রাহুল গান্ধী (এবং ভারত জোড়ো যাত্রা)

পাপ্পু। এই নামেই দীর্ঘদিন ধরে তাকে হ্যাটা করা হয়েছে। সংসদের ভেতরে, বাইরে। পলিটিকাল অ্যানালিস্টরা রাহুলের ব্যক্তিত্বে কংগ্রেসকে পুনজ্জীবিত করে তোলার কোনও ক্ষমতা, কোনও আশা দেখতে পান নি। রিলাকট্যান্ট পলিটিশিয়ান। শরীরে অর্ধেক ইটালিয়ান রক্ত, দলের সদস্য, দলের সভাপতি হওয়া সত্ত্বেও যখন খেয়াল ওঠে, উনি ভ্যাকেশনে চলে যান। একাধিকবার কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন, পরে আবারও ফিরে বসতে হয়েছে সেই সিংহাসনেই। রাহুলকে সভাপতি রেখে দলের কোনও উন্নতি তো হয়ই নি, বরং পরের পর ভরাডুবি ঘটেছে, অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকাশ্যে এসেছে। কেউ দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তো কেউ নিজের পার্টি খোলার চেষ্টা করেছেন। বাকিরা, শতাব্দীপ্রাচীন, এই বনেদী জমিদারীর লিগ্যাসী বয়ে চলা, সামন্ততান্ত্রিক মানসিকতার রাজনৈতিক দলটির অনুগত সেবক হয়ে হাত জোড় করে নাক খত দিয়ে সনিয়া গান্ধী রাহুল গান্ধীরই নিঃশর্ত আনুগত্য ঘোষণা করে গেছেন। এত ভাঙন দেখে, এককালের অনেক সমর্থকই হেসে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন, এবং ঘর সামলাতে ব্যর্থ রাহুলকে মজা করে তারাও ‘পাপ্পু’ বলেই ডেকেছেন। … More রাহুল গান্ধী (এবং ভারত জোড়ো যাত্রা)

নানা দেশের গল্প

মা নেই। বাবা বুড়ো মানুষ, গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন। দাদা থাকে কলম্বোর কাছে। তার চাকরি সেখানে – যদিও কতদিন সে চাকরি থাকবে, কেউ জানে না। দাদা বাবাকে দেখতে যেতে পারছে না – কেন? দাদার কাজের জায়গা তাদের গ্রাম থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দূরে। পেট্রলের দাম, পেট্রল পাম্পে সাড়ে সাতশো টাকা (সেদিনের রেট, আজ হয় তো আরও অনেক বেশি) প্রতি লিটার। তাও সে পেট্রল পাওয়া যাচ্ছে তিন থেকে পাঁচ দিন লাইনে অপেক্ষা করে। শুরু হয়েছে ব্ল্যাকমার্কেটিং। ব্ল্যাকে পেট্রল বিক্রি হচ্ছে দু হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা প্রতি লিটারে। … More নানা দেশের গল্প

জলু – দশম (শেষ) পর্ব

ক্লাস টুয়েলভে ওঠার মুখে সেই যে কমলা সালোয়ার কামিজ আর ঘিয়ে রঙের সোয়েটার পরা মেয়েটির মুখে রূঢ় ‘না’ শুনে আমার প্রথম প্রেমের সম্ভাবনা ভেঙে গেছিল, তার পরে দীর্ঘদিন আর সে রাস্তায় হাঁটার চেষ্টা করি নি। কলেজেপ্রেম হবার পরিবেশ ছিল না, সে রকম কাউকে মনেও ধরে নি। চিঠি লিখতাম আমার সেই ইলেভেল টুয়েলভের টিউশনের বন্ধু বান্ধবীদের। চিঠির উত্তরের সংখ্যা কমতে কমতে ক্রমশ ঠেকেছিল দুটিতে। দুজনেই বান্ধবী। তাদের একজনের ছায়া আমার মনের ওপর পড়তে লাগল ধীরে ধীরে। হুগলি-কলকাতায় গেলেই তার সাথে দেখা করতাম, মনে মনে তাকে চাইতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু মুখ ফুটে আর বলার সাহস ছিল না, প্রথম প্রত্যাখ্যানের ঘা তখনো মোছে নি। যদিও এখন আমি ফোর্থ ইয়ার, এখন আমার বাইশ বছর বয়েস, পেছন ফিরে তাকালে বুঝতে পারি সতেরো বছর বয়েসে সে অনুভূতি প্রেম ছিল না, নিতান্তই ভালোলাগা, আগুপিছু কিছু না ভেবে ভালো লেগে যাওয়া, মুখের ওপর ‘না’ বলে আসলে আমার উপকারই করেছিল মেয়েটি, কিন্তু এবার যখন বুঝতে শুরু করলাম, আমার নতুন অনুভূতি, আর কিছু নয়, সত্যিকারের ভালোবাসা, তখন আর দ্বিতীয়বারের জন্য সাহস ফিরে পেলাম না। এক তো আগের অভিজ্ঞতা, আর দ্বিতীয়, আমার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কোন মুখে তাকে বলব, আমি ভালোবাসি? … More জলু – দশম (শেষ) পর্ব

জলু – নবম পর্ব

না, গণ্ডার দেখা হয় নি সে-যাত্রা, কিন্তু যা দেখেছিলাম, তার সৌন্দর্য কোনও অংশে কম নয়। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাতির পিঠে চেপে চলেছি, মাঝে মাঝেই বাচ্চা শুঁড় দিয়ে মায়ের পা জড়িয়ে ধরছে, দুধ খাচ্ছে মায়ের, সামান্য বিরতির পর আবার চলা, ভিজে শাল সেগুনের পাতা আমাদের গায়ে বুলিয়ে যাচ্ছে চলার পথে, আমরা ভিজে যাচ্ছি ভোরের শিশিরে, হঠাৎ করে চারদিক আলো করে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারল ইয়াব্বড় একটা টকটকে লাল রঙের সূর্য। সে সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। যতটা পারছি, শুষে নিচ্ছি সে রূপ, সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে। … More জলু – নবম পর্ব

জলু – অষ্টম পর্ব

কে কীভাবে খবর দিয়েছিল জানি না, তবে তার পরের ঘটনাগুলো ম্যাজিকের মত ঘটল। সুব্বা ফোর্থ ডান ব্ল্যাক বেল্ট। বেসবল ব্যাট মটকে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখে। অতএব, দেড়শো ছেলে একসাথে নেমে এল নিচে, প্রথমে হস্টেলের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে তালা মারা হল। তারপর ম্যাজিকের মত সকলের হাতে চলে এল অস্ত্র। জিনিসগুলো এক্স্যাক্টলি আমাদের ঘরেই ছিল, কেউ জানতাম না, কী করে যে সেই মুহূর্তেই জেনে ফেললাম তাও মনে পড়ছে না, কেবল মনে আছে আমার ঘরেই লকারের মাথা থেকে বেরোল একটা হকিস্টিক, একটা চেন। আমি হকিস্টিকটা নিলাম, আমার রুমমেট কেকে নিল চেন। কীভাবে ওগুলো চালাতে হয়, প্রায় কেউই জানত না, আমি তো জানতামই না, কিন্তু হাতে ওগুলো থাকলে কনফিডেন্স বাড়ে। প্রায় পুরো হস্টেল এই রকম চেন রড হকিস্টিক ইত্যাদি জিনিস নিয়ে নিচে মেন গেটের সামনে লবিতে পজিশন নিল, কেবল মাত্র একজন ফোর্থ ডান ব্ল্যাক বেল্টের মোকাবিলা করার জন্য। … More জলু – অষ্টম পর্ব

জলু – চতুর্থ পর্ব

চা বাগান কোথায় গিয়ে শেষ, কেউই কখনও দেখি নি, হস্টেলের ছাদ থেকেও চা বাগানের শেষ দেখা যায় না। অন্যপ্রান্তে খালি আকাশ। খালি বটে, তবে এই খালি আকাশই জাদু দেখায় নভেম্বরের মাঝ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এটা ক্যাম্পাসের উত্তর দিক। ঝকঝকে হেমন্তের ওয়েদারে আকাশের গায়ে ফুটে ওঠে হিমালয়, পুরো নীল রংয়ের। আর সেই হিমালয়ান রেঞ্জের মাথায় মুকুটের মত ঝকঝক করে তিনটে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ : কাঞ্চনজঙ্ঘা, সান্দাকফু, ফালুট। লোকে পয়সা খরচা করে এদের দেখতে আসে কত দূর দূর থেকে, আমরা হস্টেলের ছাদে বসে, নিজের বেডে বসে দিনের পর দিন দেখেছি কাঞ্চনের রূপ, কখনও টকটকে লাল, কখনও আগুনের হল্কার সোনালী হলুদ রং, কখনও ধবধবে সাদা, কখনও বিষণ্ণ নীল। তবে বছরে ঐ একটা সময়েই দেখা যেত, এক মাসের জন্য। তার পরেই কুয়াশায় ঢেকে যেত তরাই ডুয়ার্স। সে আরেক রূপ। … More জলু – চতুর্থ পর্ব

জলু – তৃতীয় পর্ব

চার থেকে পাঁচ দিন চলত এই উৎসব। শেষ দিন হত মাস্‌ র‌্যাগিং। সেদিন মহোৎসব। সে দিন সমস্ত অ্যাক্টিভ র‌্যাগাররা দলবদ্ধভাবে ছানাদের নিয়ে যেত কলেজ ক্যাম্পাসের পেছনের মাঠ পেরিয়ে চা বাগানে। ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান। সাধারণত কলেজে অ্যাডমিশন হত আগস্ট মাসে, তখন তরাইতে ভরা বর্ষা। ফলে এক আর দু নম্বর হস্টেলের পেছনের মাঠ থাকত সম্পূর্ণ কাদা-পাঁকে ভরা। সেই পাঁকে ছানা পোনা সকলে মিলে সকলকে কাদা পাঁক মাখানো হত, মূলত ছানাদেরই মাখানো হত। কাদা মেখে যখন সবাই ভূত, কাউকে দেখে চেনার উপায় নেই, তখন জামাপ্যান্ট খুলে কেবল মাত্র জাঙিয়া সম্বল করে, চা বাগানের ভেতর দৌড়। সর্বাঙ্গে কাদা থাকায় আলাদা করে চেনার উপায় থাকত না কার পরনে জাঙিয়া আছে, কার পরণে কিছুই নেই। হুল্লোড় হইচইতে ভরে যেত নিস্তব্ধ চা বাগান। চা-পাতা তোলা মদেশিয়া কামিনের দল সেদিন ধারেকাছে ঘেঁষত না। … More জলু – তৃতীয় পর্ব

জলু – প্রথম পর্ব

নিজের জীবনে পরে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, কিছু জিতেছি, কিছু হেরেছি, কিছু লড়াই এখনও চলছে, কিন্তু সে ছিল আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ জেতা। ইলেভেনে ফেল, হেডুর দয়ায় টুয়েলভে ওঠা, বাংলার কোচিংএ যে মেয়েটিকে দেখে হাবুডুবু খেতাম, তাকে একদিন সাহস ভরে তুতলেমুতলে প্রোপোজ করতে গিয়ে জোরদার প্রত্যাখ্যান পাওয়া, অঙ্ক ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির কোচিংয়ে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে আবিষ্কার করা অন্যদের থেকে আমি কতটা পিছিয়ে আছি, দিন রাত এক হয়ে যাচ্ছে পড়ার ব্যাকলগ ক্লিয়ার করতে, তার মধ্যে হাতে আসছে আনা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি, তার মধ্যে ঠিক সময় করে বন্ধুদের সাথে হ্যাহ্যাহিহি করাও চলছে, আর মাথার মধ্যে সমানে ঘুরছে – সত্যসাধনবাবু একঘর বন্ধুবান্ধবীর সামনে আমাকে বলেছিলেন, তুমি অমিতাভ মিত্র দেখে কী করবে, জয়েন্ট ফয়েন্ট তোমার দ্বারা … আর আমি পড়ার মাঝে কেবল বিড়বিড় করছি, আমি পেয়ে দেখাব আপনাকে স্যার, আমি ঠিক পেয়ে দেখাব।  … More জলু – প্রথম পর্ব

আয়্যাম ফাইন, থ্যাঙ্ক ইউ

খাদের কিনারার দিকে সরতে সরতে একদিন বেরিয়ে পড়েছিলাম মোটরসাইকেল নিয়ে, লাদাখের দিকে। দু হাজার পনেরো সাল। ঐ, গুটিয়ে রাখা স্প্রিংয়ের স্থিতিজাড্য। ততদিনে ফ্রাস্ট্রেশন আরও বাজে রূপ নিয়েছে। রাতে ঘুম আসত না, অকারণে মাথা গরম করে চেঁচামেচি করে ফেলতাম নিজের নিকটজনদের সাথে। দূরত্ব বাড়তে শুরু করেছিল। সেই সময়ে মনে হয়েছিল, নিজেকে খুঁজে পাওয়াটা দরকার। আমি হারিয়ে ফেলছি নিজেকে। তিরিশে মে, যখন পুরো উত্তর ভারত ছেচল্লিশ সাতচল্লিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের তাপমাত্রায় ফুটছে, তখন আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম, বাড়িতে মিথ্যে কথা বলে।

একলা। একজন সঙ্গী হবার কথা ছিল, শেষ মুহূর্তে সে জানায়, যেতে পারছে না, সেটা আমি বাড়িতে জানাই নি। জানিয়েছিলাম ফিরে আসার পর। রাস্তায় সঙ্গী পেয়ে গেছিলাম, সে অন্য গল্প, তাদের সাথে আজও যোগাযোগ আছে। … More আয়্যাম ফাইন, থ্যাঙ্ক ইউ