ে আসে, কিন্তু আমাদের ইয়ার পর্যন্ত লেডিজ হস্টেলের আরেক নাম ছিল, পাকিস্তান বর্ডার।

geclhostle
পাকিস্তান বর্ডার। বাংলায় লেডিজ হস্টেল।

এই অত্যধিক দূরত্ব জন্ম দিত অনেক অশালীনতার। জাস্ট ফর নাথিং, কলেজ বিল্ডিংয়ের ভেতরেই কোনও নোংরা উক্তি ছুঁড়ে দেওয়া, ক্লাসে মেয়েদের ডেস্কে বাছা বাছা খিস্তি লিখে রাখা বা যৌনাঙ্গের অপটু ছবি এঁকে রাখা, যে রকম পাবলিক ইউরিনালের দেওয়ালে দেখা যায় আর কি, এ সব থেকে শুরু করে লেডিজ হস্টেলের ঠিকানায় বেনামী চিঠি, বা আপাত-ভদ্র কথার আড়ালে খুব নোংরা কথা বলে কোনও মেয়েকে সামনাসামনি অপদস্থ করা, এই সব বিভিন্ন কীর্তিতে খুব পারদর্শী ছিল আমাদের আগের বিভিন্ন ইয়ারের সঙ্গে আমাদের ইয়ারেরও অসংখ্য ছেলে। সম্ভবত অবদমনই বলা যায় এটাকে, বিশাল দূরত্ব ঘুচত বছরে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা দিন, কালচারাল প্রোগ্রাম, সোশ্যাল, আর দোলের দিন। এই দিনগুলোর মধ্যে কালচারাল আর সোশ্যালে ছেলে মেয়ে সকলকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে দেখা যেত, টুকটাক অসভ্যতা যে হত না, তা নয়, কিন্তু সেগুলো বিশেষ ধর্তব্যের মধ্যে আনা যেত না বাকি বছরের কাজকম্মের নিরিখে। কিছু পুরুষালি হাত সক্রিয় হয়ে উঠত মওকা বুঝে, যেমন দোলের দিন। প্রফেসর্স ক্লাবে সেদিন সকলের জন্য থাকত ওপেন ইনভিটেশন, চানাচুর মিষ্টি বিলোন হত, ছাত্ররা গিয়ে ট্র্যাডিশনাল মেথডে প্রফেসরদের পায়ে আবীর দিয়ে প্রণাম করত। ছাত্রীরাও আসত। এবং, সারা মুখে কালো রং মাখা, দলের মধ্যে এ অবস্থায় আলাদা করে চেনা অসম্ভব, সেই রকম ক্যামুফ্লাজে অসভ্যতা হতে দেখেছি আমি নিজে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারি নি অনেকক্ষণ।

কিন্তু জলু ক্যাম্পাসের ছেলেরা বা মেয়েরা কোনও হাঁড়ির ভাত নয়, যে একটিকে টিপলেই বাকি চালেদের অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা করে নেওয়া যাবে। তাই জলপাইগুড়ির ক্যাম্পাসে ছেলেমাত্রেই এই রকমের বদ্‌ ছিল, বা মেয়েমাত্রেই খুব বেচারীগোত্রের ছিল, এ রকম মনে করারও কোনও কারণ নেই। অল্পস্বল্প মেলামেশাও হত, প্রেম ট্রেমও নামতো দু একটা, ধরা পড়ার মুখে তাদের ভাইবোন সাজার ঘটনাও ঘটত। এসব বোধ হয় সব কলেজেরই গপ্পো – অনেক পরে এই নিয়ে চন্দ্রিলের একটা সাঙ্ঘাতিক পলিটিকালি ইনকারেক্ট গানও খুব হিট হয়েছিল – স্যার এলেই সাজে ভাইবোন। কলেজের পেছন দিকে ভাইদার ক্যান্টিনের পাশ দিয়ে যে রাস্তাটা পাকিস্তান বর্ডারের দিকে যেত, তার নাম ছিল ভাইবোন সরণী। নানা বাস্তবিক ও কাল্পনিক ঘটনা ঘটত সেখানে, খুব ইরেগুলার ফ্রিকোয়েন্সিতে। এবং সেই সব বাস্তব ও অবাস্তব ঘটনার বিরিয়ানিকরণ চলত অপূর্ব কুশলতার সঙ্গে।

ক্লাসে বসে নয়, আমাদের ব্যাচের মেয়েদের সাথে আমার প্রথম আলাপ জমেছিল লেডিজ হস্টেলে এই রকমই পাঠানো একটি বেনামী চিঠিতে। যে চিঠি সম্বন্ধে আমার বিন্দুবিসর্গ আইডিয়া ছিল না, সেটাকে কীভাবে জানি না, আমার চিঠি বলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু সে গল্প পরের পর্বের জন্য তোলা থাক।

… চলবে


One thought on “জলু – চতুর্থ পর্ব

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.