জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – দ্বাদশ ও শেষ পর্ব

ঘুম, কিন্তু ঘুম নয়, আধঘুম যেন, ঘুমের মধ্যেই শুনতে পাচ্ছি, ধাবার ভেতরে বক্সে পুরনো দিনের হিন্দি গান বাজছে – মহম্মদ রফি, আশা ভোঁসলে, এটা কি বাণী জয়রাম? – শুনতে পাচ্ছি, ওরা লস্যি খাবে বলছে, – শুনতে পাচ্ছি, ধাবার মালিক বলছে, গরমি বহোত হ্যায়, য়ঁহা সে দো কিলোমিটার আগে এক নহর হ্যায়, বঁহা ঠন্ডা পানি মিলেগা, চাহো তো জা কর নহা কে আ জাও। -শুনতে পাচ্ছি, ওরা বলছে, দরকার নেই – শুনতে পাচ্ছি, ওরা খাবার অর্ডার দিচ্ছে। কী রকম একটা বেহুঁশ অবস্থায় ছিলাম, খানিকক্ষণের জন্য। ধীরে ধীরে ঘোরভাবটা কাটল। উঠে জল চাইলাম। পর পর দু গ্লাস জল খেলাম। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – দ্বাদশ ও শেষ পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – একাদশ পর্ব

দাঁড়ালে তাও দু চারটে কথা বলার সুযোগ জোটে, একনাগাড়ে চলতে থাকলে খানিক বাদে একটা একঘেয়েমি গ্রাস করে। এই অন্ধকার, ট্রাকের সাথে নেগোশিয়েশন – মাথাটা কেমন যেন জ্যাম হয়ে যায়। নিজের মনেই একটা গান ধরলাম, তারপরে কী মনে হল, গানটা থামিয়ে মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল একটা ছড়া – একেবারেই আনরিলেটেড, আমাদের ছোটো নদী চলে আঁকেবাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে। যতটা মনে ছিল, বিড়বিড় করে বকলাম, তার পরেই মাথায় এল জব কোই বাত বিগড় জায়ে – খানিক পরে খেয়াল করলাম আমি আবার ছড়া বলছি – আমি যখন ছোট ছিলাম, খেলতে যেতাম মেঘের দলে। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – একাদশ পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – দশম পর্ব

কিন্তু কোথা হইতে কী হইয়া গেল, একটা জায়গায় এসে – বুঝতে পারি নি, বাইকের চাকা চলে গেল বরফের ওপরে, দুদিকে এবং রাস্তার মাঝেও চাপ চাপ বরফ, জাস্ট সামনের গাড়ির টায়ারের দাগ ধরে চলা উচিত এইসব রাস্তায়, চলছিলামও তাই, কিন্তু বরফে একবারের জন্য চলে গেল সামনের চাকা, স্কিড করল, আমি ব্যালেন্স হারালাম, এবং ছিটকে পড়লাম। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – দশম পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – নবম পর্ব

আমি, বিবেক আর প্রিয়াঙ্কা মিলে আলোচনায় বসলাম আবার। কী করা উচিত। আমি বললাম, ওয়র্স্ট কেস ধরে নিয়ে প্ল্যান করা উচিত। আমরা এগবো, যদি খারদুং গ্রামে ঘর না পাই, তা হলে আবার পঁচিশ কিলোমিটার ফিরে আসতে হবে। এখান থেকে লে একশো পঁচিশ কিলোমিটার। আমার কাছে যা তেল আছে, তাতে লে পর্যন্ত পৌঁছনো যাবে, তবে এর পরে অর্ধেক রাস্তা আপহিলস, তেল বেশি টানবে, তাই ওয়র্স্ট বিবেচনা করতে হলে আগে তেলের খোঁজ নিতে হবে। তেল পাওয়া গেলে এক রকমের প্ল্যান, না পেলে আর কোনও রিস্ক নেবার নেই, আমরা এখানেই রাতে থেকে যাবো। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – নবম পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – অষ্টম পর্ব

প্রথমে সুমিত, তারপরে আমি, তারপরে বিবেক জড়িয়ে ধরলাম ওকে। গুরু, কী করেছো? ছবি তুলব কী, নিজের চোখকে তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। গুরদীপ, জাস্ট কিছুই হয় নি, এই রকম একটা ভাবে হেসে বলল, কোই বড়ি বাত নেহি, আমি মাউন্টেনিয়ারিং-এর ট্রেনিং নিয়েছিলাম কিছুদিন। এইটুকু নামাওঠা তো আমার কাছে সাধারণ ব্যাপার।

আমি তখন ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কী বলব কিছু বুঝতে না পেরে ওর হাতদুটো চেপে ধরলাম। জাস্ট দুটো গ্লাভসের জন্য এত বড় ঝুঁকি নিতে পারে কেউ! একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত লোকের জন্য। দুদিনের আলাপ, দুদিন বাদেই আবার যে যার বাড়ি চলে যাব, আর কোনও দিনও দেখা হবে কিনা ঠিক নেই – আমি পারতাম? … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – অষ্টম পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – সপ্তম পর্ব

বাকিরা একটু পেছনে ছিল। তারা এসে পৌঁছনো পর্যন্ত আমি ওই পা-চাপা অবস্থাতেই রাস্তায় পড়ে রইলাম – হার্ডলি দেড় মিনিট। তারা এসে আমার বাইক তুলে আমাকে উদ্ধার করল। লাগে নি একটুও, কিন্তু দাঁড়াবার পরে খেয়াল করলাম, আমার বাঁ-পায়ের নী-গার্ডটা ফেটে দু টুকরো হয়ে গেছে। … অর্থাৎ, নী-গার্ডের জন্য আমার পা বেঁচে গেছে, আমি টেরও পাই নি। নী গার্ড না থাকলে আমার মালাইচাকিটা ফাটত। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – সপ্তম পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – ষষ্ঠ পর্ব

আমিও ত তাইই জানি, এমন ওয়েদার হয় না লে-তে। লাদাখ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল। বৃষ্টি এখানে হয় না, তাই যখন সারা ভারত প্রার্থনা করে ভগবানের কাছে, আল্লা ম্যাঘ দে, পানি দে বলে, লাদাখিরা প্রার্থনা করে, ঠাকুর, গ্লেসিয়ার থেকে জলের সাপ্লাই অব্যাহত রেখো। ওরা কখনও বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করে না। লে-তে বেশির ভাগ বাড়িই পাথরের ওপর মাটির প্রলেপ দিয়ে বানানো। এইখানে তেড়ে বৃষ্টি হলে কী হয় সে আমরা দেখেছি ২০১০ সালে। ফ্ল্যাশ ফ্লাডে লে শহর প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছিল। … … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – ষষ্ঠ পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – পঞ্চম পর্ব

কিন্তু রোমান্টিসিজম বেশিক্ষণ থাকল না। তুষারপাতের মধ্যে দিয়ে গাড়ি চালানো মোটেও সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। একটু এগোতেই বুঝতে পারলাম, করোল বাগ থেকে কেনা স্পেশাল গ্লাভসের ভেতরে আমার আঙুলগুলো জমে গেছে, তীব্র যন্ত্রণা হচ্ছে প্রতিটা আঙুলের ডগায়, এদিকে হেলমেটের সামনের কাচে বাইরের দিকে ছিটে লেগে লেগে জমা হচ্ছে বরফ, একটু বাদে বাদেই সামনেটা অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ভেতরেও নাক থেকে বেরনো নিশ্বাসের জলীয় বাষ্প কাচের ভেতরে জমে আরও ঝাপসা করে দিচ্ছে। গ্লাভসে করে কাচের বাইরেটা সাফ করছি, গ্লাভস সাদা হয়ে যাচ্ছে বরফের চাঙড়ে, চলন্ত অবস্থাতেই পায়ের ওপর হাত থাবড়ে গ্লাভস থেকে বরফ ঝরাচ্ছি, আবার খানিক বাদে একই অবস্থা, কাচ ঝাপসা, আবার গ্লাভসে করে বরফ সরানো … … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – পঞ্চম পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – চতুর্থ পর্ব

খানিক পরে আমরা একসাথেই শুরু করলাম। গুমরি বলে একটা চেকপোস্ট এল, সেখানে আমাদের সব্বাইকে নিজের নাম, গাড়ির নাম আর ড্রাইভিং লাইসেন্স নম্বর রেকর্ড করতে হল। তারপরে আবার শুরু হল খারাপ রাস্তা। সুমিত আর গুরদীপের বুলেট আর অ্যাভেঞ্জার লাফাতে লাফাতে অদৃশ্য হয়ে গেল সামনে, আমি পেছনে টলমলায়মান লাগেজের পাহাড় নিয়ে ল্যাগব্যাগ করতে করতে এগোলাম। প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার সেই খারাপ রাস্তা যখন শেষ হল, দেখি সামনেই আমার সেই পরিচিত বোর্ড, ওয়েলকাম টু দ্রাস। তিন বছর আগে দেখে গেছিলাম। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – চতুর্থ পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – তৃতীয় পর্ব

বাইক পিছোলাম, কিন্তু মেন স্ট্যান্ড দিতে গিয়ে হল এক চিত্তির। ওপরে যে সতীশ শাহের মৃতদেহ ডানদিকে হেলে রয়েছেন, সেটা ভুলে গেছিলাম। সাইড স্ট্যান্ড (এটা বাইকের বাঁদিকে থাকে) থেকে সোজা করতেই লাগেজ সমেত পুরো বাইকের ওজন শিফট হয়ে গেল ডানদিকে, আমি দুহাতেও আর ধরে রাখতে পারলাম না, চোখের সামনে সপাটে ডানদিকে লাগেজ-সমেত আছাড় খেয়ে পড়ল আমার বাইক, ডানদিকের ভিউ ফাইন্ডারটা কড়াৎ করে ডান্ডাসমেত ভেঙে গিয়ে ট্রাকের নিচে, সেই ডান্ডার ওপরেই বসানো ছিল আমার হেলমেট, সেটা গড়িয়ে ট্রাকের ডানদিকের চাকার ঠিক তলায়।

বাইকের ওজন আটানব্বই কিলো, সে সমধ্যে আমার সম্যক ধারণা ছিল, কিন্তু লাগেজসমেত যে ওজন আরও চল্লিশ কিলো বেড়ে গেছে, সেটা বুঝতে পারি নি, আর সেই একশো আটত্রিশ কিলো পুরোটা ডানদিকে শিফট হয়ে গেলে আমার ক্ষমতা কী তাকে বাঁদিকে টেনে ধরব? আমার নিজের ওজন তো ষাট কিলো। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – তৃতীয় পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – দ্বিতীয় পর্ব

কিন্তু, ঘুমোতে পারছি না কেন? জীবনে প্রথম, সারাদিন এই রকম বাইক রাইডিং-এর পর রাতেও তার হ্যাংওভার কাটছে না। চোখ বুজলেই খালি মনে হচ্ছে, আমি বাইক চালাচ্ছি, আর এই সামনে একটা ট্রাকে গিয়ে বোধ হয় সপাটে ধাক্কা মারলাম। চোখ খুলে গেল, কই, না তো! আমি তো বাইক চালাচ্ছি না, আমি তো বিছানায় শুয়ে আছি। … আবার চোখ বুজলাম, আবার মনে হতে লাগল, ফোকাস সরে যাচ্ছে, আমি চোখ বুজছি কেন? পেছন থেকে প্রচণ্ড গতিতে একটা ট্রাক ছুটে আসছে … আমি চোখ বুজলেই ও আমাকে পিষে দিয়ে বেরিয়ে যাবে, চোখ বুজলে চলবে না, ওয়েক আপ, সিকি, ওয়েক আপ, আবার চমকে জেগে ওঠা, না তো, আমি তো হোটেলের বিছানায়, সুন্দর এসি চলছে, গরম নেই একটুও। আবার চোখ জুড়িয়ে আসছে, আবার ট্রাকেরা এগিয়ে আসছে আমাকে পিষে ফেলার জন্য … … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – দ্বিতীয় পর্ব

জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – প্রথম পর্ব

ঘরের দরজা বন্ধ করে খানিক চোখ বন্ধ করে বসে রইলাম। আমাকে কাল একা বেরোতে হবে, একা, কোনও ব্যাকআপ ছাড়া। বাইক বিগড়োলে সারাবার মত একটা জিনিস আমার কাছে নেই, পুরো খালি হাতে বেরোব। ভরসা আছে, এ রাস্তায় সঙ্গী মিলে যায়, মিলে যাবে ফর শিওর। কিন্তু কবে কখন কোথায় মিলবে, জানা নেই। তবু, যা থাকে কপালে, রাস্তা তখন আমায় চুম্বকের মতন টানছে, আমাকে রাস্তায় নামতে হবেই, এতটুকুও বাধা আসতে পারে এমন কিছু আমি টলারেট করতে রাজি নই। সর্দার যাক জাহান্নমে। … More জুলে, আবার, জুলে লাদাখ – প্রথম পর্ব