বাবরি মসজিদ, আর এক বন্ধুকে হারানোর গল্প

সেদিন বিকেলেই, আমি শুনতে পেলাম সরতাজ আনসারি আর আব্বা বাবরি মসজিদ ভাঙার পরবর্তী সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে আলোচনা করছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত জেলা আধিকারিকদের যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। খবর আসছিল, মসজিদ ভাঙার প্রতিবাদে মুসলিম গ্রুপগুলো জোর করে দোকানদারদের দোকান বন্ধ করতে বাধ্য করছিল, অন্যদিকে দক্ষিণপন্থী হিন্দু গ্রুপগুলো মিষ্টি বিলিয়ে বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করছিল।  ‘এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, কিন্তু যে কোনও সময়ে তা খারাপ হতে পারে। হিন্দুরা মুসলমানদের আক্রমণ করতে পারে, কারণ পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে মন্দির ভাঙচুরের খবর আসছে,’ সরতাজ আনসারি বললেন। … More বাবরি মসজিদ, আর এক বন্ধুকে হারানোর গল্প

জেলখানার চিঠি

অবশ্য আজকাল কে-ই বা তথ্য, সত্য – এসব নিয়ে মাথা ঘামায়? আজকের ভারতে সত্য সেটাই যা মানুষের কাছে পৌঁছয়, যা আসলে ঘটেছিল সেটা নয়। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলি, আমার কথা বা আচরণের চেয়ে তাদের অনেক বেশি প্রভাবিত করে ওইসব শিরোনাম। দুবছর ধরে আমি দেখছি, মানুষ ছাপা শব্দের উপর প্রায় নির্বোধের মত বিশ্বাস করে। আপনি যাকে “নিজের চোখে দেখা প্রমাণ” বলেন, তার উপরেও মানুষের অত বিশ্বাস নেই। লোকে ভাবে কাগজে যখন বেরিয়েছে তখন অমুক কথাটা নির্ঘাত সত্যি। “কিছু তো নিশ্চয়ই করেছে। কাগজে কি আর পুরোপুরি মিথ্যে লিখবে?” … More জেলখানার চিঠি

গান্ধীহত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত সাভারকর, কীভাবে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচলেন?

“মদনলাল (পাহ্‌ওয়া) এর পরেও তাঁর সহ-চক্রান্তকারীদের প্রতি বিশ্বাসভঙ্গ করেন নি। তিনি নিশ্চিত ছিলেন ওরা আবার চেষ্টা করবে। পুলিশের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন যাতে ওরা যথাসম্ভব বেশি সময় পায়, … তারপর যখন তিনি আন্দাজ করতে পারেন যে ওরা পালাবার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছে, তখন তিনি পুলিশের কাছে মুখ খোলেন এবং তাঁদের কার্যকলাপের খুব সাদামাটা একটা বিবরণ দেন। এই বিবরণ দেবার সময়ই হঠাৎ করে তিনি বলে ফেলেন যে … তিনি তাঁর সঙ্গীদের সাথে সাভারকর সদনে গিয়েছিলেন, এবং সেখানে তিনি সেই বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে স্বচক্ষে দর্শন করে এসেছেন। … More গান্ধীহত্যায় অন্যতম অভিযুক্ত সাভারকর, কীভাবে নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচলেন?

সাভারকর কীভাবে ‘বীর’ বিশেষণে ভূষিত হলেন?

জনৈক চিত্রগুপ্তের লেখা লাইফ অফ ব্যারিস্টার সাভারকর নামে একটি বই, সাভারকরের ওপর লেখা প্রথম জীবনীমূলক বই। ১৯২৬ সালে এটি প্রকাশিত হয়। এই বইতে সাভারকরকে এক সাহসী বীর নায়ক হিসেবে দেখানো হয়। এবং সাভারকরের মৃত্যুর দুই দশক পরে, যখন সাভারকরের লেখাপত্রের অফিশিয়াল প্রকাশক বীর সাভারকর ফাউন্ডেশন ১৯৮৭ সালে এই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত করে, তখন ফাউন্ডেশনের সম্পাদক রবীন্দ্র রামদাস জানান, বইটির লেখক, “চিত্রগুপ্ত, স্বয়ং সাভারকর ব্যতীত আর কেউ নয়”।

এই আত্মজীবনীতে, থুড়ি, চিত্রগুপ্ত-লিখিত জীবনীতে, সাভারকর পাঠকদের উদ্দেশ্যে জানান যেঃ “সাভারকর আজন্ম এক সাহসী নায়ক, ফলাফলের তোয়াক্কা না করেই তিনি যে কোনও কাজের দায়িত্ব নিয়ে তা সম্পূর্ণ করতে পিছপা হতেন না। সরকারের যে নিয়ম বা আইন তাঁর কাছে সঠিক বা বেঠিকভাবে অন্যায় মনে হত, তৎক্ষণাৎ সেই অশুভ নিয়মকে সমাজের বুক থেকে চিরতরে মুছে ফেলার জন্য তিনি যে কোনও পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধা বোধ করতেন না।” … More সাভারকর কীভাবে ‘বীর’ বিশেষণে ভূষিত হলেন?

ধর্মবিশ্বাসের সাথে আমার পথ চলার গল্পঃ আরাস্তু জাকিয়া

More ধর্মবিশ্বাসের সাথে আমার পথ চলার গল্পঃ আরাস্তু জাকিয়া

আমিঃ গুরমেহর কৌর

দিল্লি ইউনিভার্সিটির শান্তিকামী ছাত্রী গুরমেহর কৌরের ওপর কুৎসিত অনলাইন আক্রমণ চালিয়েছিল বিজেপি এবং এবিভিপির পয়সা দিয়ে পোষা ট্রোলের দল। উপর্যুপরি আঘাতের অভিঘাত সইতে না পেরে গুরমেহর চলে গিয়েছিল সবার চোখের আড়ালে, কিছুদিনের জন্য। আস্তে আস্তে সে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দে ফিরছে। সম্প্রতি সে একটি ব্লগ শুরু করেছে – বলেছে প্রতি সপ্তাহে সে সেখানে লিখবে তার নিজের কথা, তার শান্তির সন্ধানে অভিযানের কথা।

গুরমেহরের অনুমতিক্রমে তার প্রতিটি ব্লগ-পোস্টের বাংলা অনুবাদ থাকবে এবার থেকে, আমার ব্লগে। ভাবনাগুলো ছড়িয়ে দেওয়া দরকার চারদিকে, বিভিন্ন ভাষায় – আমি মনে করি। আমি শুধু বাংলা ভাষার দায়িত্বটুকু নিতে পারি। … More আমিঃ গুরমেহর কৌর

গুজরাত ফাইলসঃ গোপনীয়তার কাটাছেঁড়া – ১

“মোদীজি, মোদীজি, এক সওয়াল”। আমার ভাগ্য ভালো ছিল, অত ভক্ত এবং নিরাপত্তাবলয়ের ভিড়ের মধ্যে থেকেও তিনি আমার কথা শুনতে পেয়ে ফিরলেন এবং প্রশ্ন করার অনুমতি দিলেন। “মোদীজি, তিনজন অফিসার গ্রেফতার হয়েছেন সোহরাবুদ্দিনের ফেক এনকাউন্টারের ঘটনায়। আপনি কি এখনও আপনার ভাষণে যা বলেছেন, সেটাই বলতে চাইবেন?” উত্তরের আশায় আমি তাঁর দিকে মাইক এগিয়ে দিলাম। কিন্তু এবারে ভাগ্য বোধ হয় ভালো ছিল ক্যামেরাপার্সনের। টানা দশ সেকেন্ড নরেন্দ্র মোদী আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, এবং তার পরে উত্তর না দিয়ে হেঁটে বেরিয়ে গেলেন। সঙ্গের মন্ত্রীরা আমার দিকে একটা ঘেন্না আর অবজ্ঞা মেশানো দৃষ্টি ছুঁড়ে দিলেন। এটাই ছিল আমার প্রথম সাক্ষাৎ সেই মানুষটির সঙ্গে, যিনি এখন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী। … More গুজরাত ফাইলসঃ গোপনীয়তার কাটাছেঁড়া – ১

অন্ধকারে বসে কথা বলার কারণ

সামগ্রিকভাবে, টেলিভিশন এখন জনতার মধ্যে “দেশদ্রোহী” খোঁজার খেলায় মেতেছে। অ্যাঙ্কররা চেঁচিয়ে যায় এবং মতাদর্শরা জন্ম নেয়। এই সহিংস শব্দাবলীর মধ্যে আমি ডুবে যেতে থাকি। ভারসাম্য হারাই, মনে হয় কিছু কিছু জিনিস বোধ হয় খুব বেশিমাত্রায় ছড়িয়ে গেছে। ঠিক বা ভুলের প্রশ্ন নয়। আমরা যখন মনে করতে শুরু করি যে আমাদের কথাই শেষ কথা, তখনই আমাদের থেমে গিয়ে অন্যমতকে শোনা উচিত। বিরুদ্ধমত ও অসহমতকে জায়গা দেওয়া উচিত। আবার, আবার প্রশ্ন তোলা উচিত। … More অন্ধকারে বসে কথা বলার কারণ

তোর পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত!

এক থেকে দুই ঘন্টা তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছিল, আমার থেকে উদ্ধার করা জিনসটা “বীফ” কিনা, সেটা এক্সপার্টদের তরফে কনফার্ম করার জন্য। কিন্তু কোনও এক্সপার্ট পাওয়া গেল না। অবশেষে তাঁরা সেই রেস্টুরেন্টে ফোন করলেন যেখান থেকে আমি ওটা কিনেছিলাম – তারা জানাল, ওটা বীফ নয়, “বাফ” অর্থাৎ মোষের মাংস ছিল।

আইনি প্রক্রিয়ায় আমার বিরুদ্ধে কোনও ধারা লাগানো যাবে না দেখে তাঁরা এইবারে নীতি-জ্যাঠামশাইয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন, “তুমি জৈন হওয়া সত্ত্বেও এমন নোংরা জিনিস খেতে পারো কী করে?’ ‘তোদের মতন লোকেদের পাকিস্তানে যাওয়া উচিত’, ইত্যাদি। … More তোর পাকিস্তানে চলে যাওয়া উচিত!

নাম জানা হয় নি …

‘রোজেদার কে লিয়ে এক ফল কি টোকরি বনা দোগে আপ?’ সর্দারজিকে শুধোলে তুমি। ঝটপট উঠে দাঁড়ালেন সর্দারজি, ‘জরুর জি’। তাড়াতাড়ি সামনে থেকে সরিয়ে নিলেন আগে-থেকেই রেখে দেওয়া দুটো ফলের বাস্কেট, হয় তো তত ভালো ফল ছিল না তাতে, কিংবা, কে জানে, ফলগুলো হয় তো ইফতারে ব্যবহৃত হবার জন্য অতটা পবিত্র ছিল না। পেছন থেকে আরেকটা বাস্কেট বের করে দিলেন তিনি। ‘অওর ইয়ে দোনো মেরি তরফ সে’, বলে আরো দুটো কমলালেবু চাপিয়ে দিলেন সর্দারজি, ভরে ওঠা বাস্কেটের ওপরে। কোথাও একটা মানুষ পবিত্র মাসভর উপবাস করছে, তার দোকানের এই ফল সেই পবিত্র উপবাসের অবসান ঘোষণা করবে, এই বিশ্বাস হয় তো তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল। দুজনকার ধর্মবিশ্বাস আলাদা, তবু কীভাবে যেন দুটি স্রোত একসাথে মিশে গেল আজ, এই ফলের দোকানে। … More নাম জানা হয় নি …

জীবন বাজি রেখে লড়েছি, আর জিতেছি – সোহাইলা আবদুলালি

আমি একজন সারভাইভর। আমি আমাকে ধর্ষণ করার জন্য কাউকে অনুরোধ করি নি, আমি ধর্ষণ উপভোগও করি নি। এটা ছিল আমার জীবনে সহ্য করা সবচেয়ে কষ্টকর অত্যাচার। কোনও ধর্ষণ কখনও কোনও মেয়ের দোষে ঘটে না। ধর্ষণকে নিয়ে আমাদের সমাজে পালন করে চলা অদ্ভুত নীরবতা আর অবাস্তব কাল্পনিক মিথকে ছিন্নভিন্ন করে দেবার উদ্দেশ্যেই আমার এই লেখা। আমি এই লেখার মাধ্যমে শুধু এইটুকু সবাইকে জানাতে চাই যে মেয়েরা কোনও সহজলভ্য ভোগসামগ্রী নয়, ধর্ষণের মত অপরাধ একজন মেয়েকে, মানুষ হিসেবে, সামাজিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে একা করে দেয়। … More জীবন বাজি রেখে লড়েছি, আর জিতেছি – সোহাইলা আবদুলালি