জলু – নবম পর্ব

না, গণ্ডার দেখা হয় নি সে-যাত্রা, কিন্তু যা দেখেছিলাম, তার সৌন্দর্য কোনও অংশে কম নয়। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাতির পিঠে চেপে চলেছি, মাঝে মাঝেই বাচ্চা শুঁড় দিয়ে মায়ের পা জড়িয়ে ধরছে, দুধ খাচ্ছে মায়ের, সামান্য বিরতির পর আবার চলা, ভিজে শাল সেগুনের পাতা আমাদের গায়ে বুলিয়ে যাচ্ছে চলার পথে, আমরা ভিজে যাচ্ছি ভোরের শিশিরে, হঠাৎ করে চারদিক আলো করে চোখ ধাঁধিয়ে দিয়ে গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারল ইয়াব্বড় একটা টকটকে লাল রঙের সূর্য। সে সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। যতটা পারছি, শুষে নিচ্ছি সে রূপ, সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে। … More জলু – নবম পর্ব

জলু – অষ্টম পর্ব

কে কীভাবে খবর দিয়েছিল জানি না, তবে তার পরের ঘটনাগুলো ম্যাজিকের মত ঘটল। সুব্বা ফোর্থ ডান ব্ল্যাক বেল্ট। বেসবল ব্যাট মটকে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা রাখে। অতএব, দেড়শো ছেলে একসাথে নেমে এল নিচে, প্রথমে হস্টেলের কোলাপসিবল গেট বন্ধ করে তালা মারা হল। তারপর ম্যাজিকের মত সকলের হাতে চলে এল অস্ত্র। জিনিসগুলো এক্স্যাক্টলি আমাদের ঘরেই ছিল, কেউ জানতাম না, কী করে যে সেই মুহূর্তেই জেনে ফেললাম তাও মনে পড়ছে না, কেবল মনে আছে আমার ঘরেই লকারের মাথা থেকে বেরোল একটা হকিস্টিক, একটা চেন। আমি হকিস্টিকটা নিলাম, আমার রুমমেট কেকে নিল চেন। কীভাবে ওগুলো চালাতে হয়, প্রায় কেউই জানত না, আমি তো জানতামই না, কিন্তু হাতে ওগুলো থাকলে কনফিডেন্স বাড়ে। প্রায় পুরো হস্টেল এই রকম চেন রড হকিস্টিক ইত্যাদি জিনিস নিয়ে নিচে মেন গেটের সামনে লবিতে পজিশন নিল, কেবল মাত্র একজন ফোর্থ ডান ব্ল্যাক বেল্টের মোকাবিলা করার জন্য। … More জলু – অষ্টম পর্ব

জলু – সপ্তম পর্ব

এই বার একটু ভয় করতে শুরু করল, ফরেস্ট রেঞ্জার অফিসার, না জানি কি জাঁদরেল লোক হবেন টবেন। ধমকেই যদি ভির্মি খেয়ে যাই, তা হলে বার্গেইন করব কী করে? আমরাই উদ্যোগী হয়ে গঞ্জ খুঁজতে বেরিয়ে পড়লাম, পেয়েও গেলাম একটু হাঁটতেই, ছোট্ট গ্রামের মধ্যেই আরও ছোট্ট একটা চত্বরে গুটিকয় দোকান, তার নাম গঞ্জ। বোদাগঞ্জে তখনও বিদ্যুৎ পৌঁছয়নি, তাই বেলাবেলি এখানে লোকে দোকানবাজার সেরে ফেলে সন্ধের মধ্যে বাড়ি ঢুকে পড়ে, বন্য জন্তু না থাকলেও অন্ধকারে জঙ্গলে পথ হারয়ে ফেলা বিচিত্র নয়। তো, সে যাই হোক, সেখানে গিয়ে জিগ্যেস করতেই রেঞ্জার সাহেবকে দেখিয়ে দিল। তাঁকে দেখে এবার আমরা সত্যিই ভির্মি খেলাম। আমি নিজে চরম রোগা প্যাংলা ছেলে, আমার সামনে যাঁকে দেখতে পাচ্ছি, সেই রেঞ্জার সাহেব আমার থেকেও বেশি রোগা, স্রেফ ফুঁ দিলে উড়ে যাবেন এ রকম চেহারা, ওই শরীরে সাদা শার্টটাও যেন লাগছে কাকতাড়ুয়ার মতো, একটা বাঁশের তৈরি বেঞ্চিতে বসে চা খাচ্ছেন। বুকে বল এল। গিয়ে মিহি গলায় দাবি পেশ করলাম, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছেলে, বেড়াতে এসেছি, দয়া করে আজ রাতের মতো বাংলোটা যদি দ্যান … উনি ততোধিক মিহি গলায় বললেন, বাংলো তো ও ভাবে দেওয়ার নিয়ম নেই, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বড় বড় অফিসাররা যখন আসেন, তখন তাঁদের জন্য এই বাংলো রাখা থাকে। এমনিতে এখানে থাকতে হলে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লিখিত অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। আর সেই ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের অফিস হল গিয়ে শিলিগুড়িতে। সুতরাং … … More জলু – সপ্তম পর্ব

জলু – পঞ্চম পর্ব

ফিরে আসি কলেজের সেই কনসেশন ফর্মে। একটাই ফর্ম হত, যাওয়া এবং ফিরে আসার জন্য। যে ভদ্রলোক ফর্মগুলো ইস্যু করতেন, ওয়ার্কশপ ইন্সট্রাক্‌টর, তিনি বেশ দয়ালু প্রকৃতির ব্যক্তি ছিলেন। ছাত্রদরদী। পুরো ফর্মটা লিখতেন চেলপার্কের সবুজ রংয়ের কালিতে। নো ডটপেন। ডটপেন তখন প্রচলিত হলেও কালিপেনও চলত। ছাত্রদের কেবল কাজ ছিল নিজেদের সুবিধের জন্য চেলপার্কের একই রংয়ের আরেকটা কালির শিশি কিনে আনা, একটা কালি-পেন, জনসনের ইয়ার বাড, অভাবে তুলো, আর এক শিশি জিওলিন; এই কটা জিনিস নিজেদের পজেশনে রাখা। … More জলু – পঞ্চম পর্ব

জলু – চতুর্থ পর্ব

চা বাগান কোথায় গিয়ে শেষ, কেউই কখনও দেখি নি, হস্টেলের ছাদ থেকেও চা বাগানের শেষ দেখা যায় না। অন্যপ্রান্তে খালি আকাশ। খালি বটে, তবে এই খালি আকাশই জাদু দেখায় নভেম্বরের মাঝ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এটা ক্যাম্পাসের উত্তর দিক। ঝকঝকে হেমন্তের ওয়েদারে আকাশের গায়ে ফুটে ওঠে হিমালয়, পুরো নীল রংয়ের। আর সেই হিমালয়ান রেঞ্জের মাথায় মুকুটের মত ঝকঝক করে তিনটে বরফে ঢাকা শৃঙ্গ : কাঞ্চনজঙ্ঘা, সান্দাকফু, ফালুট। লোকে পয়সা খরচা করে এদের দেখতে আসে কত দূর দূর থেকে, আমরা হস্টেলের ছাদে বসে, নিজের বেডে বসে দিনের পর দিন দেখেছি কাঞ্চনের রূপ, কখনও টকটকে লাল, কখনও আগুনের হল্কার সোনালী হলুদ রং, কখনও ধবধবে সাদা, কখনও বিষণ্ণ নীল। তবে বছরে ঐ একটা সময়েই দেখা যেত, এক মাসের জন্য। তার পরেই কুয়াশায় ঢেকে যেত তরাই ডুয়ার্স। সে আরেক রূপ। … More জলু – চতুর্থ পর্ব

জলু – দ্বিতীয় পর্ব

সবেমাত্র রুম খুঁজে হোল্ডঅল খুলে তোষক বের করে পেতেছি টিনের খাটে, আবিষ্কার করেছি তাতে বসলে উঠলে ঘটাং ঘটাং করে বিকট শব্দ হয়, তখন বেলা দশটা, হস্টেল মোটামুটি ফাঁকা, সবাই কলেজে, কেবল ফার্স্ট ইয়ারের সদ্য ইনটেক নেওয়া ছেলেরা রয়েছে, আমাদের ক্লাস তখনও শুরু হয় নি। হ্যাঁ, ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে অ্যাডমিশন হয় না, হয় ‘ইনটেক’। ছোট ঘর, রুমমেট তিনজন, আমাকে নিয়ে চার, তাদের সাথে আলাপ করলাম। আমার খাট জানলার ধারে, করিডরের দিকের জানলা, সেই জানলা ভর্তি হয়ে আছে অজস্র অচেনা মুখে, আর প্রায় চেঁচামেচির পর্যায়ে চলে যাওয়া একটা সম্মিলিত ফিসফাস, ‘ছানা এস্‌চে, নতুন ছানা এস্‌চে’। খাটের ওপর সব শুনেও কিছুই শুনতে পাচ্ছি না এবং কিছুই-বুঝতে-পারছি-না (এটা সত্যিই, আমাকে ছানা বলছে এটুকু বুঝছিলাম, কিন্তু ছানা কেন বলছে সেইটা বুঝি নি) মত মুখ করে বসে আছি আমি আর বাবা। বাবা ট্রাঙ্কের চাবি আমার পৈতেয় বেঁধে দিয়েছে (তখনও পৈতে পরতাম), ঘরের লকারে আমার জায়গা মিলে গেছে, এমন সময়ে … … More জলু – দ্বিতীয় পর্ব

জলু – প্রথম পর্ব

নিজের জীবনে পরে অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েছি, কিছু জিতেছি, কিছু হেরেছি, কিছু লড়াই এখনও চলছে, কিন্তু সে ছিল আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ জেতা। ইলেভেনে ফেল, হেডুর দয়ায় টুয়েলভে ওঠা, বাংলার কোচিংএ যে মেয়েটিকে দেখে হাবুডুবু খেতাম, তাকে একদিন সাহস ভরে তুতলেমুতলে প্রোপোজ করতে গিয়ে জোরদার প্রত্যাখ্যান পাওয়া, অঙ্ক ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির কোচিংয়ে গিয়ে প্রতি সপ্তাহে আবিষ্কার করা অন্যদের থেকে আমি কতটা পিছিয়ে আছি, দিন রাত এক হয়ে যাচ্ছে পড়ার ব্যাকলগ ক্লিয়ার করতে, তার মধ্যে হাতে আসছে আনা ফ্র্যাঙ্কের ডায়েরি, তার মধ্যে ঠিক সময় করে বন্ধুদের সাথে হ্যাহ্যাহিহি করাও চলছে, আর মাথার মধ্যে সমানে ঘুরছে – সত্যসাধনবাবু একঘর বন্ধুবান্ধবীর সামনে আমাকে বলেছিলেন, তুমি অমিতাভ মিত্র দেখে কী করবে, জয়েন্ট ফয়েন্ট তোমার দ্বারা … আর আমি পড়ার মাঝে কেবল বিড়বিড় করছি, আমি পেয়ে দেখাব আপনাকে স্যার, আমি ঠিক পেয়ে দেখাব।  … More জলু – প্রথম পর্ব

দুই দেশ, ছয় রাজ্য, দুই চাকা, পাঁচ হাজার একশো কিলোমিটার ও এক পাগলঃ পর্ব ১৬

More দুই দেশ, ছয় রাজ্য, দুই চাকা, পাঁচ হাজার একশো কিলোমিটার ও এক পাগলঃ পর্ব ১৬

দুই দেশ, ছয় রাজ্য, দুই চাকা, পাঁচ হাজার একশো কিলোমিটার ও এক পাগলঃ পর্ব ১৫

More দুই দেশ, ছয় রাজ্য, দুই চাকা, পাঁচ হাজার একশো কিলোমিটার ও এক পাগলঃ পর্ব ১৫