জলু – চতুর্থ পর্ব

চা বাগান কোথায় গিয়ে শেষ, কেউই কখনও দেখি নি, হস্টেলের ছাদ থেকেও চা বাগানের শেষ দেখা যায় না। অন্যপ্রান্তে খালি আকাশ। খালি বটে, তবে এই খালি আকাশই জাদু দেখায় নভেম্বরের মাঝ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এটা ক্যাম্পাসের উত্তর দিক। ঝকঝকে হেমন্তের ওয়েদারে আকাশের গায়ে ফুটে ওঠে হিমালয়, পুরো নীল রংয়ের। আর সেই হিমালয়ান রেঞ্জের মাথায় মুকুটের মত ঝকঝক করে তিনটে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ : কাঞ্চনজঙ্ঘা, সান্দাকফু, ফালুট। লোকে পয়সা খরচা করে এদের দেখতে আসে কত দূর দূর থেকে, আমরা হস্টেলের ছাদে বসে, নিজের বেডে বসে দিনের পর দিন দেখেছি কাঞ্চনের রূপ, কখনও টকটকে লাল, কখনও আগুনের হল্কার সোনালী হলুদ রং, কখনও ধবধবে সাদা, কখনও বিষণ্ণ নীল। তবে বছরে ঐ একটা সময়েই দেখা যেত, এক মাসের জন্য। তার পরেই কুয়াশায় ঢেকে যেত তরাই ডুয়ার্স। সে আরেক রূপ। … More জলু – চতুর্থ পর্ব

জলু – দ্বিতীয় পর্ব

সবেমাত্র রুম খুঁজে হোল্ডঅল খুলে তোষক বের করে পেতেছি টিনের খাটে, আবিষ্কার করেছি তাতে বসলে উঠলে ঘটাং ঘটাং করে বিকট শব্দ হয়, তখন বেলা দশটা, হস্টেল মোটামুটি ফাঁকা, সবাই কলেজে, কেবল ফার্স্ট ইয়ারের সদ্য ইনটেক নেওয়া ছেলেরা রয়েছে, আমাদের ক্লাস তখনও শুরু হয় নি। হ্যাঁ, ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে অ্যাডমিশন হয় না, হয় ‘ইনটেক’। ছোট ঘর, রুমমেট তিনজন, আমাকে নিয়ে চার, তাদের সাথে আলাপ করলাম। আমার খাট জানলার ধারে, করিডরের দিকের জানলা, সেই জানলা ভর্তি হয়ে আছে অজস্র অচেনা মুখে, আর প্রায় চেঁচামেচির পর্যায়ে চলে যাওয়া একটা সম্মিলিত ফিসফাস, ‘ছানা এস্‌চে, নতুন ছানা এস্‌চে’। খাটের ওপর সব শুনেও কিছুই শুনতে পাচ্ছি না এবং কিছুই-বুঝতে-পারছি-না (এটা সত্যিই, আমাকে ছানা বলছে এটুকু বুঝছিলাম, কিন্তু ছানা কেন বলছে সেইটা বুঝি নি) মত মুখ করে বসে আছি আমি আর বাবা। বাবা ট্রাঙ্কের চাবি আমার পৈতেয় বেঁধে দিয়েছে (তখনও পৈতে পরতাম), ঘরের লকারে আমার জায়গা মিলে গেছে, এমন সময়ে … … More জলু – দ্বিতীয় পর্ব

জলু – প্রথম পর্ব

নিজের জীবনে পরে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, কিছু জিতেছি, কিছু হেরেছি, কিছু লড়াই এখনও চলছে, কিন্তু সে ছিল আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ জেতা। ইলেভেনে ফেল, হেডুর দয়ায় টুয়েলভে ওঠা, বাংলার কোচিংএ যে মেয়েটিকে দেখে হাবুডুবু খেতাম, তাকে একদিন সাহস ভরে তুতলেমুতলে প্রোপোজ করতে গিয়ে জোরদার প্রত্যাখ্যান পাওয়া, অঙ্ক ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির কোচিংয়ে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে আবিষ্কার করা অন্যদের থেকে আমি কতটা পিছিয়ে আছি, দিন রাত এক হয়ে যাচ্ছে পড়ার ব্যাকলগ ক্লিয়ার করতে, তার মধ্যে হাতে আসছে আনা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি, তার মধ্যে ঠিক সময় করে বন্ধুদের সাথে হ্যাহ্যাহিহি করাও চলছে, আর মাথার মধ্যে সমানে ঘুরছে – সত্যসাধনবাবু একঘর বন্ধুবান্ধবীর সামনে আমাকে বলেছিলেন, তুমি অমিতাভ মিত্র দেখে কী করবে, জয়েন্ট ফয়েন্ট তোমার দ্বারা … আর আমি পড়ার মাঝে কেবল বিড়বিড় করছি, আমি পেয়ে দেখাব আপনাকে স্যার, আমি ঠিক পেয়ে দেখাব।  … More জলু – প্রথম পর্ব

মন কি বাতঃ এক দেশদ্রোহীর জবানবন্দী (বাড়তি পর্ব)

দেশ কি মারে? সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম হয় না, দেশ হয় না। আপনি তো খবর পড়েন, খবরের চ্যানেল দ্যাখেন। জানেন তো, সন্ত্রাসবাদের শিকার ওই দেশটিও? কত শিশু কিশোর শিক্ষক সাধারণ মানুষ সেখানে নিয়মিত মারা যাচ্ছে এই সন্ত্রাসের ফলে? … পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ কিন্তু সত্যিই ইন্ডিয়াকে অতটা ঘেন্না করে না। এই ঘেন্নাটা তৈরি করা হয় মৌলবী ধর্মগুরু এবং মিলিটারি লেভেলে। তাতে জড়ানো হয় আজমল কাসভের মত কিছু নিরক্ষর ছেলেপুলেকে। জিহাদী ট্রেনিং দিয়ে এ দেশে পাঠায় তারা। আনরেস্ট তৈরি করে। সেই আনরেস্টের বলি হয় এদেশের মানুষ, ও দেশের মানুষও। কিন্তু পাকিস্তানের আমজনতা, শিক্ষিত চাকুরিজীবি মধ্যবিতের দল, তারা ঠিক আপনার আমার মতই। আপনি ইন্ডিয়ান জানলে আপনাকে বুকে জড়িয়ে ধরবে, ঘরে দাওয়াতে ডাকবে। খাবারের দাম নিতে চাইবে না। এরাই কিন্তু পাকিস্তানে সংখ্যাগুরু। এরা ঝগড়া চায় না, চায় কালচারাল এক্সচেঞ্জ। এরা ধর্মের চোখরাঙানি চায় না, চায় মুক্ত হাওয়া।

একবার ভেবে দেখুন। … More মন কি বাতঃ এক দেশদ্রোহীর জবানবন্দী (বাড়তি পর্ব)

মন কি বাতঃ এক দেশদ্রোহীর জবানবন্দী (দ্বিতীয় পর্ব)

কিন্তু একবার “আতঙ্কবাদী” তকমা লেগে গেলে তো নিশ্চিন্ত জীবন আর কাটানো যায় না। নানা কারণে অছিলায় আর্মি অফিসার আসত, অন্যান্য মুরগিদের সাথে তাকে উত্যক্ত করার জন্য। খুশি করতে না পারলে যে আরও বড় লাঞ্ছনা থাকে, কপালে। খুশি করতে না পারার অপরাধে, চোখে চোখে রাখার সাত বছর পরেও আফজলকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এসটিএফ। ছ মাস লেগেছিল এক লক্ষ টাকা জোগাড় করতে, আফজলের পরিবারের। মুক্তির জন্য ওই দামটাই ধার্য করেছিল ভারতের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। ছ মাস বাদে আফজল মুক্তি পায়। নজরদারী চলতেই থাকে তার ওপর। … More মন কি বাতঃ এক দেশদ্রোহীর জবানবন্দী (দ্বিতীয় পর্ব)

আফজল গুরু – বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে?

না, এটা আমার লেখা নয়। লোকে সাধারণত নিজের ব্লগে নিজের লেখাজোখাই রাখে, আমি সচরাচর তার ব্যতিক্রম নই, তবে এইবারের জন্য নিয়ম ওভাররাইড করে অন্যের লেখা নিজের ব্লগে রাখছি, যাতে আরও আরও বেশি লোক লেখাটা পড়তে পারে। এই বিষয়ে আমারও লেখার ইচ্ছে ছিল, ইন ফ্যাক্ট, আমি নিজে একটা লেখা লিখব আবার, এর পরে, কিন্তু ফর দ্য রেকর্ড, এই লেখাটা এখানে থাক, কারণ আফজলকে নিয়ে আমি লিখলে, তার বয়ান হুবহু এক রকমেরই হত। আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে রৌহিন। আমার লেখার জন্য অপেক্ষা করতে হলে অনেকটা দেরি হয়ে যেত। বিশেষত, এই মুহূর্তে, রাজনৈতিক, মিডিয়া এবং বন্ধুবান্ধবের লেভেলেও পুরো ব্যাপারটাকে সম্পূর্ণভাবে ঘেঁটে দিয়ে যেভাবে দেশপ্রেমের একটা সরল ইকোয়েশন বানাবার সক্রিয় প্রচেষ্টা করছে, তাতে অনেক বেশি বেশি করে এই ধরণের স্বর আসা উচিত বলে আমি মনে করি। এবং সেটা এক্ষুনি আসা উচিত। এখনই। … More আফজল গুরু – বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে?

ইশরাত জাহানঃ তথ্যের খোঁজে (তৃতীয় পর্ব)

মনে রাখতে হবে, পনেরোই জুন, দু হাজার চার সালে আমেদাবাদের রাস্তায় একা ইশরাত খুন হয় নি, হয়েছিল তার সাথে আরও তিনজন – জীশান, আহমেদ আর জাভেদ। তাদের জন্য এত শোরগোল ওঠে নি কারণ সন্ত্রাসবাদ বা লশকর-এ-তোইবার সাথে তাদের যোগাযোগের কথা সন্দেহাতীতভাবে না হলেও, প্রমাণিত, অন্তত এরা যে সন্ত্রাসবাদের দিকে অনেকটাই ঝুঁকে ছিল, সে ব্যাপারে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, কিন্তু ইশরাতের ব্যাপারে কোনও প্রমাণ আজ অবধি পাওয়া যায় নি। লশকরের দাবি ছিল ইশরাত পাকিস্তান থেকে এসেছে, এদিকে ইশরাতের মা, বোন দীর্ঘদিন ধরে মুম্বাইয়ের মুম্ব্রা এলাকার বাসিন্দা। ইশরাতও তাই। … More ইশরাত জাহানঃ তথ্যের খোঁজে (তৃতীয় পর্ব)

স্বপ্নপূরণের কাহিনি, অথবা স্বপ্ন দেখার শুরু

স্বপ্নেরা দানা বাঁধছে, তারা আস্তে আস্তে আকার পাচ্ছে। সামনে দুটো খুব বড় বড় চ্যালেঞ্জ, মাস তিনেকের ছুটির ব্যবস্থা করা, আর টাকা পয়সার জোগাড় করা। হয় তো সাত আট লাখ টাকায় হয়ে যাবে, হয় তো তার কমেই হয়ে যাবে। এবং আমি এটা জানি – আমাকে নিংড়ে ফেললেও এ টাকা বেরোবে না। আমাকে তাই সবার সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। এই ট্রিপ, যদি বড় কোনও স্পনসর না পাই, তা হলে আমাকে ক্রাউড-ফান্ডিংএর ব্যবস্থা করতে হবে। বড় স্পনসরের চেষ্টাও করব। … More স্বপ্নপূরণের কাহিনি, অথবা স্বপ্ন দেখার শুরু

ইনটলারেন্স নিয়ে কিছু কথা

পাকিস্তানে যাবার সুপরামর্শ আপনারা আজকাল শুনছেন, আমি এই গত দেড় বছর ধরে অনেকবার পেয়ে এসেছি। ২০১৪র নির্বাচনের সময় থেকেই ভারত কেমন একটা অদ্ভূত রকমের পোলারাইজড হয়ে গেছে, যে বা যারা নরেন্দ্র মোদীর সমর্থন করবে না, তারা দেশের শত্রু, তারা দেশের বিকাশ চায় না, তাদের অবিলম্বে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হোক। বিজেপি জেতার পরে উল্লসিত অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছেন, আমি কবে পাকিস্তান যাচ্ছি। সেই প্রশ্নকারীদের মধ্যে আমার কলেজের সহপাঠী, স্কুলের সময়কার বন্ধু কিংবা পরে হওয়া অল্পপরিচিত ব্যক্তিও আছেন, এই শ্রী যতীন ধাওয়ান তাঁদের মধ্যেই একজন। … More ইনটলারেন্স নিয়ে কিছু কথা

স্মৃতির সরণী বেয়ে –

অনেকদিন বাদে বাদে কিছু চেনা-আধচেনা মুখ দেখলে চমকে যেতে হয়, এরা তো আমার থেকেও ছোট ছিল, জীবনের কী প্রচণ্ড তাপে এদের মুখচোখনাকহাত এই রকম বুড়িয়ে গেল? গাল ভাঙা, দীর্ঘসময়ের অযত্নলালিত দাড়ি, সাইকেলের হ্যান্ডেলে অলস ঝুলে থাকা সেই একই রকমের ডোরাকাটা নাইলনের ব্যাগ, তার হ্যান্ডেলদুটো বহুব্যবহারে জীর্ণ, সুতলি বেরিয়ে আসা, শরীর যেন অল্প নুয়ে পড়ছে, মুখ খুললে শোনা যায় সেই আদি ও অকৃত্রিম হুগলির ডায়ালেক্ট, উচ্চগ্রামে কথা বলার অভ্যেস – যা দূর থেকে শুনলে হঠাৎ মনে হয় ঝগড়া লেগেছে বুঝি। এদের মাঝে গিয়ে পড়লে মনে হয়, শুধু এদেরই বুঝি বয়েস বেড়েছে, আমি মানুষটা বুঝি একই রকম আছি। এই লোকগুলোকেই আমি চিনতাম, অনেকদিন আগে, তখন তারা বালক, কিশোর, সদ্যযুবক, গালে দাড়ি গজিয়েছে কি গজায় নি, আজ তারা পূর্ণবয়স্ক, হাতে বিড়ি কি সিগারেট ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে আলোচনা করছে দুর্গাপুজোর ফান্ডিং-এর ব্যাপারে। … More স্মৃতির সরণী বেয়ে –

মহেশ শর্মা, গরুর মাংস এবং কিছু প্রলাপ

বেশ ভালো লাগছে, বক্তব্যগুলো শুনতে। কেমন মুখোশছাড়া মুখ দেখা যাচ্ছে আস্তে আস্তে। মুখগুলো আমাদের আশেপাশেই ছিল, এতদিন চিনতে পারি নি। আর এঁরা তো নেতামন্ত্রী, এঁদের চিন্তাভাবনা বিচারই আলাদা, সাধারণ লোকজন, আমার পরিচিত মহলেই আস্তে আস্তে কিছু মানুষের যে রূপ দেখছি, তাতে আচ্ছে দিন যে আর খুব বেশি দূরে নেই, বুঝতে পারছি। আন্দাজ করেছিলাম, এ রকমই হবে। মুজফফরনগর, দাদরি হয়ে পরের স্টেপ যে দিল্লিতেই পড়বে, এ বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধির দরকার হয় না। ঘাড়ের কাছে হিন্দুত্বের গরম নিশ্বাস অনুভব করছি। … More মহেশ শর্মা, গরুর মাংস এবং কিছু প্রলাপ