প্রমাণপত্রের জন্ম এবং সর্ষেদানারা – পর্ব ৪

বুধবারটা বিদেশভ্রমণ করেই কেটে গেল, যে কাজে আসা, সে কাজ এখনও শুরুই হল না। আজ বৃহস্পতিবার।

কাল বি মজুমদারকে একবার ফোন করে নিয়েছিলাম সন্ধ্যের পরে, উনি বলেছিলেন আজ বেলা এগারোটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে ফোন করতে। কাল মিউনিসিপ্যালিটিতেও বলেছিল, এগারোটা সাড়ে এগারোটার আগে কাজ শুরু হয় না। তো, বাজুক এগারোটা। আজ আর সকাল সকাল ওঠার তাড়া নেই।

নেই যদিও, তবু ঘুম তো আর আসে না, আমি হলাম গিয়ে আপনারা যাকে বলেন আর্লি রাইজার, সাড়ে ছটার পর বিছানায় থাগতে পারিনে। তাই উঠে এইটা সেইটা করে খানিক সময় কাটিয়ে চান করে রেডি হয়ে ঠিক বেলা এগারোটার সময়ে মজুমদারবাবুকে ফোন লাগালাম। তিনি ফোন তুলে বললেন, আপনি হোটেলেই থাকুন, আমি আসছি, ওখানে এসে আপনাকে ফোন করছি, আপনি তখন বেরোবেন। আপনি চৌপথীতেই আছেন তো?

বেশ। হোটেলেই বসে রইলাম খানিকক্ষণ। সোয়া এগারোটা নাগাদ বি মজুমদারের ফোন এল আবার, আপনি এইবারে মিউনিসিপ্যালিটিতে চলে আসুন, আমি ওখানেই আসছি।

ধড়মড় করে বেরোলাম। আর হাঁটার রিস্ক না নিয়ে একটা টোটোয় উঠে বসলাম, ঠিক পাঁচ মিনিটে মিউনিসিপ্যালিটির সামনে পৌঁছে গেলাম। বি মজুমদারকে আগে কখনও দেখি নি, অতএব পকেট থেকে ফোনটা বের করে সবে ডায়াল করেছি, তখনই মিউনিসিপ্যালিটির গেটের সামনে আরেকটা টোটো থেকে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা পরা একজন ভদ্রলোক নামলেন, পকেট থেকে ফোন বের করে সেটা বাজতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লেন। বি মজুমদারের সাথে হাত মেলালাম। উনিই আমাকে সাথে করে নিয়ে গেলেন সেই জন্মমৃত্যু রেজিস্ট্রারের ঘরে। সেখানে তখন সব টেবিলেই একজন করে বসে আছেন, তার মধ্যে একজনের কাছে নিয়ে গিয়ে আলাপ করিয়ে দিলেন, সঞ্জয় নাম। সেখানে মজুমদারবাবু আর আমি মিলে আমার বৃত্তান্ত বললাম, সঞ্জয় সেসব শুনেটুনে বললেন, কিন্তু এর জন্য তো আপনাকে কোর্ট থেকে এফিডেবিট করিয়ে আনতে হবে।

বার্থ সার্টিফিকেট জন্মের এক বছরের মধ্যে তুলতে হয়, সেটা না হলে,এক বছরের বেশি দেরি হয়ে গেলে কোর্ট থেকে এফিডেভিট করাতে হয় যে, আমি অমুক সময়ে জন্মেছিলাম (বা আমার ছেলে/মেয়ে জন্মেছিল), কোনও কারণে আমি এক বছরের মধ্যে তুলতে পারি নি বার্থ সাট্টি, তাই আমাকে এখন তুলতে অনুমতি দেওয়া হোক। স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেট সেটা অ্যাপ্রুভ করেন, তবে মিউনিসিপ্যালিটি সেই মর্মে নতুন বার্থ সার্টিফিকেট বানায়।

মানে, যত সহজ ভেবেছিলাম, তত সহজ নয় – এখন কোর্টের চক্কর কাটতে হবে। অসহায়ভাবে বি মজুমদারের মুখের দিকে তাকালাম।

তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর, সহজে ঘাবড়াবার লোক নন, কিন্তু খানিকক্ষণের জন্য মনে হল তিনিও হাতড়াচ্ছেন সমাধান। উনিও হয় তো আমার মতই ভেবেছিলেন মিউনিসিপ্যালিটিতে এসে বললেই বার্থ সার্টিফিকেট বানানো যায়, এখন যে কোর্টের চক্কর কাটতে হবে, সেটা ওঁর হিসেবেও ছিল না।

কিন্তু ঐ খানিকক্ষণের জন্যই। চট করে চেয়ার থেকে উঠে পড়ে বললেন, চলুন ভাই, দেখি কোর্টে গিয়া কিসু করা যায় কিনা। আমি আশিসকে চিনি, ওর সাথে কথা বলছি। ও এখানকার বড় লইয়ার।

মিউনিসিপ্যালিটি থেকে বাইরে এসে আমরা একটা টোটো ধরলাম, এই রাস্তাতেই খানিক দূরে পড়বে এসডিজেএম কোর্ট। টোটোয় বসে, দিল্লিতে কী করি, কতদিন চাকরি করছি, এইসব দুচারটে প্রশ্ন করার পরে মজুমদারবাবু জিগেস করলেন, আপনার কোন দেশের ভিসার জন্য বার্থ সার্টিফিকেট লাগবে?

খুবই কুণ্ঠিত স্বরে কুঁইকুঁই করে উত্তর দিলাম – নে … নেদারল্যান্ডস।

গোঁফটা নাচিয়ে বি মজুমদার বললেন, অ, হল্যান্ড। রুড গুলিটের দেশ।

উনি টের না পান, খুব সাবধানে একবার ঢোঁক গিললাম। খেলাধূলোর জগতে আলোচনা মোড় নিলেই আমি খুব, মানে খুবই বিপন্ন বোধ করি। আমি জীবনে কোনও খেলা দেখি নি, দেখি না। কয়েকটা জিনিসে আমার একেবারে কোনও ইন্টারেস্ট জাগে না, বিড়ি সিগারেট মদ, আর খেলা। কোনও রকমের স্পোর্টসে আমার আগ্রহ নেই, ছোটবেলায় মায়ের ঠেলা খেয়ে খেয়ে পাড়ার ক্লাবে যেতে হত, কদিন বল নিয়ে ছোটাছুটির পরে বুঝেছিলাম এ আমার লাইন নয়, তাই সেফলি, গোলকিপার হয়ে পরের দুত্তিন বছর কোনওরকমে কাটিয়ে খেলার মাঠের সাথে চিরদিনের মত সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলেছিলাম, তখন আমি ক্লাস সিক্স পেরিয়ে সেভেনে উঠছি। রুড গুলিট তো অনেক দূরের ব্যাপার, আমি ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের প্লেয়ারদের নামও জানি না, শেষ কয়েকটা নাম শুনেছিলাম, কৃশানু, চিমা ওকোরি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত – তা তাঁরা কোন দলের হয়ে খেলতেন, আমি সেটাও জানার প্রয়োজন বোধ করি নি কোনোদিন।

সিমিলার অবস্থা ক্রিকেট বা অন্যান্য খেলাতেও। এই যে বিশ্বকাপ চলছে, একটা খেলাও আমি দেখি নি, পাশের ঘরে টিভি চললে আমি এ ঘরে বসে ব্লগ লিখি বা অন্য কিছু করি। ইন্ডিয়ান ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন কে, কারা খেলছে, তাদের জার্সির রঙ কী, কটা দেশ খেলছে, কিচ্ছু জানি না, কিচ্ছু না। আমার নন-ডিপ, সম্পূর্ণভাবে নন-ডিপ।

কিন্তু তাই বলে পরবাসে এসে আমি হার মানব কেন? পরবাস হোক আর যাই হোক, আমার জন্মস্থান বলে কতা। সাঁইসাঁই করে মনে মনে পিছিয়ে গেলাম অনেকগুলো বছর। সেই উনিশশো আশি কিংবা আর্লি নব্বইয়ের দশকে – বড়পিসির বাড়িতে বড় কালার টিভি এসেছে, সেই কালার টিভির রঙীন ছবি দেখার লোভে আমি যতক্ষণ পারতাম পড়ে থাকতাম পিসির বাড়ি। আশেপাশে সবারই তখন সাদাকালো টিভি, আর আমাদের বাড়িতে টিভিই ছিল না বোধ হয়, সেই সময়ে, মনে আছে, একদিন চূড়ান্ত রঙীন একটা মাঠে একটা ফুটবল খেলা দেখে ফেলেছিলাম। খেলা দেখার উৎসাহে নয়, স্রেপ রঙীন ছবি দেখার আগ্রহে পুউরো নব্বই মিনিট বসে থেকে একটা খেলা দেখেছিলাম, যে খেলার পরের দিন খবরের কাগজে উঠে এসেছিল তিন চারটে নতুন নাম, তাদের একটা রুড গুলিট, লম্বা লম্বা অসংখ্য বিনুনি করা একটা হ্যান্ডসাম মুখ। আনন্দবাজার আজন্ম পোঁয়াপাকা, কদিন পরেই, বাকিদের থেকে আলাদা হবার তাগিদে তারা লোকটার পদবি বদলে করে দিয়েছিল “খুলিট”।

গুলিট হল্যান্ডের প্লেয়ার ছিলেন কিনা আমি সেদিনও জানতাম না, আজও জানি না, কিন্তু সে কথা আমি বি মজুমদারকে বলব কেন, আলিপুরদুয়ারের টোটোয় বসে? বদলে ‘আম্মো জানি’ ভাব করে বলে ফেললাম আরও দুটো নাম, ভ্যান বাস্তেন আর গাইকোচিয়া। এই তিনজনই একটাই দলের প্লেয়ার ছিলেন, সেটা জানতাম। ব্যস্‌! আমার স্টক সেশ।

বি মজুমদার এতেই খুশি, গোঁফ চুমরে বললেন, হুঁ হুঁ, সে কী খেলেচিল তারা। আমিও বললাম, হ্যাঁ হ্যাঁ, সে কী খেলেচিল।

কোর্ট এসে গেল। বি মজুমদার দেখলাম, কাউন্সিলর হবার সুবাদেই হোক বা যে কারণেই হোক, স্থানীয় লোকজনের কাছে খুব পরিচিত এবং পপুলার। আমাকে কিছুতেই টোটোর ভাড়া দিতে দিলেন না, দুজনকার কুড়ি টাকা হয়, সেটা তো দিলেনই, তার ওপর আরো দশ টাকা দিলেন টোটোওলাকে। টোটোওলা প্রচণ্ড খুশি হয়ে চলে গেল সেখান থেকে।

ছোট্ট কোর্ট কম্পাউন্ড। সামনে একটা দালানমত এলাকা, সেখানে সারিসারি লোক বসে, তাদের মধ্যে একজনকার সামনে নিয়ে এসে বি মজুমদার বললেন, ভাই এরটা একটু করে দিস না ভাই, আমি আশিসকে জানায়ে রাখসি। সেই লোকটি বি মজুমদারকে দেখে এবং আশিস নামক সিনিয়র লইয়ারের নাম শুনেই যুগপৎ খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে আমাকে এবং বি মজুমদারকে সামনের বেঞ্চে বসালেন, এবং একটি অল্পবয়েসি ছেলেকে অ্যাপয়েন্ট করে দিলেন আমার কাজের জন্য, রন্টু নাম, খুব হাসিখুশি একুশ বাইশ বছর বয়েসী অ্যাসিস্ট্যান্ট।

রন্টুর হাতে আমাকে গুঁজে দিয়ে বি মজুমদার বললেন, আচ্ছা সিকিবাবু, আমাকে যে এবার যেতে হবে, আমি আশিসকে সব জানিয়ে রেখেছি, এই রন্টু ওর শাগরেদ, ও সব করে দেবে, আপনি ওর সাথে একটা বয়ান বানিয়ে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করুন, এরা বাকি সব করে দেবে। আমি আসি?

বি মজুমদারকে বিদায় জানিয়ে আমি রন্টুর পেছন পেছন গেলাম একটা দরমার বেড়ালাগানো ঘরে, সেখানে একজন নোটারি কম্পিউটার আর প্রিন্টার নিয়ে বসে পর পর স্ট্যাম্প পেপারে এফিডেভিট টাইপ করছে। রন্টুর তত্ত্বাবধানে খুব বেশিক্ষণ আমাকে বসতে হল না, একটু পরেই বয়ান তৈরি হয়ে প্রিন্ট আউট বেরিয়ে এল, আমাকে স্ট্যাম্প পেপারের পয়সাও দিতে হল না, আপাতত, রন্টু বলল, কাজ হলে সব হিসেবে করে নেবে। … আমি অলক্ষ্যে আরেকবার ঢোঁক গিললাম।

রন্টুর সাথে গেলাম একটু দূরে লোয়ার ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে। দোতলায় তখন গিজগিজে ভিড়। এজলাশের চারদিকে লাল শালু সম্ভবত শিপিয়েমের আমলে লাগানো হয়েছিল, অনেক কষ্ট করে তার লাল রঙটা আন্দাজ করা যায়। সেইখানে আমার সেই বয়ান জমা হল, সাথে আধার কার্ডের কপি। ম্যাজিস্ট্রেট সায়েব দেড়টার সময় আসবেন। এক এক করে নাম ডাকবেন, আমার নাম ডাকলেই আমাকে কাঠগড়ায় উঠে বলতে হবে আমি আমার বার্থ সার্টিফিকেট উদ্ধার করতে এসেছি। লোকাল অ্যাড্রেস প্রুফ চাইতে পারেন, কিন্তু পেশকার বললেন, আমি জানিয়ে দেব, উনি জানতে চাইবেন না।

প্রুফ তো আমার সবই আছে, সবই নিয়ে এসেছি, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স – কিন্তু আলিপুরদুয়ারের ঠিকানায় তো কিছুই নেই, এক সেই হাসপাতালের ডিসচার্জ সার্টিফিকেট ছাড়া। সে সেই তেতাল্লিশ বছরের পুরনো। সুতরাং থাকলেও কিচ্ছু দেখানো যাবে না। আধার কার্ড আর সেই ডিসচার্জ সার্টিফিকেটের কপি লাগানো আছে, হলে ওতেই হবে।

না হলে কী হবে, জানালনা রণ্টু, বলল, আমি সামনে থাকব না, আমি বাইরেটায় ওয়েট করছি, হয়ে গেলে চলে আসবা।

ম্যাজিস্ট্রেট এলেন ঠিক দেড়টায়, মাঝবয়েসী খেঁকুরে টাইপের একজন। পাঁচ-ছজনকার পরেই আমার নাম ডাকল পেশকার, আমি সেই কাঠগড়ায় উঠলাম। ম্যাজিস্ট্রেট আমার কাগজপত্র দেখে বললেন, অ্যাড্রেস প্রুফ কোথায়?

আমি আমতা আমতা করে বললাম, আমি তো আনি নি, এতে হবে না?

উনি কাগজপত্র আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন, অ্যাড্রেস প্রুফ নিয়ে আসবেন, নইলে আমি আপ্রুভ করব না। যান।

নেমে এলাম। ভিড়ের মধ্যে পেছনেই রন্টু দাঁড়িয়ে ছিল। আমতা আমতা করে বলল, আমি তো বলেছিলাম যেন জিজ্ঞেস না করেন … আচ্ছা চলেন, চিন্তার কিছু নাই, হায়ার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যাবো, উনি পুরো জেলার কেস দ্যাখেন, আমার চেনাশোনা আছে, ওঁর কাছে হয়ে যাবে। এইটা দিয়েই হয়ে যাবে।

কাগজপত্র নিয়ে ফিরে এলাম আগের বিল্ডিংএ, এবারেও দোতলায়, সারি সারি ম্যাজিস্ট্রেটদের চেম্বার, তার একটায় রন্টু নিয়ে গিয়ে ঢোকাল আমাকে। এখানে এজলাশ নেই, তবে পেশকার আছে। আরেকটি কমবয়েসী ছেলে। ম্যাজিস্ট্রেট ভেতরে বসে আছেন, পর্দা ঠেলে সে ঢুকল ভেতরে, আমার কাগজপত্র নিয়ে। খানিক বাদে বেরিয়ে এসে বলল, আসেন।

আমি ভেতরে গেলাম। যে ম্যাজিস্ট্রেটটি বসে আছেন, তিনি অত্যন্ত কমবয়েসী, তিরিশ ছুঁয়েছেন কি ছোঁননি, ঝকঝকে মুখচোখ, কথায় উত্তরবঙ্গের কোনও টান নেই। তিনি আমার কাগজপত্র উল্টেপাল্টে দেখে নিরীহ স্বরে ঐ একটাই প্রশ্ন করলেন, আপনার লোকাল অ্যাড্রেস প্রুফ?

ঘরে এই মুহূর্তে আমি আর ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কেউ নেই। নিচু গলায় বললাম, দেখুন, সত্যি কথা বলতে গেলে, নেই। আমি জন্মেছিলাম এখানে, জন্মের পরে পরেই বাবা এখান থেকে ট্রান্সফার হয়ে চলে যান, আমি এখন দিল্লিতে থাকি, দিল্লির যত খুশি অ্যাড্রেস প্রুফ চান, সব আমার হাতের এই ফোলিওতে রয়েছে, আপনাকে অরিজিনাল দেখাতে পারব, পাসপোর্ট অবধি, কিন্তু আলিপুরদুয়ারের তো কিছুই নেই – আমি জাস্ট পরশু রাতে এখানে এসে পৌঁছেছি, আমার বার্থ সার্টিফিকেটটা খুব দরকার, এই এই ব্যাপার। অল দ্যাট আই হ্যাভ ইজ দিস ডিসচার্জ সার্টিফিকেট।

উনি এক মুহূর্ত চেয়ে রইলেন আমার দিকে, তারপরে আরও শান্ত গলায় বললেন, দেখুন, আমি এক্ষেত্রে অসহায়। আপনার দিল্লিতে অ্যাড্রেস প্রুফ আছে তো আপনাকে দিল্লির কোর্টেই এর অ্যাপ্রুভাল বের করতে হবে।

আমি বললাম, স্যার, সে চেষ্টাও করেছি, একটু বোঝার চেষ্টা করুন, দিল্লির লোক আলিপুরদুয়ার কী, সেটা পশ্চিমবঙ্গের কোথায়, সেটা আগে মহকুমা ছিল, এখন জেলা হয়েছে, এ সব কিচ্ছু বুঝবে না, আমি বোঝালেও ওরা ভিজুয়ালাইজই করতে পারবে না, আমি ঠেকে বুঝেছি বলেই খরচা করে এতদূর এসেছি। একটু দেখুন।

ম্যাজিস্ট্রেট আরও শান্ত গলায় বললেন, আমিও তো আপনাকে সাহায্যই করতে চাইছি, কিন্তু লোকাল অ্যাড্রেস প্রুফ না পেলে আমি অপারগ, আমার ক্ষমতা নেই এটাকে অ্যাপ্রুভ করার। আপনি লোকাল অ্যাড্রেস প্রুফ নিয়ে আসুন, বা এসডিও কিংবা ডিএম লেভেলের কাউকে দিয়ে লিখিয়ে আনুন যে আপনাকে জানেন বলে লিখে দেবেন – আমি করে দেব।

শরীর থেকে মনে হল সমস্ত শক্তি চলে গেছে। পায়ে পায়ে বেরিয়ে এলাম ম্যাজিস্ট্রেটের ঘর থেকে। আমার মুখ থেকে সমস্ত শুনে রন্টুর মুখ আরও শুকিয়ে গেল।

দুজনে মিলে নিচে এলাম। মাথায় অজস্র চিন্তা এলোমেলো ঘুরছে। এত খরচা করে আসা কি পুরোটাই বেকার যাবে? আমি না চিনি ডিএমকে, না চিনি এসডিও-কে। তাঁদের কাছে গেলে তাঁরাই বা কেন লিখে দেবেন? তাঁরাও তো সেই অ্যাড্রেস প্রুফই চাইবেন!

রন্টু বলল, চলো দাদা একবার মিউনিসিপ্যালিটিতে গিয়ে কথা বলি, ওদের কাছে নিশ্চয়ই কোনও উপায় থাকবে।

আমি আর বললাম না যে মিউনিসিপ্যালিটি হয়েই আমি তোমার কাছে এসেছি, তবুও চলো – রন্টুর মোটরসাইকেলের পেছনে বসে এক মিনিটে ফিরে এলাম মিউনিসিপ্যালিটি। সঞ্জয়বাবুর সাথে কথা হল – নতুন যেটা জানলাম সেটা আমাকে দমিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।

আলিপুরদুয়ার মিউনিসিপ্যালিটির মিউনিসিপ্যাল বডির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে এপ্রিল মাসেই। লোকসভা নির্বাচনের জন্য নতুন করে পুরসভার ইলেকশন এখনও হতে পারে নি, হবে জুন মাসে, ফলে এখন সবই চলছে এসডিওর নামে। মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যানও আর চেয়ারম্যান নেই, কাউন্সিলররাও আর অফিসিয়ালি কাউন্সিলর নেই। মানে বি মজুমদারকে আমি এখন প্রাক্তন কাউন্সিলর বলতেই পারি। ফলে এদের কারুর হাতেই কোনও ক্ষমতা নেই, যা করবার এসডিওই করতে পারবেন। তাঁর কাছে যাওয়া তো এখন সম্ভব নয়, তিনি ছুটিতে আছেন।

রন্টু বলল, দাদা চিন্তা কোরো না, আমি আশিসকাকুর সাথে কথা বলছি, উনি কিছু একটা উপায় নিশ্চয়ই বার করবেন। আশিসকাকু এখানকার বড় উকিল। আপনি কাল সকাল এগারোটার সময়ে এখানে চলে আসেন।

কে আশিসকাকু, আমি তো চিনি না, রন্টুকে বললাম, ভাই রন্টু, আমি শুধু কালকের দিনটাই আছি, যা দরকার হয় করো, কিন্তু আমাকে লুটে নিও না, আর আমাকে খালি হাতে ফিরিও না, এই দুটোর মাঝামাঝি যা করতে হয়, করো; পরশু শনিবার, কোর্ট বন্ধ থাকবে, পরশুই আমি ফিরছি, যা করতে হবে, কালকেই হবে। একটু দ্যাখো প্লিজ।

রন্টু বারবার বলল, দাদা, চিন্তা কোরো না, আমি দেখসি, কিন্তু আমি রন্টুর কথায় তেমন জোর পেলাম না।

রন্টু কোর্টে ফিরে গেল, আমার আর টোটো ধরার ইচ্ছে ছিল না, কাল রাতের পর থেকে কিছু খাই নি, এখন বেলা দুটো কুড়ি বাজে, এতক্ষণ খিদে পায় নি, এইবারে খিদে পাচ্ছে, দেখি, খাবার জায়গা কিছু পাই কিনা।

মিউনিসিপ্যালিটি অফিসটি যে মোড়ের মাথায়, সেই মোড়ের নাম মাধব মোড়, মোড়ের অন্যদিকেই একটা বড়সড় মিষ্টির দোকান, মাধব মিষ্টান্ন ভাণ্ডার। বাবার কাছে জেনেছিলাম সেই সত্তরের দশকে আমার জন্মেরও আগে থেকে চলছে এই দোকান।

মাধব মিষ্টান্নতে ঢুকলাম না, খালিপেটে মিষ্টি খাবার ইচ্ছে ছিল না – আরেকটু এগিয়ে দেখি আরসালান নামে একটা ছোট্ট বিরিয়ানির দোকান। সেইখানে ঢুকে একথালা বিরিয়ানি সাঁটালাম – সত্যিই উমদা খেতে, মাত্র সত্তর টাকায় ভরপেটেরও বেশি বিরিয়ানি। শেষদিকটায় ঠেসেঠুসে ঢোকাতে হচ্ছিল।

একে একে স্বরাজকে ফোন করলাম, বি মজুমদারকেও ফোন করে বিবরণ দিলাম। স্বরাজ বলল, হুঁ – মিউনিসিপ্যাল বডি ডিজলভ হয়ে গিয়েই সমস্যাটা হয়েছে। দ্যাখ কাল গিয়ে কিছু হয়ে কিনা। বি মজুমদার বললেন, আচ্ছা, কাল যান, দেখি, আমি আশিসকে জানায়ে রাখসি। আমি কাল আর আসতে পারব না, আপনি সরাসরি কোর্টে চলে যান, রন্টুর সাথে কথা বলুন।

বুঝলাম। আর কথা না বাড়িয়ে হাঁটতে হাঁটতে হোটেলের দিকে এগোলাম।

কী করা যায় এরপর? কী করা যায়?

মাথা কাজ করছে না। সকাল থেকে ঘোরাঘুরি, প্রচণ্ড গরম, অসময়ে খাওয়া, হোটেলে ঢোকামাত্রই মনে হল আর চোখ খুলে রাখতে পারছি না। এসি অন করে শুয়ে পড়লাম, আগে একটু ঘুমোই, পরের কথা পরে ভাবা যাবে।

*                                                  *                                                  *

ঘণ্টা দু তিন মড়ার মত ঘুমোলাম। সন্ধ্যের একটু আগে ঘুম ভাঙল। উঠে একটা বই নিয়ে বসলাম। দু পাতা পড়ার পরে উপলব্ধি করলাম, আমি আসলে কিছুই পড়ি নি। পাতাগুলোর দিকে শূন্য চাউনি বুলিয়ে গেছি শুধু।

আজ আলিপুরদুয়ারে দ্বিতীয় দিন। আমার লোকাল অ্যাড্রেস প্রুফ নেই বলে আমার বার্থ সার্টিফিকেটের এফিডেভিটে ম্যাজিস্ট্রেট সই করছেন না। লোকাল অ্যাড্রেস প্রুফ চাই। কীভাবে পাওয়া যায়? কীভাবে?

আমি প্রথম যখন দিল্লি এসেছিলাম, নতুন কোম্পানি জয়েন করেছিলাম, ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রথম অ্যাড্রেস প্রুফ কী দেখিয়েছিলাম? … নয়ডা কুড়ি সেক্টরের এক চিলেকোঠার ঘরে মাসিক দু হাজার টাকার ভাড়ায় শুরু হয়েছিল আমার প্রথম বিবাহিত জীবন। রেন্ট রিসিট পেতাম নিশ্চয়ই। রেন্ট এগ্রিমেন্ট ছিল কি? ছিল।

রেন্ট এগ্রিমেন্ট। ইয়েস! রন্টু তো কোর্টেই কাজ করে, ওখানে বসে একটা রেন্ট এগ্রিমেন্ট বের করা কি খুব কঠিন কাজ হবে? স্থানীয় যে কারুর ঠিকানা ইউজ করে তো বানানো যায় এটা। চাই কি রন্টুরই ঠিকানা দিয়ে বানিয়ে ফেলা যেতে পারে, কাজ হয়ে গেলে ওটা ছিঁড়ে ফেললেই হল!

সন্ধ্যে ছটা বেজেছে একটু আগে। পড়ি-কি-মরি করে রন্টুকে ফোন করলাম, রন্টু ফোন ধরল। বললাম আমার আইডিয়ার কথা – আমার কথা শেষ হবার আগেই আমাকে থামিয়ে দিয়ে রন্টু বলল, দাদা আমি আশিসকাকুর সাথে কথা বলেসি, আশিসকাকুও এই কথাই বলল, রেন্ট এগ্রিমেন্ট বানায়ে কাল চেষ্টা করব, সব হয়ে যাবে, আমি হায়ার ম্যাজিস্ট্রেটের পেশকারের সাথেও কথা বলে রাখসি, ওকে সামান্য টাকা দিতে হবে, বাকি সব ও করে দিবে, তুমি কাল এগারোটা নাগাদ চলে আসো, আইসে আমাকে কল করো।

ইয়েস! ইয়েস!! ইয়েস!!! কিন্তু না, সম্বরো – আগে কাজ হোক। যা সব ম্যাজিস্ট্রেটের নমুনা দেখছি, রেন্ট এগ্রিমেন্ট যদি বলে গ্রাহ্য করি না, তা হলে আমি আবার ব্যাক টু স্কোয়্যার ওয়ান।

বসে বসে হায়ার ম্যাজিস্ট্রেটের কথাগুলো রিক্যাপ করার চেষ্টা করছিলাম। কেমন স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে, শান্ত স্বরে বলছিলেন, আমি তো আপনাকে সাহায্যই করতে চাইছি, একটা অ্যাড্রেস প্রুফ নিয়ে আসুন, আমি অ্যাপ্রুভ করে দেব … উনি কি কিছু ইঙ্গিত করছিলেন?

হয় তো তাই। হয় তো তাই নয়। কে জানে। কাল দেখা যাবে। কাল শেষ দিন আমার, আলিপুরদুয়ারে। যা হবার, হলে, কালই হবে।

বই বন্ধ করে ল্যাপটপে একটা সিনেমা চালিয়ে বসলাম। রাতের দিকে নিচে নেমে কিছু খেয়ে এলাম।

পরদিন, শুক্রবার, সাড়ে দশটার সময়েই বেরিয়ে পড়লাম। হাঁটতে হাঁটতে আলিপুরদুয়ার কোর্ট। আগের দিন রাতে বাবার সাথে কথা হচ্ছিল, বাবা ছবির মত যা বিবরণ দিচ্ছিল, কোর্টের পাশে একটা মাঠ আছে, সেইখানে দুর্গাপুজো হয়, সবই মিলে যাচ্ছিল। মাঠ আজও আছে, তবে সেখানে পুজো হয় কিনা সেটা পুজোর সময়ে এলে বোঝা যাবে।

রন্টু আজ কোর্ট চত্বরেই ছিল। আমি ফোন করার আগেই আমাকে দেখে ও এগিয়ে এল, হাতে একটা ঝকঝকে নতুন রেন্ট এগ্রিমেন্ট, যাতে লেখা আছে, আমি এপ্রিল মাস থেকে আলিপুরদুয়ারের সূর্য্যনগর এলাকায় কোনও একজনের বাড়িতে মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়ার কড়ারে রয়েছি। এবং নতুন একটা এফিডেভিট, তাতে আমার সূর্য্যনগরের ঠিকানা দিয়ে বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য বিনীত আবেদন।

ম্যাজিস্ট্রেট এখনও এসে পৌঁছন নি, ফলে খানিক বসতে হল। একটি ছেলে এসে বসল পাশে, মঙ্গোলয়েড ফেস, সম্ভবত নর্থ ইস্ট অরিজিন, একটি থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা করতে আসায় অফিসঘরের মুহুরি পেশকার ইত্যাদিরা খুবই বিরক্ত, এই পোশাকে কি কেউ ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে দেখা করতে আসে? ছেলেটি বুঝতেই পারছে না তার ভুলটা কোথায়।

এরই মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট ঢুকলেন, পেছন পেছন পেশকার, আমার কাগজপত্র নিয়ে। আর এইবারে আমাকে আর পর্দা সরিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দাঁড়াতেও হল না, ঠিক দু মিনিটের মাথায় পেশকার নিজেই বেরিয়ে এল পর্দা সরিয়ে – মুখে বিজয়ীর হাসি। সই হয়ে গেছে। কোর্টের কাজ শেষ, এইবারে এই এফিডেভিট গিয়ে মিউনিসিপ্যালিটিতে জমা করলেই ওদের কাজ শুরু।

ম্যাজিস্ট্রেটের কালকের ইঙ্গিত একেবারে খাপে খাপে বোঝা গেল এইবারে। ঘাম দিয়ে যেন জ্বর ছাড়ল। রন্টুর মুখে হাসি আর থামছে না, কতই বা বয়েস ছেলেটার, ওর কাছে এটা রীতিমত একটা অ্যাচিভমেন্ট। আমার কাছেও তো তাই। এত দূর থেকে এত কাঠখড় পুড়িয়ে এখানে আসা তা হলে সার্থক হল।

আমার সামনেই রেন্ট এগ্রিমেন্টটাকে কুচিকুচি করে ছিঁড়ে ফেলা হল।

পুরো প্রসেসটার জন্য রন্টু যে টাকাটা চাইল, সেই টাকার পরিমাণ শুনলে এখানে দিল্লির যে কোনও এজেন্ট হার্টফেল করতে পারে, এত কমে পেশকারের খাঁই মিটল, তিনবার করা এফিডেভিট, একটা রেন্ট এগ্রিমেন্ট – সমস্ত স্ট্যাম্প পেপারের খরচা, রন্টুর নিজস্ব সলজ্জ দাবি – সব মিলিয়ে অত্যন্তই কম একটা অ্যামাউন্ট আমাকে দিতে হল, আমি নিজেই তার ওপর আরো দুশো টাকা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম, মিষ্টি খেও, বলে।

ফিরে এলাম মিউনিসিপ্যালিটিতে। সই করা এফিডেভিটটি ধরিয়ে দিতেই ভদ্রলোক চাঙ্গা হয়ে বললেন, আর চিন্তা করবেন না, আপনি ওই কাউন্টারে গিয়ে দুশো দশ টাকা দিয়ে দুটো ফর্ম কিনে ভরে দিন আর এই এই ডকুমেন্টের জেরক্স দিন। বাকি ঠিক টাইমে হয়ে যাবে আপনার বার্থ সার্টিফিকেট।

দিল্লিতে দীর্ঘকাল থেকে ফটোকপিকে জেরক্স বলার অভ্যেস চলে গেছিল। যাই হোক, জেরক্স আমার কাছেই ছিল, ফর্ম কিনে, ভরে, সঞ্জয়বাবুর কাছে জমা দিয়ে যখন উঠলাম, ঘড়িতে তখন সবে একটা বেজেছে। ঠিক দু ঘণ্টার মধ্যে আজ সমস্ত কাজ কমপ্লিট। এখন বার্থ সার্টিফিকেট পেতে কতদিন লাগবে?  সঞ্জয়বাবু বললেন, দেড় থেকে দু মাস লাগে, তবে আপনার ব্যাপারটা মজুমদারবাবু দেখছেন, মনে হয় তাড়াতাড়িই হয়ে যাবে।

বললাম, কোনও অথরাইজেশন লেটার লিখে দিয়ে যাবো কি, মজুমদারবাবুর নামে? সঞ্জয়বাবু বললেন, না না, কোনও দরকার নেই, উনি আমাদের চেনা মানুষ, এখানকার কাউন্সিলর তো। আপনি ওঁকে বলে দিলেই হবে।

সঞ্জয়বাবুকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে, ফোন নম্বর এক্সচেঞ্জ করে, বেরিয়ে এলাম মিউনিসিপ্যালিটি বিল্ডিং থেকে।

বিল্ডিংএর ঠিক ঢোকার মুখে দুটো বেঞ্চ পাতা, সামনে একটা কুকুর লম্বা হয়ে ঘুমোচ্ছে। আমি বেঞ্চে বসে কাগজপত্র, অরিজিনাল এবং ফটোকপি – মানে জেরক্স, সব সাব্যস্ত করছিলাম। বাইরে থেকে একটা লোক এসে শুয়ে থাকা কুকুরটাকে পায়ে করে আলতো ঠেলা মারল। কাঁচা ঘুম ভেঙে কুকুরটা তড়াক করে উঠে বসতেই লোকটা সেই হযবরল-র বেড়ালটার মতন কেমন ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে বিচ্ছিরি হেসে বলল, শালা, আমার খাবি, আমার পরবি, আর আমারই সামনে জয় শ্রীরাম বলবি? হ্যাহ্যাহ্যাহ্যাহ্যা।

ইটি ঠিক আগের দিনের মাননীয়া মমতা ব্যানার্জির ডায়ালগ। ভাটপাড়া না কাঁকিনাড়া কোথায় যেন জয় শ্রীরাম শুনে তাড়া করে গেছিলেন কিছু বিচিপির দিকে। লোকটি বেমক্কা নিষ্পাপ কুকুরটার ওপর সেই ডায়ালগ ছুঁড়ে দিয়ে মিউনিসিপ্যালিটির ভেতর সেঁধিয়ে গেল।

আমি হোটেল ফেরার পথ ধরলাম।

কাল দুপুরে নিউ আলিপুরদুয়ার থেকে কামরূপ এক্সপ্রেসের টিকিট আছে। কিন্তু সেটাও ওয়েটিং লিস্ট পাঁচ। কনফার্ম হবে কি? রিস্ক নেব? সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম, শিলিগুড়ি থেকে একটা এসি বাসের টিকিটই কেটে নিই। কাল সকালেই বাস ধরে শিলিগুড়ি চলে যাই – যদি টিকিট কনফার্ম হয়, এনজেপি থেকে ট্রেন ধরে নেব, বাসের টিকিট শেষ মুহূর্তেও ক্যানসেল করা যাবে। না হলে বাসেই যাবো।

দুপুরে আজও আলিপুরদুয়ারের আরসালানের বিরিয়ানি, আর রাতে মাটন আর রুটি। জয় ছেঁড়াম।


One thought on “প্রমাণপত্রের জন্ম এবং সর্ষেদানারা – পর্ব ৪

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.